ভুবনডাঙার গল্প || স্বপন বিশ্বাস

0

নদীর ঘাটে কী এক বস্তু ভেসে এসেছে। শেষ রাতের অন্ধকার ছিঁড়েফুঁড়ে সে খবর ভুবন ডাঙার মানুষের মাঝে চাউর হয়ে গেল। সবাই হই হই রই রই করে ছুটল নদীর ঘাটে। মেয়েরা ঘুম জড়ানো চোখে গায়ের কাপড় টানতে টানতে দৌড়াল। কোন কোন পুরুষ রাতের খুলে ফেলা পোষাক নিতে ভুলে গেল। তাই নিয়ে ভুবনডাঙায় নতুন নতুন গল্পের জন্ম হল। তবে সব গল্পকে হার মানিয়ে দিল হাবুলের বউ। সে সারা রাত প্রসব বেদনায় ছট্ফট্ করছিল। দাইমা তেলপড়া, গরমজল আর বাচ্চার নাড়ী কাটার বাঁশের চটা নিয়ে অপেক্ষা করছিল। নদীর ঘাটের খবর শুনে সে প্রসব বেদনা ভুলে গেল। দাইমার হাত ধরে হাজির হল নদীর ঘাটে। সেখানেই হাবুলের বউয়ের বাচ্চা হল।

আশপাশের গ্রাম থেকে লোকজন ছুটে আসল। যারা হাটে বাজারে বা মেলার মাঠে দোকান বসায় তারা ছুটে এল দোকান নিয়ে। নদীর ঘাটে মেলা বসে গেল। এলাকার গণ্যমান্য নেতৃস্থানীয় লোকজন এসে হাজির। মেলার মাঠে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য ব্যাটারী চালিত মাইক লাগানো হল। ভুবনডাঙায় এখনো বিদ্যুতের আলো পৌঁছেনি। শুধু বিদ্যুতের আলোই নয়— পৃথিবীর উন্নয়নের তেমন কোন ছোঁয়াই লাগেনি এই জনপদে। ভুবনডাঙার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে প্রবল স্রোতস্বিনী এক নদী, যাকে মহাসাগর বললেও হয়ত কম বলা হবে। নদীর এপারের মানুষ কখনো অন্য পারের চেহারা দেখেনি। যারা গেছে তারা আর কোন দিন ফিরে আসেনি। যদিও ফিরে আসার জন্য কেউ এই নদী পাড়ি দেয় না। যারা এই খরস্রোতা নদীর হাঙর, কুমীর ঝড়-ঝঞ্ঝা পার হয়ে অন্য পাড়ে পৌঁছায় তারা নাকি অমর হয়ে যায়। ওপারের যে দেশ সেখানে কোন রোগ নেই, শোক নেই। গাছে গাছে নানা রকম সুস্বাদু ফল। সোনার পাহাড় থেকে যে ঝর্ণাধারা নেমে আসে তাতে সুমিষ্ট দুধের নহর বয়ে যায়। সোনায় মোড়া গাছে গাছে পাখীরা বসে গান গায়, মানুষের মত কথা বলে। মানুষেরাও পাখীর মত উড়তে পারে। উড়তে উড়তে পরীদের সঙ্গে প্রেমালাপে মত্ত হয়। মেঘের মাঝে লুকোচুরি খেলে। এপারের মেয়েরা ওপারে গিয়ে পরীর মত সুন্দর হয়ে যায়। তারপর পাখা মেলে প্রজাপতিদের সঙ্গে ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ায়। সেখানে সব সময় বসন্তকাল আর প্রতি রাতই আলো ঝলমলে পূর্ণিমার রাত।

এইসব ঘটনা এপারের মানুষেরা কীভাবে জেনেছে তা কেউ বলতে পারে না। সবাই তাদের পূর্ব্ব পুরুষের কাছ থেকে ওপারের গল্প শুনেছে। তারা আবার শুনেছেন তাঁদের পূর্ব্ব পুরুষদের কাছ থেকে। একদিন নদী পাড়ি দিয়ে ওপারে গিয়ে সবাই অমর হবে— এমন বিশ্বাস নিয়েই এই জনপদের মানুষদের জীবনযাপন। তাদের মূল কাজ সারা জীবন ধরে একটা নৌকা তৈরী করা। তারপর সেই নৌকায় কয়েক বছর চলার মত খাদ্যসামগ্রী আর বিপদ মোকাবিলা করার সরঞ্জামাদি বোঝাই করে একদিন নদীতে নেমে পড়া। কেউ কাউকে সঙ্গে নেয় না, সেটাই নিয়ম। হতে পারে যাত্রী সংখ্যা বেশী হলে পথে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। তাই যার যার জমানো রসদ নিয়ে একা রওনা হয়।
পথের খাবার আর বিপদ আপদের কথা চিন্তা করে নৌকাটাকে মজবুত আর বড় করে বানাতে হয়। তবে তার জন্য কেউ কোন নির্দ্দিষ্ট মাপ মেনে চলে না। যার যেমন খুশি বানায়। এখানকার মানুষেরা দিনে মাছ ধরে, ক্ষেতে ফসল ফলায় আর রাতে মশাল জ্বেলে নৌকা তৈরী করে। অনেকের মতে, ক্রিস্টোফার কলম্বাস নাকি তাঁর ভারত অভিযানে এই অঞ্চলটী দেখেছিলেন। তাঁর ভ্রমণ কাহিনীতে নানা রকম অদ্ভুত অভিজ্ঞতার বর্ণনা আছে। এমন এক অভিজ্ঞতার বর্ণনায় কলম্বাস লিখেছেন, তাঁর জাহাজের নাবিকেরা একটী অঞ্চলের দিগন্তে আলোর নাচানাচি এবং আকাশে ধোঁয়া দেখেছেন। এ ছাড়া তিনি কম্পাসের উল্টাপাল্টা দিক্ নির্দ্দেশের কথাও বর্ণনা করেছেন। তারপর তিনি গতিপথ পরিবর্ত্তন করে নতুন আরেক দেশে গিয়ে হাজির হলেন। পরে যার নাম দেওয়া হয়েছে আমেরিকা। ঘটনা সত্য হলেও হতে পারে। হয়ত কলম্বাসের জাহাজের নাবিকেরা নৌকা তৈরীর মশালের আলোই দেখেছিলেন। তবে কলম্বাসের ভ্রমণ কাহিনীতেও নদীর ওপারে যে দেশ, তার কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলে ভাল হত। একটা প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যেত। যুগ যুগ ধরে মানুষ যা বিশ্বাস করে আসছে তা তো আর মিথ্যা হতে পারে না। তবু মানুষ প্রমাণ চায়। অজানা সেই দেশ সম্পর্কে জানতে চায়। জানতে চাইলেই তো আর সবকিছু জানা যায় না। কেউ তো সেখান থেকে ফিরে এসে গল্প বলে যাবে না।

ভুবনডাঙার পরাণ মাঝী সেই জানানোর দায়িত্ব নিয়ে নিলেন। তিনি ভাবুক কিসিমের মানুষ। পদ রচনা করেন। মানুষ তাঁর কিছু বোঝে, কিছু বোঝে না। তবে তাঁর পদ শুনে সবাই আনন্দ পায়। পরাণ মাঝী ঠিক করলেন, তিনি ওপার থেকে ফিরে আসবেন না কিন্তু লিখিতভাবে সবকিছু জানাবেন। তাঁর জন্য একটা কাঠের বাক্স বানানো হল। গাবের কষ দিয়ে পানেট করা হল। আলকাতরা লাগানো হল যেন সেই বাক্সে জল না ঢোকে। সঙ্গে খাতা-কলম নেওয়া হল। ওপারে পৌঁছানোর পরে সবকিছু বিস্তারিত লিখে বাক্সে ভরে নদীতে ভাসিয়ে দেবেন।
নৌকা ভাসানোর কিছুদিন আগে পরাণ মাঝী একটী ভোজ সভার আয়োজন করলেন। সেখানে সেই বাক্সটী সবাইকে দেখানো হল। বাক্সের গুরুত্ব বর্ণনা করা হল। এই বাক্স যখন ফিরে আসবে তখন তার ভেতরে ওপারের সবকিছু বর্ণনা করা থাকবে।
ভুবনডাঙার মানুষ একদিন ঢাক-ঢোল বাদ্য-বাজনা সহযোগে পরাণ মাঝীকে বিদায় জানাল এবং অপেক্ষায় থাকল বাক্সটী কবে ফেরত আসবে। অনেক দিন ধরে সবার চোখ খুঁজে ফিরল সেই বাক্স। মাস গেল, বছর গেল। একদিন ভুবনডাঙার মানুষ ভুলে গেল পরাণ মাঝীর বাক্সের কথা।

সেই বাক্স আজ এতকাল পরে ভুবনডাঙার ঘাটে এসে হাজির। ছোটরা না চিনলেও বড়রা সবাই নিশ্চিত যে, এই বাক্সই পরাণ মাঝীর সেই বাক্স। পরাণ মাঝীর নাম পর্য্যন্ত খোদাই করে বাক্সের ওপরে লেখা আছে। পিতা-জীবন মাঝী । সাং— ভুবনডাঙা।

ভুবনডাঙার রাজা বাহাদুর পর্য্যন্ত এসে হাজির হলেন ঘাটে। সঙ্গে তাঁর পাইক পেয়াদা, সভাসদরা। রাজা বাহাদুরের নির্দ্দেশে বাক্সটী তুলে আনা হল নদীর ঘাট থেকে। সবাই অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। টান টান উত্তেজনা। সবাই জানতে চায় কী লেখা আছে সেই বাক্সের মাঝে! যারা পড়তে পারে তারা নিজে পড়ে দেখতে চায়। যারা পড়তে পারে না তারা শুনতে চায়। প্রাণ ভরে শুনতে চায় সেই অজানা জগতের বিবরণ। শেষ পর্য্যন্ত রাজা বাহাদুর নিজ হাতে বাক্সটী খুললেন। ভেতর থেকে একটী খাতা বের করলেন। সবাই নিশ্চিত হল একটী খাতা ফেরত এসেছে। রাজা একে একে সব পাতা ওল্টালেন। তারপর একটী পাতায় এসে থামলেন। মানুষের উত্তেজনা তখন চরমে। সবাই বাকরুদ্ধ, দৃষ্টি স্থির হয়ে আছে রাজার দিকে। রাজা পড়ছেন মনে মনে। তাঁকে খুব চিন্তিত মনে হল। তিনি মাইকের সামনে থেকে সরে গিয়ে সভাসদদের সঙ্গে নিচু স্বরে কথা বলেন। জনগণের ভেতর থেকে তখন একটী মৃদু গুঞ্জন ওঠল। তবে কি সব মিথ্যা? এত দিন যা কিছু শুনে এসেছে সব মিথ্যা! এমন সময় রাজা উঠে এলেন মাইকের সামনে। তিনি ধীরে গম্ভীর কণ্ঠে ঘোষণা দিলেন— পরাণ মাঝী নতুন কিছু লিখে পাঠায়নি। আপনারা এত দিন ধরে যে কথা শুনে এসেছেন সেটাই সত্য। যাদের মনে দ্বিধা, দ্বন্দ্ব বা কোন রকমের সংশয় তৈরী হয়েছিল তাদের সবকিছু ভুলে আবার নৌকা তৈরীতে মন দিতে হবে। আমাদের সবাইকে একদিন নদীর ওপারে গিয়ে পৌঁছাতে হবে।
তবে সবাই শুনতে চায় পরাণ মাঝী আসলে কী লিখেছে। শেষ পর্য্যন্ত রাজা পড়লেন পরাণ মাঝীর লেখা ছোট্ট একটী পদ—

‘সাপের পাঁচ পা, ঘোড়ার ডিম,
আশার বাতিঘর জ্বলে টিম টিম।
অকাল কুষ্মাণ্ড দেখে অমাবস্যার চাঁদ
ভুবন জুড়িয়া পাতা নানা রঙের ফাঁদ।’

এই পদ শুনে কেউ কিছু বুঝল না কিন্তু আগ্রহটা চরমে পৌঁছাল। সবাই আরও শুনতে চায়। বিস্তারিত বিবরণ শুনতে চায়। রাজা আরও দুই বার পদটী পড়ে শোনালেন। তারপর বললেন, আমিও আপনাদের মত বিস্তারিত কিছু আশা করেছিলাম। কিন্তু পরাণ এটুকুই লিখেছে। তবে এই অল্প কথার ভেতরেই সে সব কথা বলে দিয়েছে। আমাদের বুঝে নিতে হবে। তারপর তিনি তাঁর সভার একজন পণ্ডিতকে ইঙ্গিত করে বললেন, তিনি আপনাদের সবকিছু বুঝিয়ে বলবেন।

পণ্ডিত উঠে এসে বললেন, আমাদের মহামান্য রাজা বাহাদুর অতি সুন্দরভাবে আপনাদের বুঝিয়ে বলেছেন। তাঁর অতিরিক্ত কিছু বলার ধৃষ্টতা আমার নেই। তবে পরাণ অতি ক্ষুদ্র পরিসরে যা লিখেছে তা বিন্দুর মাঝে সিন্ধুদর্শন।

এতক্ষণ যারা রাজা ও পণ্ডিতের কথা বোঝার জন্য হা করে অপেক্ষা করছিল তাদের হা আরও একটু বড় হল। তবে কিছুই বুঝতে পারল না।

পণ্ডিত বললেন, সাপের পাঁচ পা আর ঘোড়ার ডিম আমাদের ভুবনডাঙায় অসম্ভব। এই ধরনের সব অসম্ভব ঘটনাই ওপারে আছে। পরাণ সেসব দেখেই এ কথা লিখেছে। তারপর লিখেছে বাতিঘরের কথা। নৌকা নিয়ে নদী পাড়ি দেওয়ার সময় সেই টিম টিম বাতি দেখে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা যেন কেউ ভুল পথে না চলি। ভুল পথে গেলে ভুল দেশে পৌঁছে যাব। তারপর পরাণ আরও লিখেছে, অকালকুষ্মাণ্ডের মত একজন অপদার্থ, নগণ্য ব্যক্তীও আঁধার রাতে চাঁদের আলো দেখতে পারবে। অর্থাৎ সেখানে ছোট-বড় কোন ভেদাভেদ নেই। সবাই সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে। পরাণের লেখার শেষ লাইনটী খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ভুবনডাঙায় আমরা নানা রকম লোভ-লালসা আর মায়ার জালে আবদ্ধ হয়ে থাকি। নানা কাজে ব্যস্ত থাকি। নৌকা তৈরীতে গাফিলতি করি। আমাদের এই সব লোভ-লালসার জাল ছিন্ন করে ওপারের বাতিঘরের টিম টিম আলোর দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আজ থেকে সেটাই হবে আমাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।

পণ্ডিতের কথা শুনে অনেকেই তাদের কৃতকর্ম্মের জন্য দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। নানা রকম দ্বিধা-দ্বন্দ্বের কারণে যাদের নৌকা তৈরীর কাজ পিছিয়ে পড়েছে, তারা কেউ কেউ মনের দুঃখে কেঁদে ফেলল। কেউ কেউ একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। এই মুচকি হাসির মানুষদের কেউ কেউ কিছুটা শিক্ষিত। তারা বুঝেছে, পরাণ মাঝী যা লিখে পাঠিয়েছে তার অর্থ, ওপারের যে গল্প এত দিন শুনে এসেছে তা মিথ্যা। তা অসম্ভব আর অবান্তর। ভুবনডাঙার মানুষেরা কল্পকথার মিথ্যা গল্পের ফাঁদে আটকে আছে। সত্যি কথা সরাসরি লিখলে রাজা বাহাদুর তা মানবে না। তাই পরাণ মাঝী একটু কায়দা করে লিখেছে। এই অবিশ্বাসী মানুষদের কেউ কেউ মনে করে, বাক্সের ঘটনাটাই রাজা বাহাদুরের সাজানো নাটক। তা না হলে, এই স্রোতের নদীতে ওপার থেকে বাক্স ভাসিয়ে দিলে এপারের ভুবনডাঙার ঘাটে ওঠবে কেন? কয়েক ক্রোশ আগে পিছেও তো যেতে পারত। স্রোতের নিয়ম অনুযায়ী তেমনটাই তো হওয়ার কথা। তারা মনে করে, রাজা চায় মানুষ সব সময় ওপারের স্বপ্নে বিভোর হয়ে নৌকা তৈরীর কাজে ব্যস্ত থাকুক। যাতে রাজা বাহাদুরের কাজের কোন প্রতিবাদ বা সমালোচনা কেউ না করে।

ভুবনডাঙার মানুষেরা পরাণ মাঝীর পদ নিয়ে বেশ কিছুদিন ব্যস্ত থাকল। কেউ পক্ষে বলে, কেউ বিপক্ষে। একই কথার দুই রকমের অর্থ পাওয়া গেল। যার যার বিশ্বাসে সবাই অটল থাকল। পরাণ মাঝীর বার্ত্তা কারও মনেই তেমন কোন পরিবর্ত্তন আনতে পারল না। বরং দুই পক্ষের বিশ্বাসের ভিতই কিছুটা শক্ত হল। এক বাউল নতুন গান বাধলেন—

‘ওই পারেতে যাব বলে মনে ছিল আশা
মাঝ দরিয়ায় নাও ডুবিয়া হইলাম সর্ব্বনাশা।
সারা জীবন নাও না বাইন্ধা মনরে আগে বান্ধ
ওপারেতে সুখের আশায় এপারে কেন কান্দ।
এপারেতে নগদ যা পাও তাই নিয়ে সব বাঁচ
কল্পকথার গল্প ভুলে দুহাত তুলে নাচো।
ধন্য আশা কুহকিনী ওরে অবুঝ চাষা
মাঝ দরিয়ায় নাও ডুবিয়া হইলাম সর্ব্বনাশা।’

বাউল তাঁর এই গান গ্রামে গ্রামে গেয়ে বেড়ান। গানের সুরে মুগ্ধ হয়ে গ্রামের লোকেরা তা তাদের নিজেদের গলায় তুলে নেয়। এভাবে গানের খবর পৌঁছে যায় রাজা বাহাদুরে কানে। বাউলকে ডেকে পাঠান রাজা। তাঁর গান শুনে মুগ্ধ হয়ে আদর আপ্যায়ন করে। রাজার দরবারে চাকরী দিতে চায়। বাউলের ভবঘুরে জীবন। তিনি রাজার খাঁচায় বন্দী হতে চান না। স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ান। নদীতে তাঁর নৌকা ভাসানোর কোন পরিকল্পনা নেই। তবে একদিন বাউল নিজেই নৌকার মত ভেসে ওঠল ভুবনডাঙার ঘাটে। কেন হল, কীভাবে হল, কেউ কিছু জানে না। ভুবনডাঙার মানুষেরা কিছুদিন হাহাকার করল বাউলের জন্য। তারপর সবাই তাঁর কথা ভুলে গেল। তবে বাউলের গান থেকে গেল মানুষের কণ্ঠে কণ্ঠে। ভুবনডাঙার বিশ্বাসী মানুষেরা এখনো নদীতে মাছ ধরে, ক্ষেতে ফসল ফলায়। রাতে মশাল জ্বালিয়ে বাউলের গান গাইতে গাইতে নৌকা তৈরী করে।

 

 

 

স্বপন বিশ্বাস
জন্মঃ ৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৪। কৃষি বিষয়ে স্নাতক ও ব্যবসা ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের শুল্ক বিভাগে কৃষি বিশেষজ্ঞ হিসাবে কর্ম্মরত। বসবাস নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র। প্রকাশিত গ্রন্থ একটি।
ইমেইলঃ swapan64@gmail.com

 

প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ : মেহেরাজ হাসান শিশির

{ভুবনডাঙার গল্প [বঙ্গীয় শব্দকোষ (শ্রী হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়), বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ ও ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক ভাষাদর্শন (কলিম খান-রবি চক্রবর্ত্তী) অনুসৃত] চারবাক-এর বানান রীতিতে প্রকাশিত হল।
— সম্পাদকীয়}

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার