কেউ আমার ফুসফুস থেকে প্রয়োজনীয় নিঃশ্বাস টেনে নেয় || হোসাইন মাইকেল

0

মায়া থেকে ফিরে
মরিচিকায়, ঝলমলে রোদে দেখি বৃষ্টি পড়ে
মায়ের সূর্য্যমুখী শাড়ী ভিজে যায়
বাবা অবাক সান্ত্বনা দিয়ে বলে
ভয় নেই এ বৃষ্টি নিমেষেই ফুরিয়ে যাবে।
আমি চোখের অসুখ নিয়ে সূর্য্যের দিকে চেয়ে থাকি— দেখতে না পাওয়ার মত কি যেন দেখতে পাই…

আমার শরীর ঘেঁষে দাঁড়ায় একটা কুকুর
লেজ নাড়িয়ে বলে— এ হৃদয় হৃদয়ের গন্ধ ভোলেনি … আমি তার মাথায় স্পর্শ দিই
তার চোখ থেকে অসংখ্য প্রেমাস্পদের দেহ তুলে নিয়ে বলি
রাতের ইম্যাজিনেশনে তোকে মানুষ করে তুলব।

বৃক্ষ কখনো মানুষ হতে চায়নি
মানুষই বারবার বৃক্ষ হতে চায়।
একটা বৃক্ষ অপেক্ষায় থাকে
নিকটে গেলে বিক্ষত শরীর থেকে মুছে ফেলে সংযম
আমি তার ত্রুটিহীন ইশারায় ঘাসের হৃদয় থেকে স্বপ্ন কুঁড়াতে থাকি।
উড়ন্ত চুলে
গ্রীবায়
স্তনে
নাভিতে
নিতম্বে
যোনীর গভীরে মানুষ কিংবা কিছু কুকুরেরা করেছিল আঘাত
সেইসব ক্ষতচিহ্নে আমি স্বপ্নরস ঢেলে দিয়ে পাঠ করি
বেদ
বাইবেল
গীতা
কোরাণ …
এরপর
চাঁদ খুব বেশী ঝরালে আলো আমি নিশাচর সে বৃক্ষের আড়ালে লুকাই
তার পায়ের কাছে রাখি যে নিঃশ্বাস ছাঁই হয়ে যায় …

কিছু কথা বলি, কিছু রেখে আসি ঘরের দুয়ারে
সব কথা কথা নয়
কথার ফাঁকে যদি দরকারী বৃক্ষের মত
কিছু সরকারি লোক কেটে ফেলা যেত
কেমন হত তুমি বল তো …

পথ যদি শেষ হয়ে যায়!
প্রতিরাতে তাই খুচরো কিছু পথ ঘরে নিয়ে আসি
জমিয়ে রাখি মায়ের মুষ্ঠিচালের কলসীতে
সুযোগ পেলেই সেইসব পথ ধরে ফিরে যাই সবুজ শৈশবে
যেখানে একটা জোড়াতালী হাফপ্যান্ট ঝুলে আছে সূর্য্যের কাছাকাছি।

ঝলমলে রোদে বৃষ্টি হয়
মায়ের শাড়ীর মত ভিজে যায় হাফপ্যান্ট
সেইটাই আমার দেশ
সেই জোড়াতালি দেশের ভেতর
কেউ আমার ফুসফুস থেকে প্রয়োজনীয় নিঃশ্বাস টেনে নেয় …

একা থাকি
মন চায় একা বাঁচি নষ্ট কিছু কাল
সেই ভেবে নিজের থেকেও নিরুদ্দেশ হই
কাউকে ডাকি না বুকে
কাউকে রাখি না চোখে
বহুদিন কারো কাছে হয়নি যাওয়া …
কেউ কেউ ডাকে, বিরক্ত করে প্রিয় কোকিলেরা
আসে যায়
আমি দেখি তাদের কণ্ঠ থেকে স্বর মিশে যায় জলতরঙ্গে
স্ব স্ব হৃদয় থেকে হারিয়ে যায়
জলের দামে বিক্রি হয়ে যায় সার্কাসের মাঠে

বুঝে গেছি গান আর হবে না, কোকিলের গান …

এবার দেখতে হবে রাতের ভেতর রাত কতটা নগ্ন
দিনের ভেতর শুকনো একটা দিন
কেমনে বয়ে যায় নমস্য কিশোরের বোধে
আমি তার ঠোঁটের দিকে চেয়ে থাকি, ধ্বনিকর্ম্ম অবলোকন করি
সে অনবরত দেখায়—
তার বুকের ভেতর গঙ্গা
তার বুকের ভেতর আকাশ
তার বুকের ভেতর পাহাড় …
আমি হাওয়ার প্রাচীরে লিখে রাখি তার নাম— সুনীল
সে গাঢ় নীল হয়ে যায়

কবিতা পাখী পুষবার খাঁচা
বিবিধ সন্তাপে যদি হও পরিযায়ী পাখী।
যদি গান ভুলে যাও সে খাঁচায় জং ধরে যায়
আমি গদ্যের কাছে পরাজিত হই
ক্ষমতার কাছে পরাজিত ক্ষমার মত।

রাজ্যের যত বোকাচোদা শাসক আছে, তুমি জান
তাদের নামগুলোই তীব্র অশ্লীল হয়ে গেছে
সেইসব অশ্লীল শব্দের কসম
আমি আমার ভাষার কাছেই মাথানত করি।
অথচ জানি না রোজ রাতে ঘুমানোর পর
আমি কোন ভাষায় শুয়ে থাকি
কোন ভাষায় স্বপ্ন দেখি
কোন ভাষায় কে আমার ফুসফুস থেকে প্রয়োজনীয় নিঃশ্বাস ছিঁড়ে নেয়…

যে তুমি আমার হাতের ওপর হাত রাখলে
পিকাসোর বিমূর্ত্ত চিত্রকলা মূর্ত্তমান হয়
তোমার হাতের রেখায়
সেই তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে
আমি নিষিদ্ধ হই প্রতি পূর্ণিমায়

আমার পাঁজরের হাড় ভেঙে
ওই যে উনি লিখেছিল কার গায়ে হলুদের বিবরণ?
চাঁদের আলো থেকে সরে সেই যে বৃক্ষের আড়ালে বসে ভাবি—
হলুদ সন্ধ্যার কবিতা ঈশ্বর কোন গ্রন্থে লিখেছিল?

একটা বৃক্ষ অপেক্ষায় থাকে
কেবল একটা বৃক্ষ
তার কাছেই নিজেকে নিরাপদ লাগে
তার দেহের ভাঁজে রেখে চিন্তার ফসিল
দূর থেকে শোনা যায় মৃত্যুর ঝন্ ঝন্ শব্দ, দেখা যায়
কুকুর কিংবা মানুষের হৃদয় হরণ উৎসব …

 

 

 

হোসাইন মাইকেল
জন্ম— ৮ জুন, কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়িতে। কবি ও গদ্যকার।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার