যে শব্দ স্রোতেও নিরুত্তাপ । জয়দীপ চক্রবর্তী

2

যে শব্দ স্রোতেও নিরুত্তাপ-১০৬

সে ও তার সমূহ অবদানে সামান্যও প্রত্যাশা রোহিত-
আক্ষেপ কিংবা প্রতীক্ষা বিহীন অথচ জীবন নিখুঁত ছেঁকে,
নেওয়া রোদ্দুর। বলতো কল্পরূপ তুমিও কতদূর ভাসমান ছুঁয়ে কিত কিত?
যে জীবন খেয়ালের, উদাসীনে খুঁজে নিও তাঁরে সোনাইয়ের গমক্ষেতে…

যদিও এখানে ধারণা নাক্ষত্রিক ছোটে জোছনার আগে, আগে!
কে জানে ইচ্ছামতির কোন ঘাটে ছন্নছাড়া পানসি কতদূর বাঁধা?
জানি খোঁজই জীবন, এই বিশ্বাসী বোধই জাগায় নির্বেদ গতিকে!
অনন্ত অসম্ভবের মধ্যমা অমোঘ, এখানেই শাশ্বত অর্ঘ্যের থালা…

নদীপথ সব হারিয়েও বিস্মৃতি অবিরত অপলক মৈথিলি জাগরণ,
সব লোকালয়, শহর কিংবা জঙ্গল ইতিহাসটা অনিবার্য নিজস্ব।
এই ঝুরঝুর বাতাস ছুঁলেই ঝাঁক ঝাঁক মনখারাপের স্মরণ…
প্রিয়তম ঝাঁকড়া রোদ্দুর জানে এ জীবন আজও যেকোন শর্তে, অনর্থ?

এ জীবনী একাকার বিন্দু বিন্দু সিন্ধুর তীরে এক সাজানো বাগান!
আজও ঘনিভূত বীজ ও মাটির গণিতের শপথে সব অপমান…

যে শব্দ স্রোতেও নিরুত্তাপ-১১০

এ জীবন শুধুই মনখারাপ, অশ্রুজল নয় ক্ষণিক অন্নজলেই সহন।
এ জীবন শুধুই ধুলোমেঘ, শস্যক্ষেত নয়, রৈখিক লাল টুকটুকে পূর্বকোণ…
এ জীবন শব্দের মিছিলের শব্দহীন মন কাগজের নৌকা ভাসায় দহন।
এ জীবন ফুঁসে উঠা খালবিল সুতোহীন লাটাই সঙ্গে ছুটির নিমন্ত্রণ…

এ জীবন রাতভর জোছনা ভেজা আলোয় তন্নতন্ন সেই পাখিটির পালক।
এ জীবন শব্দের পিছুটান রোদেলা মেঘের দেশ, স্তবের নৈসর্গ অলোক…
এ জীবন অকৃপণ ঘন অন্ধকার জোনাক সম্বল, তোমারই ছায়া।
এ জীবন সহজিয়া কখনও কঠিন ফাঁক বিস্তর, তবু ফাঁকি’হীন শূন্য খাঁচা…

এ জীবন নদী হারিয়েও আশ্চর্য মোহনার খোঁজ, পাহাড়ের গান।
এ জীবন বাতাবি লেবু’র ঘ্রাণ, আবাহনে রোজার মাস, শুভ্রতার স্নান…
এ জীবন শব্দের বীজতলার উত্তরপুরুষের নবান্ন, স্বপ্নময় স্বাদের বাগান।
এ জীবন ঘাস ফড়িংয়ের, আলেয়া ছলছল তিন’অক্ষরের অভিযান…

এ জীবন ধুসর নীল-সাদা বেলার ভুলে যাওয়া মধুকাল, নক্ষত্র খচিত মান, অভিমান।
এ জীবন আশ্চর্য স্মৃতির ক্রীতদাস, প্রতীক্ষায় অক্লান্ত আগুনের দাউদাউ পরিণাম…

যে শব্দ স্রোতেও নিরুত্তাপ-১১২

জিতে যাওয়া মানে হাজার বছরের পাপ সামান্য গরিষ্ঠ শব্দেই সঠিক।
জিতে যাওয়া মানে এখন যা বলবো শোন, অতীত যা বলেছিলাম সব শব্দ অর্বাচীন।
জিতে যাওয়া মানে পাহাড় থেকে সাগর বয়ে জঙ্গল ঘরে ঘরে বেবাক সুদিন।
জিতে যাওয়া মানে চাটুকার, উমেদার, স্তাবকের চক্রাকার ভিড়, তফাতের প্রতি গা ঘিনঘিন।

জিতে যাওয়া মানে যে সহপাঠী খ্যাতনামা ফেলু সেও রূপকার শিক্ষাবিদ তকমা বাহার।
জিতে যাওয়া মানে হাত লম্বা বিস্তর,স্বাদের থেকেও পারকতা বেশি নষ্ট হওয়া আহার।
জিতে যাওয়া মানে তুমি বাছা হও পক্ষ কিংবা বিপক্ষ, বাঁচতে গেলে পক্ষেই মুখ খোলো।
জিতে যাওয়া মানে মেধার পাইকারি বাজার বোকাকথা আসলে রাজ অনুগ্রহেই এত জমকালো।

জিতে যাওয়া মানে রাজা ও রাণীর সব শব্দই অমৃত সমান জানে জল, স্থল ও আকাশের সব প্রজাগণ।
জিতে যাওয়া মানে লুট, হরিরলুট আর যা যা দোষ বলেছিল ঘোষদা সবই আজ বৈধ গরমাগরম প্রমাণ।
জিতে যাওয়া মানে এ জীবন সে হোক না খাঁচা কিংবা লোকালয় সবেতেই রঙবাহারি থোড়াই পরোয়া।
জিতে যাওয়া মানে মানুষ অপেক্ষা কুকুরের অধিকার, টোকাটুকি শেষে মুখে তুলসী পাতার ছোঁয়া।

জিতে যাওয়া মানে একগলা জলে নেমেও সমস্বরে শাসক তোমার কাপড় ভেজা কেউ কিচ্ছুটি দেখেনি।
জিতে যাওয়া মানে কলম,কালি,গুলি,বোমা ঠিক হরিণ,বাঘের মতোই শাসকের বিচিত্র মেধায় এক ঘাটে জল খাওয়ানোর খেয়োখেয়ি…

যে শব্দ স্রোতেও নিরুত্তাপ-১২০

আশ্চর্য ক্ষমাহীন সময়ের পিছুপিছু অক্লান্ত এক বোধ,
অবিরত দাউদাউ মনপুর আপ্রাণ শ্রাবণবেলার গান-
জানে জীবিত জীবনের শব্দহীন পরিণাম।নির্জনতা দৃশ্যতই সহজ,
এক দুই তিন শিকারীর অব্যর্থ ধারণায় শালিকের ব্যর্থতাই ধানের গান…।

আয়ুর সীমান্তে তারুণ্যের মোহে বেড়ে যাওয়া মৃত্যুর ঋণ!
জীবন আসলেই কল্পিত নয়, পাখির মতোই দীর্ঘতর ভ্রমণ।
সোনার হরিণ শব্দের মোহিতে অমূল্য হারিয়ে প্রতিদিন,
শান্ত নদীর ঢেউ জানে আলো নয় সবই আলেয়া পতনের আয়োজন…

বিষাদের দীর্ঘ ঘন কালো তরঙ্গ ধরে ধরে লাল টুকটুকে ভোরে,
হাজার আঘাতের পরেও ছিন্নপত্র লিখে রাখা আলোরই কথা।
এইখানে কোন আকাশ নেই তবে মুক্তি আছে ইতিহাসের উপকূলে…
অন্তর্গত চুঁইয়ে পড়া মনখারাপের নীরবেই বহুরূপী’র স্তাবকতা।

সহজেই স্থির, স্বস্তিক। সমূহ লাবণ্য, সংযম, রূপে ভেজা শব্দের শরীর।
নাক্ষত্রিক আলো-আঁধারি ছায়া কেটে, কেটেই পৃথিবী সমূহ গতির স্থিরতা ধীর…

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

শেয়ার