ঔপনিবেশিক বাদানুবাদের ক্ষেত্রে সমকালিন তত্ত্বাবলির সংকট // বনিতা প্যারি // অনুবাদ : লায়লা ফেরদৌস ইতু

0

স্পিভাক ও ভাবা কর্তৃক প্রদত্ত তত্ত্বগুলোর পর্যালোচনা করলে এগুলো অনেক ব্যাখ্যাহীন অনুশিলন ও সীমাবদ্ধতা নির্দেশ করে এবং সাম্রাজ্যবাদবিরোধি সমালোচনার ক্রমবিকাশের ক্ষেত্রে বিভিন্ন আচরণবিধি নির্দেশ করে। তবে তর্কের খাতিরে বলা যায় যে, স্পিভাকের জ্ঞানগর্ভ অনুসন্ধানের ফাঁকফোকরগুলো উদ্ভূত হয়েছে অ-ইউরোপিয় জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া দুর্বোধ্য অথচ কর্তৃত্বপরায়ণ কিছু প্রাসঙ্গিক মতবাদের ফলস্বরূপ।

বিশাল ব্যাপ্তিবিশিষ্ট আলোচনায় স্পিভাক সুনির্দিষ্টভাবে যে ত্রুটি খুঁজে পেয়েছেন তা অনেকটা এরকম : ‘এটি এমন এক পাঠ যা পাঠ্যাংশের অনুপস্থিতি যা একজনের অতীত সম্পর্কে উত্তরদানে সক্ষম এবং সেই অতীতব্যাপি বিস্তৃত সাম্রাজ্যবাদি কর্মসূচির সন্ত্রাস।’

পাশাপাশি তিনি এমন এক কর্মপন্থার উন্নয়নের উপায় অনুসন্ধান করেছেন যার দ্বারা ঐতিহাসিকভাবে নির্বাক অ-ইউরোপিয় বিষয়গুলোর স্বরূপ জানা যায় এবং এ-কারণে স্পিভাক তাঁর নিজের লেখায় নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন ‘একজন অ-অভিজাত নারী’ রূপে। কখনো ‘মেয়েদের ধ্বনি সচেতনতার মুখোমুখি দাঁড়াতে নেই’ ‘লিঙ্গবৈষম্য নির্ভর বিষয় নিয়ে বলার সুযোগ কম’ কিংবা ‘হীনাত্মক লিঙ্গধারিরা কিছু বলতে পারবে না’ এমন মতবাদ মূলত ‘সতি’-সম্পর্কিত মতবাদেরই পুনরাবৃত্তি, যেখানে হিন্দুপিতৃতান্ত্রিক নিয়মগুলো ঔপনিবেশিক শোষণের সাথে সমান্তরাল হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এমন এক ভারতিয় সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটিয়েছে যেখানে মেয়েদের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ।

স্পিভাক মেয়েদের অবস্থার উন্নয়নের জন্য কাজ করেছেন অর্থাৎ যারা প্রথমত, নির্যাতিত স্থানিয় পিতৃতান্ত্রিকতা দ্বারা এবং দ্বিতীয়ত, বিদেশি পুরুষতান্ত্রিক ঔপনিবেশিক আদর্শ দ্বারা।

এগুলোর সাথে ঢুকে পড়েছে ‘সতিদাহ’ প্রথার মতো হীন সামাজিক আচারগুলো, যেখানে সতি মানেই অঘোষিত রাজকুমারি যে মূলত ‘যৌনভূমিকা নির্ভর একটি প্রাণির স্বাধীন ইচ্ছার দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থান’। সতি সম্পর্কিত বিতর্কে অংশ নিতে গিয়ে স্পিভাক তুলে ধরেছেন বিশাল ও গতানুগতিক বক্তব্যগুলো, যেখানে মেয়েরা সামঞ্জস্যপূর্ণ ও সহজবোধ্য প্রজাতি। যারা একই সাথে তাদের পরিকল্পিত দুর্বোধ্যতার সাফল্য নির্দেশকারি।

চন্দ্রতালপাড়ি মোহান্তি তাঁর বিতর্কে ‘তৃতীয় বিশ্বের নারীগণ’ নামক সমালোচনায় বলেন, ‘উপস্থাপনের কলাকৌশল বস্তুবাদি বাস্তবতা জ্ঞান দ্বারা দ্বিধাগ্রস্ত হওয়া উচিত নয়।’ যেহেতু প্রাচ্যের মেয়েরা বড় হয় বিভিন্ন সামাজিক সম্পর্কের মধ্যে এবং এক ভিন্ন শ্রেণিতে অবস্থানকারি হিসেবে। শুধু তাই নয়, তারা আলাদা সাংস্কৃতিক প্রণালির মধ্যে বসবাসকারি। এ কারণে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের কণ্ঠস্বরকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা খুবই সম্ভব এবং তাদের চিহ্নিত করা হয় প্রশান্তি দানকারিনি, পবিত্র সংগীতের শিল্পি, চিত্রশিল্পিরূপে। এভাবে স্পিভাকের নিরব অ-অভিজাত শ্রেণি আদর্শায়িত হয়ে ওঠে।

অবশ্য তাঁর মতাদর্শ মেয়েদের নিরবতাকে আদর্শায়িত করার পাশাপাশি সাম্রাজ্যবাদের জ্ঞানতত্ত্বিয় সন্ত্রাস, যা নারী-পুরুষ উভয় শ্রেণিকেই প্রাচ্যবাসি হবার কারণে ঐতিহাসিকভাবে নির্বাক করে রাখে, সেদিকেও দৃষ্টিপাত করেছে।

ঔপনিবেশিকতার গল্প, যা তিনি পুনঃনির্মাণ করেছেন তা আসলে এক আন্তঃপ্রবহমান একটি পদ্ধতি যা পশ্চিমা প্রতিনিধিগণ কর্তৃক ঔপনিবেশিকতাবাদের কর্তৃত্বকারি সত্তাকে সুদৃঢ় করতে এবং প্রাচ্যবাসিদেরকে নিজস্ব কণ্ঠস্বরহীন অবয়বরূপে গড়ে তুলতে ব্যবহৃত হয়েছে।

প্রতিরোধের অবজ্ঞাজনক জাতিয়তাবাদি বাদানুবাদকে সমকক্ষ ধরা হয় প্রাক-ঔপনিবেশিক নারী বুদ্ধিজীবীদের ওপর বণ্টিত ভূমিকার অতিশয়োক্তির সাথে, যার জন্য নিম্নশ্রেণির কণ্ঠস্বরকে ইতিহাসে শ্রুতিগ্রাহ্য করে তোলা হয় এবং এটি করা হয়েছিল ‘বিনির্মাণের সমৃদ্ধি’ ও ‘পাঠ্যের সেবা দ্বারা’, যাতে করে এমন এক কার্যপদ্ধতির উন্নতি ঘটে, যেখানে উপনিবেশবাদিতার ওপর পঠন-পাঠন গুরুত্ব পায়।

স্পিভাককৃত ‘ঔপনিবেশিকতার পরিবর্তিত বর্ণনা’ রচনারীতির বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ধারার প্রকাশ ঘটিয়েছে, ঐতিহাসিক রক্ষণাগারের নির্মাণ ও অর্জন এবং পাশাপাশি প্রাচ্য-সচেতনতাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আর এসবের ভিত্তি ছিল শুধু এ প্রত্যাশা যে তাঁর কর্মপরিকল্পনা মূল্যায়িত হোক। সাথে সাথে এ-ও দাবি করা হয় যে তাঁর হিসেব ছিল কিছু নির্দিষ্ট প্রথাগত চিন্তাধারাকে নিশ্চিহ্নকরণের কাজে অবদান রাখা। এজন্য বিভিন্ন উপাত্তকে ব্যবহার ও শোষণ করার মানসিকতার কারণে ভারতিয়গণ ‘পরিকল্পিত সত্তাসমৃদ্ধ’ পাশ্চাত্যের অপরপক্ষ ও যুগ্ম প্রতিপক্ষরূপে গড়ে উঠেছিল। এরপরও প্রাচ্য, বিশেষত ভারতের বাস্তবতা নির্দেশকারি মানচিত্রের অংকনশিল্পি ছিলেন কিন্তু তারাই, যারা মানসিক সত্তা হিসেবে বিজাতিয় এবং তাদের পথভ্রষ্ট মানচিত্র প্রাচ্যে ছড়িয়েছিল ভিন্নতর এক অবস্থানের ধারণা। আর এ ধারণার সুফল কিন্তু ভোগ করেছে সেই বিজাতিয় শোষকশ্রেণিই।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বর্ণভেদ প্রথায় আছে মূলত আবছা কল্পনাসমৃদ্ধ আভিজাত্যবোধ। অথচ এটি সমাজচিত্র বা ‘ন্যায্য’ আর্য-শাসকগণের সময়কালের পরিসংখ্যানকে নিশ্চিতভাবেই প্রভাবিত করেছে, প্রভাব ফেলেছে অনার্য-মানুষদের বিত্তহীন অবস্থা সংক্রান্ত বাদানুবাদেও।

স্তম্ভলিপির মতো দৃঢ় ঔপনিবেশিক ক্ষমতা এবং শোষিত জনগোষ্ঠির মধ্যকার সম্পর্কের টানাহেঁচড়ার মাঝে যে বিনির্মাণ প্রক্রিয়া কার্যকর থাকে তার মূল্যায়ন নগ্ন অবদমনের চাইতে অনেক সূক্ষ্মভাবে অগ্রসরমান, অনেক বেশি বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ণ। যেহেতু ভারতিয়গণ সবসময় আত্মপ্রকাশ করেছে নিজ দেশিয় আত্মজ্ঞানসহ, যে জ্ঞান তার মগজে ঠেসে ভরেছে তার বিজাতিয় প্রভুগণ। যে প্রভু আসলে পাশ্চাত্যের প্রতিনিধি, বিশ্বময় বিস্তৃত করছে নিজকে, সেই বিশ্ব কিন্তু প্রতিষ্ঠিত বিশ্ব থেকে আলাদা ও সম্পূর্ণ নতুন। এ বিশ্বব্যবস্থায় ভিনদেশিরা প্রভুরূপে মর্যাদা পায় এবং এমন এক অদৃশ্য শক্তি প্রয়োগ প্রক্রিয়া সেখানে ক্রিয়াশিল থাকে যার প্রভাবে আদিবাসিগণ নিজেদেরকে ‘ভিন্ন হীন সত্তা’ রূপে ভাবতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। যেখানে পেশিশক্তির জয়, প্রাতিষ্ঠানিক বাধ্যবাধকতা, আদর্শগত অবমূল্যায়ন হয়ে ওঠে জ্ঞানতত্ত্বিয় সন্ত্রাস এবং প্রতারণাপূর্ণ বুদ্ধিগত একতা স্বদেশিদের কাছে দাবি করে যে সে তার নিজ অবস্থানের বর্ণনা লিখবে নিজের ভাষায় অথচ ঔপনিবেশিক কাঠামো মেনে, সেখানে সেই লেখা প্রাচ্যবাসিদের সুদৃঢ় করার এবং একই সাথে অস্পষ্ট করার সম্ভাবনা হয়ে ওঠে। অথচ সেখানে রচিত হয় এমন এক নিম্নশ্রেণির গল্প, যেখানে সেই নিচুতা সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ধারণা থাকবে না। এই জটিল তাত্ত্বিক বাদানুবাদ চেষ্টা করেছিল এমন এক রাজনৈতিক মতবাদের প্রভাবকে অস্বীকার করতে, যেখানে নিজস্ব ভূমি থেকে ঔপনিবেশিক আগ্রাসন সম্পর্কে প্রাকৃতজনদের জবাব খোঁজার প্রক্রিয়াকে অবজ্ঞা করা হয়।

‘ঔপনিবেশিক কোনো দৃষ্টিগ্রাহ্য সমালোচনাই ‘অন্য’কে ‘নিজ’ রূপে রূপান্তরিত করতে পারে না। কারণ ঔপনিবেশিক কার্যপ্রবাহ ঐতিহাসিকভাবেই ভিন্নমুখি যা ‘ভিন্ন’ সত্তাকে একান্ত ‘বাধ্য সত্তায়’ রূপান্তরিত করে এবং ঔপনিবেশিক সত্তাকেই সুদৃঢ়রূপে প্রতিষ্ঠিত করে। একটি পূর্ণাঙ্গ সাহিত্যিক অন্তর্লেখন সহজভাবে ঔপনিবেশিক খুঁতগুলোকে ভরিয়ে দিতে পারে না। কিংবা ধারাবাহিকতার সংকটকে কাটিয়ে উঠতে পারে না। তখন একটি ভিনদেশি আইনি ব্যবস্থায় আবৃত থেকে বিজাতিয় আদর্শগুলো সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি একপ্রস্থ মনুষ্য প্রযুক্তি ব্যস্ত থাকে স্বদেশি জনগণকে এক ‘সম্মিলিত ভিন্ন জাতি’ রূপে প্রতিষ্ঠিত করতে।’ (স্পিভাক ১৯৮৫)

যখন স্পিভাকের মতবাদ বিরোধিতার সম্মুখিন হয় প্রাচ্যবাদ দ্বারা : ‘কি করে একজন ভিন্ন একটি সংস্কৃতিকে উদার, অদম্য ও অদক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিসহ পাঠ্যরূপে গ্রহণ করবে? অথচ স্পিভাক যুক্তি দেখিয়েছেন যে, ইংরেজ সাংস্কৃতিক পরিচয় গড়ে ওঠে অন্ত্যজ শ্রেণিকে ‘ভিন্ন সত্তার’ উপাদানরূপে গড়ে ওঠার প্রক্রিয়ার মতোই। এবং এর সাথে মেয়েলি বিষয়গুলো গ্রন্থিবদ্ধ হওয়াটা নারীবাদি ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য থেকে উদ্ভূত হওয়া ঘটনা, যা ঘটেছিল মূলত ঔপনিবেশিকতাবাদের সমকালেই এবং যেখানে আবশ্যকিয়ভাবেই অ-ইউরোপিয় নারীরা বাতিল করে ছিল, যারা তখন গণ্য হত মানুষ ও পশুর মধ্যবর্তী কিছু একটা রূপে এবং যারা ছিল ঔপনিবেশিকতাবাদের সমাজকল্যাণ বা ‘আত্মা তৈরি প্রক্রিয়া’র একটি উপাদান মাত্র।

স্পিভাক Wide Sargasso Sea উপন্যাসের সমালোচনায় বার্থার গল্প বলেছেন যে এক দাস ব্যবসায়ির কন্যা, পরাধিনতার উত্তরসূরি, ভারতিয় নারীদের আদর্শ, যে কি-না পাশ্চাত্য নারীস্বাতন্ত্র্যবাদের বেদিতে নিজেকে উৎসর্গ করেছিল। যদিও স্পিভাক স্বীকার করেছেন যে Wide Sargasso Sea এমন এক উপন্যাস যাতে ইংরেজ অনুশাসনগুলো পাশ্চাত্য উপন্যাসরীতির অনুসরণে রচিত হয়েছে, যেজন্য এতে সাদা চামড়াধারিরা কালদের চেয়ে বেশি মূল্যায়িত। সুতরাং বার্থা এখানে প্রতিষ্ঠিত ইংরেজ উপনিবেশবাদি ও কাল জ্যামাইকানদের মধ্যবর্তীরূপে। তাই এ সমালোচনা সাদা চামড়াধারিদের সংস্কৃতিকে উপস্থিত করে না এবং এটি ঔপনিবেশিকতাবাদ থেকে যথেষ্ট ভিন্ন।

সাদা চামড়াওয়ালাদের অবস্থানগত মনোভাব বার বার বার্থার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, সেই সাথে প্রকাশ পেয়েছে অভিবাসি ও কাল দাসদের মধ্যকার আন্তরিকতা ও ঘৃণার সমান্তরাল বহিঃপ্রকাশ। নজর দিই উপন্যাসটির বার্থা ও টিয়ার সম্পর্ক বিষয়ক অংশটিতে : ‘আমরা একই খাবার খেয়েছি, এক সাথে ঘুমিয়েছি, একই নদীতে গোসল করেছি। যখন আমি দৌড়াতাম, আমি ভাবতাম : ‘আমি যদি টিয়ার মতো জীবনযাপন করতে পারতাম… যখন আমি তার কাছাকাছি হতাম, তার হাতে পাথরকুচি দেখতাম, কিন্তু কখনো তাকে ওগুলো ছুঁড়তে দেখতাম না। আমি তার দিকে গভীর চোখে তাকালে চেহারা কান্নায় বিকৃত হয়ে যেত। আমি তার দিকে তাকাতাম মুখে রক্ত নিয়ে, সে তাকাতো চোখে অশ্রু নিয়ে। কারণ আমি তাকে দেখতাম নিজের প্রতিবিম্ব দেখার মতো করে…’

এমন মনোভাব অর্থাৎ প্রাচ্যকে পদানত দেখার প্রচেষ্টা দেখা যায় শার্লট ব্রন্টির ‘জেন আয়ার’ উপন্যাসেও। এখানে পাঠকদের পরোক্ষভাবে মি. রচেস্টারের মাধ্যমে উৎসাহিত করা হচ্ছে বার্থাকে মানুষ ও পশুর মধ্যবর্তীরূপে গণ্য করতে। যেমন : ‘এক রাতে আমি তার বিকট চিৎকারে জেগে উঠলাম… সেটা ছিল ভয়ংকর পশ্চিম ভারতের রাতের মতোই। … আর চিৎকারগুলো ভেসে আসছিল এক অন্তহীন গহ্বর হতে…’।

স্পিভাক আরো উল্লেখ করেছেন রাইর উপন্যাসের, যেখানে এন্টিয়োনেট-এর মাধ্যমে বিদ্রোহি কালদের প্রতি সাদা অভিবাসিদের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে পাঠকদের পরিচয় করানো হচ্ছে : ‘সেই একই চেহারার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে, চোখ ধূসর হচ্ছে, মুখ অর্ধখোলা’ যেখান থেকে ‘এক বিকট স্বর বের হচ্ছে যা অনেকটা পশুর আওয়াজের সাথে মিলে যায় কিন্তু তারও চেয়ে অনেক বেশি ভয়াবহ’।

এন্টিয়োনেট ‘উপনিবেশের রমণি’ এবং স্পিভাকের সেই গণনার ফল, যেখানে তিনি ঔপনিবেশিক ভাষাতাত্ত্বিক আগ্রাসন কর্তৃক প্রাচ্য সত্তার অন্তর্লেখ কিভাবে নিশ্চিহ্ন হয় তা দেখিয়েছেন। এন্টিয়োনেট ভূমিকা পালন করেছে ‘এমন এক নারীর যে উপনিবেশের বাসিন্দা’ এবং এটি স্পিভাকের দৃষ্টিভঙ্গির ফলাফল।

এবার নজর দিই Wide Sargasso Sea-র কাল নারীদের দিকে, যারা কেবলমাত্র স্পর্শকাতর দেহ এবং একই দেহসত্ত্বেও সাদা রমণিরা ঔপনিবেশিকতার ছোঁয়ায় অলৌকিক মাত্রাপ্রাপ্ত। স্পিভাকের পাঠকৌশল দ্বারা ক্রিস্টোফাইনের ভারতিয়, রমণিয় ও স্বতন্ত্র সত্তারূপে তার নিজ ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের প্রতি অবদমনমূলক বাদানুবাদের দাবি স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। সুতরাং সে বলেছিল : ‘এটা স্বাধীন দেশ এবং আমি একজন স্বাধীন মহিলা’ এবং কাল মানুষসুলভ স্বাতন্ত্র্যবোধে যে বলেছিল : ‘আমি লেখাপড়া জানি না, কিন্তু অন্যান্য বিষয় জানি।’

স্পিভাক ভারতিয় কণ্ঠস্বর সম্পর্কে বধির ছিলেন, কিন্তু পশ্চিমা নারীবাদি চিৎকার সম্পর্কে ছিলেন সচেতন, পুরুষবাদি মতবাদগুলোকে তিনি ভেঙেছিলেন। ঔপনিবেশিক গঠনতন্ত্র তিনি অবজ্ঞা করেছিলেন এবং বিশ্বময় বিস্তৃত ‘ভগ্নিত্ববোধ’কে নতুন চেহারা দিয়েছিলেন। তার মতে : ‘পাশ্চাত্য ভাবাদর্শে প্রতিটি মানুষ, সে নারী-পুরুষ যাই হোক না কেন, আন্তর্জাতিক যৌনতাধারি স্বতন্ত্র ব্যক্তিসত্তা।’ এছাড়াও তাঁর ‘ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক, ভাষাগত স্বাতন্ত্র্যবোধ’ এর চাহিদা ‘বিস্তৃত অভিনয়ক্ষেত্ররূপি তৃতীয়বিশ্ব’কে অনুমোদন করেছিল। অথচ স্পিভাক তাঁর নিজ লেখাতেই উপনিবেশের বাসিন্দাদের ‘ইতিহাসে ফিরে আসার’ ক্ষেত্রকে নিয়ন্ত্রিত করে দিয়েছিলেন।

অন্যদিকে হোমি ভাবা তাঁর বিবৃতিতে অনুসন্ধান চালিয়েছেন কি করে ভারতিয়রা নিজেদের ভাষ্য দ্বারা, নিজেদের অবস্থানকে বিশৃঙ্খল ঔপনিবেশিক বাদানুবাদের মধ্যেই প্রতিষ্ঠিত করতে পারে এবং এক্ষেত্রে কি করে একটি পৃথক ‘রাজনীতি’ ব্যবহৃত হতে পারে। তাঁর লেখার প্রচেষ্টা ছিল প্রাথমিকভাবে ঔপনিবেশিক বাদানুবাদের শৃঙ্খল ভেঙে ফেলা। এক্ষেত্রে ভাবা অনেকটাই এডওয়ার্ড সাইদ দ্বারা প্রভাবিত, যাঁর বিশ্বাস ছিল : ‘ক্ষমতা ও বাদানুবাদ একান্তভাবেই উপনিবেশবাদিদের কুক্ষিগত’। এছাড়াও ভাবা দেখিয়েছেন কি করে উপনিবেশবিরোধি লেখায় উপনিবেশের অধিবাসিদের নিম্নবর্ণরূপে মূল্যায়ন করা হয় এবং ঔপনিবেশিক ক্ষমতা ও বিজয়ের দৃষ্টান্ত রাখা হয়।

যাই হোক, তিনি কিন্তু ক্ষমতা ও জ্ঞানের কর্মক্ষেত্রের মাঝে সম্পর্ক রক্ষা করেছিলেন। তিনি যুক্তি দেখিয়ে বলেছেন : ‘এক অপ্রতিষ্ঠিত অপ্রাসঙ্গিক নিয়মের নিগঢ় জন্ম দিচ্ছে এমন প্রাচ্যসত্তার, যে কর্তৃত্বপরায়ণ আদর্শগুলোকে ভুল বোঝে এবং সমধর্মিয় গঠনতন্ত্রের বিরোধিতা করে।’

সাইদের মতে, ‘স্থির লক্ষ্য হবার কারণেই ঔপনিবেশিক ক্ষমতা পশ্চিমকে পূর্ব থেকে উন্নত করেছে।’ কিন্তু ভাবা মনে করেন এ কৌশল শুধু ঐতিহাসিক ও ভাবপ্রবণ ধারণাকে অস্পষ্ট করতে অস্বীকারই করে না, বরং ঔপনিবেশিক ঘোষণাগুলোকে অপ্রাসঙ্গিক কর্তৃত্ববোধের নিষ্ক্রিয় আধাররূপেও গণ্য করে। এভাবে ঔপনিবেশিকতার পরস্পরবিরোধি বৈশিষ্ট্যগুলো গ্রন্থিবদ্ধ করতে গিয়ে ভাবা ও তাঁর সমসাময়িক সমালোচকগণ সব অপ্রাসঙ্গিক ক্ষমতায়নের সীমারেখা খুঁজেছেন এবং ‘এ-সম্পর্কিত বাদানুবাদকে কথোপকথনশূন্য, মতবিনিময় শূন্য, কিছু উক্তির সমষ্টিরূপে গণ্য হবার চাহিদাকে পুনর্বিবেচনা করেছেন।’

ঔপনিবেশিক সীমা থেকে ঔপনিবেশিক পাঠ্যরূপে কোনো বিষয়ের রূপান্তরকে তিনি পশ্চিমাদের ‘ভিন্ন’ ধারণা ভেবেছেন। যেখানে প্রাচ্যবাসি মানেই ‘ভিন্ন সত্তা’, যারা পাশ্চাত্যবাসিদের মতো উন্নত প্রজাতির নয়। এ পুনঃব্যাখ্যাদান প্রক্রিয়া প্রাক-ঔপনিবেশিক বুদ্ধিজীবীদের মতাদর্শ নির্মাণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করেছিল এবং কিভাবে এই বাদানুবাদটি উপনিবেশের অধিনস্থ প্রাচ্য কণ্ঠস্বর দ্বারা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে তা-ও দৃষ্টিগ্রাহ্য করে তুলেছিল। ভাবা তাঁর লেখায় এভাবে নিম্নশ্রেণিকে কথা বলতে দিয়েছেন এবং ঔপনিবেশিক পঠন-জ্ঞান দ্বারা প্রাচ্য-কণ্ঠস্বরকে উদ্ধার করেছেন।

স্পিভাক এমন পাঠ্যধারার অনুপস্থিতি দেখেছেন, যেখানে সাম্রাজ্যবাদি কর্মধারার পরিকল্পিত সন্ত্রাসের উত্তর দেয়া যায় এবং যৌনভূমিকানির্ভর বিষয়বস্তু অর্থাৎ নারীর মতামতের জন্য সহমর্মি পাওয়া যায়। অথচ ভাবা উৎপাদন করেছেন ঔপনিবেশিক বিবৃতির বিরুদ্ধে ঔপনিবেশিক আইন লঙ্ঘনের দৃষ্টান্তের ধারাবাহিকতা, যা অনেক ক্ষেত্রেই অপ্রাসঙ্গিক। এখানে প্রাচ্যের নিজস্ব বাদানুবাদ ছিল ‘প্রায় সভ্য’ অজুহাতগুলোর সমান প্রসারমান, যার দ্বারা ঔপনিবেশিক চাহিদা পূরণে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছিল। এ ভাঁড়ামি আরো বৃদ্ধি পেয়েছিল ঔপনিবেশিক বাদানুবাদের ‘দো-আঁশলা’ স্বতঃসিদ্ধগুলোর মাধ্যমে।

ভাবা বলেছেন, ‘প্রাচ্যবাসিদের পুনর্গ্রন্থিবদ্ধকরণ, উপনিবেশবাদিদের পুনর্গঠিত, পরিচিত ও ভিন্নতার প্রত্যাশাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে এক পরিহাসরূপে।’ এটি এমন এক প্রক্রিয়া যা মূলত ‘আত্মপ্রেমি পরিচয় নির্দিষ্টকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বাধীন ঔপনিবেশিক সম্পর্কের অনুশিলন।’ কারণ সেই সংকর মুহূর্তে ‘প্রাচ্য যা লিপিবদ্ধ করেছে তা ঔপনিবেশিক প্রকৃত সত্তা নয়। বরং গুণগতভাবেই আলাদা কিছু যেখানে ভুল পঠনের কারণে ঔপনিবেশিক পাঠ্যাংশের অনির্দিষ্টতা প্রকাশিত হয় এবং এর কর্তৃত্বমূলক উপস্থিতি অবহেলিত হয়।’ উদাহরণ দেয়া যাক ভাবা কর্তৃক লেখা পাঠ্যাংশ থেকে, ‘প্রাচ্যবাসিদের অদ্ভুত প্রশ্নের মাধ্যমে ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গিসহ ইংরেজিকে ধর্মিয়, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত প্রচারমাধ্যম রূপে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। যেখানে বিবৃতি আত্মরক্ষামূলক কর্মসূচি, সেখানে ভাঁড়ামি দ্বারা নাগরিক অবাধ্যতাগুলোকে নাগরিকশৃঙ্খলারূপে গণ্য করা হয়, দৃষ্টিগ্রাহ্য প্রতিরোধরূপে গণ্য করা হয়।

পণ্ডিতদের উক্তি সংকরস্রোত সৃষ্টি করছে এবং প্রাচ্যবাসিদের যুদ্ধংদেহি মনোবৃত্তির জন্য আমরা শুধু বইয়ের লাইনগুলোই পড়ছি না, বরং এগুলোর ভেতর ধারণ করা বাস্তবতা ও তার বিবর্তনকে খুঁজে ফিরতে বাধ্য হচ্ছি।’ এভাবে ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে পাঠ্যধারার বিদ্রোহ দ্বারা প্রাচ্যবাসি কর্তৃক ইংরেজি বইকে প্রশ্নবিদ্ধকরণের কাজ শুরু হয়েছিল, যার সাথে যুক্ত ছিল প্রাচ্যের নিজস্ব সাংস্কৃতিক অর্থ প্রদানকারি বৈশিষ্ট্য।

দারুণ ঘোর ও নিষ্পাপ অরক্ষিত ভঙ্গিসত্ত্বেও ভাবার মতবাদ ঔপনিবেশিক বাদানুবাদের দ্বৈততাকে বিঘ্নিত করেছিল। তর্কটা এমন নয় যে, উপনিবেশবাদিরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতার অধিকারি ছিলেন, বরং অপূর্ণ ইংরেজিতে ঔপনিবেশিকতার ফাঁকগুলো পুনরায় লিপিবদ্ধ হয়েছিল, যার কারণে অনেক ইংরেজি বইয়ের অর্থ বিকৃত হয়ে ক্ষমতার অনুশিলনকে অসম্ভব করে তুলেছিল। এতে একজন উপনিবেশবাদি অপ্রাসঙ্গিক অবস্থান থেকে অবৈধ পাশ্চাত্য ধারা প্রাপ্ত হন, একটি ‘সংকর’ অবস্থানে পড়েন, যা তার নিজ শক্তিকেই চ্যালেঞ্জ করে এবং জ্ঞানতত্ত্বিয় সন্ত্রাসের জন্য কোনো জায়গা রাখে না।

ঔপনিবেশিক পাঠ্যধারার বিভ্রান্তিপূর্ণ অর্থনীতি সুযোগ দেয় কেবল অপ্রাসঙ্গিক আগ্রাসনের, ‘ঔপনিবেশিক বাদানুবাদের দ্বৈততার মাঝে যা গ্রন্থিবদ্ধ হয় তা শুধু এক শক্তিশালি জাতি কর্তৃক লিখিত অন্য জাতির ওপর চালানো সাহিত্যিক সন্ত্রাসই নয় বরং এক বিরোধপূর্ণ সহাবস্থান, যা উপনিবেশবাদি ও উপনিবেশবাসিদের পুনর্গ্রন্থিত করে।’ ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে অবশ্য কর্তৃত্বপরায়ণতা ও অধিনস্থতার পরিস্থিতিতে মিথ্যাকে চিহ্নিত করবার ক্ষমতাকে একত্রিত করতে অস্বীকার করা দ্বারা মূল নেতৃত্ব থেকে নেতৃত্বের ধারণাকে পৃথকের অযোগ্য গণ্য করা হয়। এই ক্ষমতা ও প্রতিযোগিতামূলক মতামতে শোষিত শ্রেণির সম্মতি গড়ে তোলার প্রক্রিয়া এবং আদর্শগত আবেশ সৃষ্টি করে। সম্পর্কের মাননির্ধারণের ব্যাপারটি আসলে মতের ভিন্নতা ও প্রতিরোধের মাঝে পার্থক্য সৃষ্টি করেছিল। যদিও এর অধিনস্থ মানুষেরা সামাজিকিকরণ প্রক্রিয়ার আওতায় গড়ে উঠেছে ভেবে নিজেরা আত্মতৃপ্ত ছিল। কিন্তু এই নেতৃত্বপরায়ণ মতবাদ বাধাগ্রস্ত হয়েছিল যেহেতু ভিন্ন এক অবাধ্যতা ও যুদ্ধংদেহি মতবাদ দ্বারা, যা ঔপনিবেশিক শোষণের আওতায় না আসা এলাকায় ছড়িয়ে সম্পর্ক, মূল্যবোধ, এসবের নতুন চেহারা তৈরি করেছিল। সেই সময়ে যখন গতানুগতিক চিন্তাধারা ঔপনিবেশিক বিবৃতিদানকারিদের মাঝে প্রভাব হারাচ্ছিল, তখন ‘ফানোন’-এর পাশ্চাত্য ক্ষমতা ও প্রাচ্য বিপ্লববাদি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া দ্বারা সাংস্কৃতিক প্রতিরোধকে উপস্থাপন করা প্রশ্নোত্তরমূলক প্রক্রিয়া বেশ গঠনমূলক প্রভাব ফেলেছিল। তাঁর লেখা থেকে উদাহরণ দেয়া যাক, ‘সাদা মানুষের মুখোমুখি দাঁড়ানো একটি কাল মানুষের বৈধতার অতীত ও উৎপাদনের প্রতিশোধ স্পৃহা থাকে…। কোনো উপায়েই আমি আমার অনৈতিকভাবে অপরিচিত কাল সভ্যতার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে পারি না। আমি নিজেকে অতীতের মানুষ বানাব না… আমি ইতিহাসের বন্দি নই, এটি কেবল ইতিহাসের পেছনে ধাবিত হবার প্রথাগত ধারাবাহিকতা, যাতে আমার স্বাধীনতার আমি সূচনা করব।’ নিজস্ব কুক্ষিগত ক্ষমতার অযোগ্য স্বীকৃতির মাঝে অতীতকে সুরক্ষিত রাখার প্রয়োজনিয়তাকে সত্য মেনে নিয়ে ফানোন লেখক ও বুদ্ধিজীবীদের সীমাবদ্ধতাগুলো চিহ্নিত করেছেন, যারা ‘নিজ দেশে অভিবাসিরূপে আসা’ মানুষদের ‘ভাষা ও রচনারীতি’ই ব্যবহার করেছেন। এতে প্রায় লেখা হয়েছে পুরেনো রূপকথারই পুনরাবৃত্তি, ‘ধার করা অতীতের আলো’ কিংবা ‘অন্য আকাশের নিচে অন্য পৃথিবীর ধারণা’ সদৃশ অলিক ও অসার। এতে সাহিত্যেও এমন লড়াইয়ের আবহ সৃষ্টি হয়েছে যাতে করে, ‘সাহিত্যিক ধারণা ও কৌশল ব্যহত হয় এবং সম্পূর্ণ নতুন পাঠকশ্রেণি সৃষ্টি হয়’ এবং জাতিয় সচেতনতা গুলিয়ে যায়।

ফানোন-এর মতবাদের উন্নতি একটি সম্প্রদায়ের সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে লিপ্ত থাকার প্রক্রিয়ার সাথে অভিন্ন এবং এতে স্থানিয় অধিবাসিদের ওপর বহিরাগতদের ভাষা চেপে বসার এবং ঐতিহাসিক নিয়ম অগ্রাহ্য করার ছাপ আছে। এটি এমন এক প্রক্রিয়া, যা ঔপনিবেশিক বিবৃতিতে ছিল না এবং এই প্রক্রিয়াকে স্পষ্ট করতে ঔপনিবেশিক আদর্শের একটি সুষ্ঠু মানচিত্র প্রয়োজন। পাশাপাশি ঐতিহাসিক উপাদানরূপে ও একটি ঐচ্ছিক বাদানুবাদের প্রতিনিধিরূপেও প্রাচ্যবাসিদের স্বীকৃতি দেয়া একান্ত প্রয়োজন।   

বর্ষ ৫, সংখ্যা ৯, আগস্ট ২০০৬

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার