টীকা
এসেছে অনেক টীকা
সাথে কিছু টিপ্পনিও আছে
যারা তার ধারে নাই ধার
তারা ছোটে ব্রড কোশ্চেনের কাছেআমরা টীকার সাথে আজন্মই পরিচিত
ঝালাপালা করেছিল আমাদের দুরন্ত শৈশব
আর এই বাহুর চামড়াটুকুনসুপারিগাছটি বেয়ে দেয়াল টপকে গিয়ে
নিঃশব্দে লুকিয়ে ছিলাম
মনিরদের বাসার ভেতর
টীকা দিদি চলে গেলে সভয়ে প্রত্যাবর্তনে
কত না টিপ্পনি জুটেছিল মায়ের-বাবারএখন কোভিড কালে আবার টীকার পালা আসে
কার বাহু ফুটা হয়
কে আজ টিপ্পনি কাটে আর
কে দেখায় জীবন যুদ্ধের সেই ব্রড কোয়েশ্চেন
অথবা নিদেন এমসিকিউ(বিকাল ৪:২৮; ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১)
যতই টিপ্পনি কাট
যতই টিপ্পনি কাট ছিঁচকাঁদুনের মত
মনে রেখ কাল থেকে
টীকা ঢুকে যাবে
মানুষের শরীরে শরীরে
কাল থেকে নতুন যুগের শুরু
সূর্য্যের রং অনেক অনেক হলুদ হবে
কত রঙে পুষ্পদল বিকশিত হবে আনন্দ উজ্জ্বল
বাড়ীর ভেতর থেকে একে একে বের হয়ে আসবে
অবরুদ্ধ মানুষের দল
শিশুদের হল্লা ফের শোনা যাবে উঠোনে উঠোনে
কাল থেকে প্রতিদিন জ্যোৎস্না হবে রাতে
নারীর কৌপীন ফের ময়ুরের পেখম মেলবে পথেযতই টিপ্পনি কাট
তোমাদের নখদন্তহীন সামান্য আরএনএ
অনেক তো নিয়ে গেল
নিয়ে গেল গা’ ঘেঁষে বসার সেই মন
সন্তানকে মমতায় বুকে আগলে ধরার সুখ
দূরত্বের অলিখিত বেড়ার আড়ালে তুমি
অনেক নিয়েছ প্রাণ নিয়ে গেছ প্রেম
উৎসবের সরল উচ্ছ্বাসমনে রেখ দিন আসছেই
আইসিইউ থেকে সব রোগী ঘরে ফিরে যাবে
কাল তবে মানুষের নবজন্ম হোক
ইতিহাসে দাগ দিয়ে রেখে দাও এ সুন্দর দিন
যতই টিপ্পনি কাট
কাল থেকে টীকার সুদিন
মানুষেরা অনন্ত ভবিষ্যতের সাক্ষ্য রেখে যাবে(সন্ধ্যা ৭:২৫, ২২ এপ্রিল ২০২০)
রাগ
এসব রাগিনী রাগ আমার আসে না
আজন্ম অসুর থেকে যাই বিতরাগ
এমনকি বাথরুমের একান্ত গোপনে একটু খুললে গলা
দেয়ালে ঝুলে থাকা মাকড়সা
বেসিনের তলায় লুকানো তেলাপোকা টিকটিকি
সটান বেরিয়ে পড়ে পালাবার খোঁজে পথআমাকে যতই বকো রাগে অথবা বিরাগে
আমি তারপরও কন্ঠে তুলতে পারি না কোন রাগ
সে তুমি কাহারবা গাও অথবা দাদরা বিলাবল
কিছুতে রাগি না আমি, আর
আমি জানি, আমি রাগী না
সব রাগ রাগিনীর ঠাট আর হারমোনিকার পেঁ-পোঁ
তোমার কন্ঠের সাথে তোলা থাকে অচিন অন্তরেরাগ নয়— রাগিনীও নয়—
আমার কেবল আছে দুই ফোঁটা আর্দ্র অনুরাগ
সে কেবল প্রাণের উচ্ছ্বাসে বেজে ওঠে মগজ-গহীনে(২৪/১/২১, পূর্বাহ্ণ ১:১৪, বনানী)
মাটি ও সোনা
তেমন কি আর মূল্য সোনার বলো
সোনার বুকে ফলবে না গাছপালাসোনার বাটি যতই ভরো ভাতে
ভাতের দাম বাড়ে না এক মুঠ-ওগলায় শেকল সোনার যত পরো
যে দাম দিয়ে হোক না গয়না কেনাতোমার জীবন চার দেয়ালে বাঁধা
বেগম সেজে বানাও নতুন ধাঁধামাটির কদর ধানের চারা বোঝে
মাটির মোহ জানে কৃষাণেরাকন্যা তুমি সোনার ঝলক ছেড়ে
শুনতে থাকো মাটির কলস্বরকন্যা তুমি মাটির মত হও
সর্ব্বসহা আর একটু উর্বরা(৭ জানুয়ারি ২০২১, রাত্র ১০:২০ ; চট্টগ্রাম)
লাল মাফলার
(বন্ধু সালাউদ্দিন মারুফকে)শীত নেমে এলে শাদা কুয়াশার আঁশে আঁশে
শাদা পালকের ধোঁয়াসার বেশে
আলমিরা থেকে উড়ে আসে জানি
মায়ের হাতের বোনা লাল মাফলারখানিমাফলারে সলজ্জ কুন্ঠায়
দুচারিটি ফুটাফাটা উঁকি দিয়ে যায়
শীতকে ঠেকাতে চায়
অনিবার্য্য দায়িত্ব ভেবেই হায়
নাক মুখ ফাটা ঠোঁট কান দুইটাকে
আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পেঁচিয়ে রাখে
চিবুকের শুষ্ককোণ খসখসে গলা
যেখানে শীতের নিত্য ধেয়ে চলাআর নম্র লাল কান দুটো
কানের পিনা বা কুহরে গভীর ফুটো
মাফলারে ঢাকা পড়ে থাকে
সূঁচালো নাসিকাটাকে
ঢাকা পড়া মাথাটার তালু
আর চুল উস্কুখুস্কু আলুথালু
গাঢ় চুম্বনের ঠোঁট
ঠাণ্ডায় বেঁধেছে জোট
চোখের ওপরই শুধু এই
মাফলারের কোনো দাবী নেইমাফলারে মায়ের উলের
কাঁটা দিয়ে বুননের
চিহ্ন বাঁধে বাসা
উলের পিঠেই উল ঠাসা
এখনও বুনন করে সম্পর্কের ওম
জড়ায়ে শীতের উপশম
কখনও উলের বল গড়াগড়ি খায়
কনিষ্ঠ শিশুর পা’য়-পা’য়
মায়াভরা মাতৃক্রোড় হতে
পরিত্যক্ত মেঝের কার্পেটে
ঘরের এ কোণ্ থেকে ওই কোণে
এমনকি বিছানার তলে আনমনে
পড়ে পড়ে থাকে
যেমন গরম কালে ঘর্মাক্ত বৈশাখে
রাখে না খবর কেউ তার
উলের পাকানো বল কিংবা লাল মাফলার
পড়ে থাকে নিতান্ত হেলায়
পরিত্যক্ত কোন কেদারায়
কালের করাল গ্রাসে
টান খায় অবসন্ন আঁশেলাল মাফলারখানি
সকলেই বেশ ভাল জানি
ফুটা হয়ে যায় এখানে ওখানে
ফাঁক গলে ঢুকে পড়ে জোছনা কোনোখানে
আর, ফুটা পয়সার মত আলো
বাজারে বিকায় ভাল
ফের হাওয়া বয়ে গেলে জোরে
উদ্যত ঝাণ্ডার মত ওড়ে
সেই স্মৃতি মাখা মা’র
পুরনো লাল মাফলারপতাকার মত লাল মাফলারখানা
গলায় পরেছি টানা
চব্বিশ বছর কাল ধরে
যৌবন যেমন রং ধরে প্রেমিক অধরে
তারপর যেমন কপাল
আসে শীতের সূচনাকাল
পুরাতন আলমিরা থেকে
বছরের সব অবসর রেখে
গলে গলে নামে — নেমে আসে
সোঁদাগন্ধ বিষণ্নতা বুকে নিয়ে হাসে
গলায় জড়িয়ে ধরে সঁপে প্রেম
ফুটা’তে এমন কিবা টলেছে টোটেম
শত বছরের শত প্রতীক্ষার ওম
মাফলারে শরীর গরমবস্তিবাড়ী ফুটপাতে
কুয়াশায় ঘেরা নিশিরাতে
গাঢ় শীত নেমে এলে
টিনের-ছনের চালে
না চাদর না মাফলার
যখন তাদের খুব দরকার
কিছুই আসে না ভেসে
অভাগার ভাগ্যাকাশে
ভাঙ্গা তোরঙ্গের ঘুলঘুলি থেকে
প্রভাতের ফাঁকে ফাঁকে
যখন দিয়েছে ডাক
অশরীরী মৃত কাকতবু শীতে জড়াজড়ি করে
একে অপরের হাতখানি ধরে
শরীরী উত্তাপ কিছু
ভাগাভাগি করি মাথাপিছু
লালার তরল ওম
পান করে নিতে আজ লাগে না শরম
আঙুলে আঙুল ঘষে
উত্তাপ ছড়াই কোষে কোষে
ধীরে অতি ধীরে ধীরে
মায়াময় অপর পৃথিবী ঘিরে
উড়ে আসে পাতা পোড়ানোর ধোঁয়া
তখনও দু’জনে শোয়া
কেবল আকাশে জ্বলে জোছনা
আর তক্তপোষে অনন্তের যত তৃষ্ণাশীত নেমে এলে খুব ভোর বেলা
যখন শিশুরা ছোঁড়ে ঢেলা
খেজুর বৃক্ষের গায়ে ঝুলন্ত কলসীতে
নিজেকেই যেন দেখি আরশীতে
খেজুর রসের ঘোর লেগে থাকে
যেমন পাখীরা আসে ঝাঁকে ঝাঁকে
তবু শিশির বিন্দুতে ভেজা মাফলারে শীত
নাড়িয়ে গিয়েছে কত বিশ্বাসের ভিত
তারপর আরো আরো জেঁকে বসে
পিঠা ও খেজুর রসে
তবু লাল মাফলারটারে
দেখি শীতকালে ওড়ে
শীত শীত রক্তিম বিপ্লবে
স্বপ্নের মায়াবী উৎসবে।।(পূর্বাহ্ন ১২:৩৫; ২৬ জানুয়ারি ২০২০, চট্টগাম
সংশোধন: সন্ধ্যা ৭:৪৭; ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে)
জিললুর রহমান
জন্ম ১৯৬৬ সালের ১৬ নভেম্বর। তিনি আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে লেখালেখির যাত্রা শুরু করেন। তিনি কবিতা বিষয়ক নিবন্ধও লেখেন। তিনি কবিতা এবং নন্দনতাত্ত্বিক প্রবন্ধ অনুবাদ করেছেন। তাঁর কবিতা, প্রবন্ধ এবং অনুবাদগুলি বিভিন্ন ছোট্ট কাগজে প্রকাশিত হয়, যেমন:— লিরিক, নিসর্গ, জীবনানন্দ, সমুজ্জ্বল সুবাতাস, পুষ্পকরথ, সুদর্শন চক্র, শতক্রতু, সবুজ আড্ডা, চারবাক, বিন্দু, কঙ্কাল, খড়িমাটি, একবিংশ এবং আরও অনেক পত্রিকায়। তিনি যদিও উত্তরমেঘ (২০১৭) সম্পাদনা করেছেন এবং লিরিকের সম্পাদনা পরিষদের সদস্য ছিলেন (১৯৯২-২০০৫)। তিনি তিনটি কবিতা সংগ্রহ, দুটি দীর্ঘ কবিতা, ২টি প্রবন্ধের সংগ্রহ এবং ৩টি অনুবাদকৃত বই প্রকাশ করেছেন। নাজিম হিকমতের রুবাইয়াতগুলি তিনিই প্রথম বাংলায় অনুবাদ করেন। সাম্প্রতিক সময়ে ‘পপলার বন মরে পড়ে আছে’ এবং ‘একটি মেরাজের রাত্রে ঘুমিয়েছি’ শীর্ষক কবিতার সিরিজ পাঠকমহলে বেশ সাড়া জাগিয়েছে।কবিতার ভাঁজপত্র: ক্ষয়িষ্ণু চাঁদের যৌবন (১৯৮৮)
কাব্যগ্রন্থ: অন্যমন্ত্র (লিরিক, ১৯৯৫), শাদা অন্ধকার (লিরিক, ২০১০), ডায়োজিনিসের হারিকেন (ভিন্নচোখ, ২০১৮)
দীর্ঘ কবিতার বই: আত্মজার প্রতি (বাঙময়, ২০১৭), শতখণ্ড (বাঙময়, ২০১৭)
প্রবন্ধ/নিবন্ধ: অমৃত কথা (লিরিক, ২০১০); উত্তর আধুনিকতাঃ এ সবুজ করুণ ডাঙায়; (বর্ধিত ২য় সংস্করণ, খড়িমাটি, ২০১৮; ১ম সংস্করণ, লিরিক, ২০০১)
অনুবাদ: আধুনিকোত্তরবাদের নন্দনতত্ত্বঃ কয়েকটি অনুবাদ (লিরিক, ২০১০); নাজিম হিকমতের রুবাইয়াৎ (বাতিঘর, ২০১৮); এমিলি ডিকিনসনের কবিতা (চৈতন্য, ২০১৮)
‘সেইবই’ অনলাইন গ্রন্থ: লাশঘরে দেশজুড়ে (কবিতা); বাংলাদেশে উত্তর আধুনিকতা ও লিরিক (প্রবন্ধ);
আধুনিকোত্তরবাদের নন্দনতত্ত্বঃ কয়েকটি অনুবাদ (প্রবন্ধের অনুবাদ); অমৃত কথা (প্রবন্ধ); অন্য মন্ত্র (কবিতা)
‘যদিও উত্তরমেঘ’ (২০১৭) এর সম্পাদক। তরঙ্গ’ (১৯৯০, ১৯৯১) এর সম্পাদনা পরিষদ সদস্য। লিরিক (১৯৯২—২০০৫) এর সম্পাদনা পরিষদ সদস্য। মূলত লিরিক, নিসর্গ, জীবনানন্দ, সমুজ্জ্বল সুবাতাস, পুষ্পকরথ, সুদর্শন চক্র, শতক্রতু, সবুজ আড্ডা, চারবাক, বিন্দু, কঙ্কাল, খড়িমাটি, একবিংশ সহ বিভিন্ন ছোট কাগজে লিখে আসছেন দীর্ঘদিন।প্রকাশিতব্য কবিতার বই: ১. পপলার বন মরে পড়ে আছে ২. হাস্নুহেনা ও মা ৩. একটি মেরাজের রাত্রে ঘুমিয়েছি
প্রকাশিতব্য নিবন্ধের বই: ১. বাংলা কবিতার সারথীরা ২. নোবেলের কবিগণ ও অন্যান্য
চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রকাশনা:— 1. Undergraduate text book— Pathology Tutorial (vol—1&2); 3 editions since 2017. 2. Research articles—63 original articles published in different international and local journals including NATURE 3. Scientific Editorial in international and local journals—3