চাচাকাহিনী (পর্ব্ব– ১) || কামরুল হাসান

0

এক—
শুক্রবার সকালের ঢাকা মানে কর্ত্তারা ঘুমাচ্ছে, ড্রাইভার সব ছুটিতে। রাস্তাঘাট বিদেশের মত ফাঁকা। মিরপুর থেকে বারিধারা যেতে সাকুল্যে ৩০ মিনিট লাগল, তাও লাগত না যদি ‘ঘুটি কাকলি আসিলে আর্মি ষ্টেডিয়াম ঘুরিয়া যান’ না থাকিত। আবাসিক এলাকাগুলোর ভেতর গুলশান, বনানীর চেয়েও বারিধারা আমার কাছে অভিজাত মনে হয়, এর কারণ এই নয় যে শক্তিধর দেশগুলোর দূতাবাস রয়েছে, বরং আরও বেশী এজন্য যে এটি একটি বিশুদ্ধ আবাসিক এলাকা, একটিও মুদী দোকান বা কর্পোরেট হাউজ নেই।

সেই সুনসান এলাকায় জনাব জিয়াউল কুদ্দুস ফ্লাট কিনেছিলেন তার জীবনের লাফার্জ অধ্যায়ে। একদা বিপ্লবী, তারও আগে মুক্তিযোদ্ধা মানুষটী বহুকাল ধরেই গৃহস্থ। গ্রামে গেরস্ত বলতে যা বোঝায় তা কিন্তু নয়, যদিও ফরহাদাবাদে উত্তরাধিকারসূত্রে পৈতৃক সম্পত্তি যা পেয়েছেন, তা দিয়ে গেরস্থালী করা যায়। নানার কাছ থেকে ভোলার চরফ্যাশনে যা জমিজমা পেয়েছেন তা দিয়ে কৃষিখামার গড়াও সম্ভব, কিন্তু এসবে মন নেই তার। এখন তিনি কাটিরহাঁটে তার দাদার প্রতিষ্ঠিত শতবর্ষী স্কুলকে আধুনিক করার প্রকল্পে নিবেদিত। ফলে এই যে অযুত সম্ভার, বাহারী আসবাব আর সৌখিন পানিকল, তিমি মাছের মেরুদণ্ডের হাড় থেকে দেয়ালের পেইন্টিং, পূর্ব্বপুরুষের বড় বড় বাঁধাই করা ছবির পাশে পুরানো তাত্ত্বিকগুরু মাওসেতুংয়ের আদি ও আসল চীনা ফ্রেমে বাঁধানো ছবি, তৈজসপত্র ও এ্যান্টিক, আর সারা বাড়ী জুড়ে বই আর বই এসব ছেড়ে তিনি থাকেন কাটিরহাঁটে। সেই স্কুলে নতুন ভবন ওঠবে, তিনি একজন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দিবেন। খুঁজে পেয়েছেন বিমান বাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কোয়াড্রন লিডারকে, যিনি জীবনের শেষ প্রকল্প হিসেবে কাটিরহাঁট স্কুলের সাথে সম্পৃক্ত হতে চান। স্কোয়াড্রন লিডার শুনে আমি ভাবি নিশ্চয়ই ঈগল পাখীর মত আকাশে ওড়েছেন। পরে শুনলাম তিনি ডাঙাতেই ছিলেন। চাচার সাথে মিল হল তারা একই বয়সী।

খাবার টেবিলই ইন্টারভ্যু বোর্ড, সেটা এত কিছুতে ঠাসা যে খাবার দাবার, বাসনপত্র রাখার জায়গা নেই। বইয়ের প্যাকেটই সাত-আটটী, অন্যান্য জিনষপত্রের প্যাকেটও আছে, তবে খোলা হয় নাই। অনলাইনে অর্ডার দেওয়া ছিল, ডেলিভারিও হয়েছে সময়মত, গ্রাহকের অনুপস্থিতিতে তারা জমা হয়েছিল। এখন মুক্ত হইবার জন্য ডাইনিং টেবিলের ওপর জড়ো হয়েছে। সেও মালিকের ইচ্ছা। কবে প্রদীপ ঘষিয়া দৈত্য বাহির করেন।
টেবিলের ওই আয়োজনই বলে দেয় আজ আর খাওয়া-দাওয়া হবে না, আজ কেবল কথার ভোজ। পরে অনুমানটী সত্য প্রমাণিত হয়েছে, সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্য্যন্ত কপালে জুটেছিল দুকাপ চা ও কেক। কিছু বাদাম-টাদামও ছিল, তবে ভেঁতো বাঙালীর কি ভাত না হলে চলে? চাচা যখন দেখিলেন ভাতিজা ভাতের খোঁজে বাক্যের মধুর ভোজ ছেড়ে যেতে উদ্যত, তখন তিনি ছুটা বুয়াকে ইমার্জেন্সি কল করিলেন। ফলে বেলা সাড়ে চারটায় পাউরুটী ও ডিম পোচ জুটিল। তো ইন্টারভ্যুতে ভাতিজা বা আপন নামের আপন নয়, কাজিন ভাইটির কাজ কী? আমরা হলাম ইন্টারভ্যু বোর্ডের মেম্বার। আমাদের কাজ হইল চাচার গল্প শোনা আর মাথা দোলানো।

যিনি ইন্টারভ্যু দিতে আসিয়াছেন তিনিও ভুলিয়া গেলেন সেখানে কী কাজ তাহার। গল্পের স্রোতে ডুবিয়া তাহারও মনে হইল, তিনিও বোধকরি গল্প শুনিতেই ডাক পাইয়াছেন। আর শুধু কি গল্প, কখনো উর্দু শায়ের, কখনো রবি ঠাকুরের গান, কখনো মার্ক্স-এঙ্গেলসের উদ্ধৃতি, কখনো হযরত মোহাম্মদের বাণী, কৌতুক, রাজনীতি, সমাজ বিশ্লেষণ, বাক্যস্রোত আর থামে না। তার গল্পের ভাণ্ডারও অফুরন্ত। আমরা যারা পুরনো শ্রোতা তারা মনে মনে গুণী এই কৌতুকটী কততমবার শুনিলাম, ঐ দার্শনিক উক্তিটী কততমবার উচ্চারিত হল, বা এই ধাঁধাটীর কী উত্তর। যিনি প্রথমবার শোনেন তার তো মাথা বনবন, কসন শনশন, তিনি আরব্যোপন্যাসের জাদুর কার্পেটে চড়ে টালমাটাল, এই বঙ্গভূমে থাকেন তো পরমুহূর্ত্তেই ইরান তুরান পার হয়ে নিউইয়র্ক চলে যান। কথকের জ্ঞানের বিস্তৃতি সমুদ্রের মত ঠেকে, মনে হয় আমেরিকান কংগ্রেস লাইব্রেরীর এক সাক্ষাৎ এনসাইক্লোপেডিয়ার সমুখে তিনি উপস্থিত। ভড়কে তো গেছেন বটেই, অতঃপর মুগ্ধতা আর সবশেষে ভক্ত বনে যাওয়া। নিউইয়র্ক আর আমেরিকার উদাহরণ টানা হল কারণ চাকরিপ্রার্থী ওখানে কয়েকবছর কাটিয়েছিলেন।

চাচার বয়ান বাণিবদ্ধধ্বনিধারণে (ওটা টেপ রেকর্ডারের বাংলা) ধারণ করতে পারলে ভাল হত। নইলে চেঙ্গিস খান থেকে সম্রাট আকবর, সিরাজুল আলম খান থেকে সিরাজ সিকদার (মহিউদ্দিন আহমেদ প্রণীত বই দুখানা, হ্যারল্ড ল্যাম্ব লিখিত চেঙ্গিস খানের জীবনীর অনুবাদ, ভারতবর্ষে মুসলিম শাসন বইগুলোও হাতের কাছেই দেখতে পাচ্ছিলাম) ইতিহাস থেকে রাজনীতি, ইংরেজ শাসন থেকে সাম্প্রতিকালে দুর্নীতিবাজদের বিদেশে টাকাপাচার— কতবিচিত্র বিষয় যে উঠে আসে তা মগজে ধারণ করা অসম্ভব না হলেও কঠিন। বেগতিক দেখে আমি মোবাইলে কিছু কিছু পয়েণ্ট টুকে নেই, বেকুবের মত আজ সঙ্গে কোন নোটবই রাখি নাই, ভাবখানা এমন যে স্মৃতিই শ্রেষ্ঠ নোটবুক, চোখই শ্রেষ্ঠ ক্যামেরা। তবে আল্লার দুনিয়ায় এই যে একখান যন্ত্র মানুষ আবিষ্কার করেছে, যার নাম স্মার্টফোন, সে তো একের ভিতর তিন বা পাঁচ নয়, একের ভিতর একশ। চাচা বলিলেন, আমরা এক ক্ষুদ্র জীবনে কত কিছু দেখে গেলাম। সবচেয়ে বড় ঘটনা হল মুক্তিযুদ্ধ দেখা। ওই যে কম্পিউটার বা এই যে মোবাইল ফোন এ যেন বহুশতাব্দী পাড়ি দেওয়া। আমরা তো আসলে, সে বিচারে, এক সুদীর্ঘ জীবনই পেয়েছি। যে পরিবর্ত্তন দেখতে আমাদের পূর্ব্বপুরুষদের কয়েক শতাব্দী লেগেছে, আমরা তা দেখতে পাচ্ছি দু-এক বছরের মধ্যে। এ জীবন কি সুদীর্ঘ নয়? আমরা মাথা নাড়ি, কেননা ওটাই আমাদের কাজ। আমি মাঝেমাঝে বককথামাঝেকাকস্বর হবার চেষ্টা করি, কিন্তু সফল হই না।

তিনি বললেন, বাঙালী কখনো নিজেকে শাসন করে নাই, সে শাসিত হয়েছে। ফলে তার ভেতরে তৈরী হয়েছে ভৃত্য মানসিকতা, কার্ল মার্ক্স যাকে বলেছেন ‘দাসমনোবৃত্তি।’ আমরা বসের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি, নিজেরা এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। আমি এ সুযোগে বিবিসির Hard Talk এ মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ডা. মাহাথীর মোহাম্মদের সাক্ষাৎকারের একটী চুম্বক অংশ বলি। প্রশ্নটী ছিল, ‘মালয়েশিয়া তো ইউরোপের অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশগুলোর মত না তবু আপনি টুইন টাওয়ার কেন বানালেন?’ মাহাথীরের উত্তর ছিল, ইউরোপীয়রা এশীয়দের নীচু চোখে (look down) দেখে, আমি টুইন টাওয়ার বানালাম, যাতে তার ঊর্ধ্বপানে (look up) তাকায়। চাচা তারিফ করিয়া কহিলেন, আমার ভাতিজা না? তিনি উদাহরণ টানিলেন। তাদের বাসায় নাজু নামের একজন কাজ করত, নাজুর মা কাজ করেছে চাচার মায়ের বাসায়, তার মা কাজ করত চাচার নানীর বাসায়, নানীর মাও সে বাসায় কাজ করত। তাহলে চার-পাঁচ প্রজন্ম ধরে তাদের উন্নতি হয়নি, পেশার বদল ঘটেনি। ব্যক্তিত্বের বিকাশ তাহলে কী করে ঘটবে?

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ইতিহাসে এই প্রথম আমরা নিজেরা শাসন করার সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু আমরা তো জানি না কী করে শাসন করতে হয়। নিউইয়র্কে বা লণ্ডনে কি গুন্ডা নাই? আছে। কিন্তু আমাদের সমস্যা হল আমরা গুণ্ডাদের আইনপ্রণেতা বানাই। তিনি ইংল্যাণ্ডের হাউজ অব লর্ডসের কথা বললেন, লর্ড না হলে সেখানে সদস্য হওয়া যায় না। লর্ড ক্লাইভকে তারা ভালভাবে গ্রহণ করেনি। ভারতে তার দুষ্কর্ম্মের জন্য ক্লাইভ শাস্তি পেয়েছেন। পরে সে আত্মহত্যা করে। অথচ ক্লাইভ ছিল ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কেরাণী। কেরাণী হয়ে ভারতবর্ষে এসেছিল, ফিরে গেছে লর্ড হয়ে, ভারতের শাসক হয়ে। তাদের জাতীয় সঙ্গীত কী?

Britania rules the waves

শাসন করার আকাঙ্ক্ষা তাদের জাতীয় সঙ্গীতে প্রোথিত। ওইটুকু দেশ, শাসন করল গোটা দুনিয়াকে! এটা আশ্চর্য্য নয়? সেজন্যই তো বলা হত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে সূর্য্য অস্ত যায় না। চাচা নিজের নানার উদাহরণ দিলেন। চাচার নানা জাতীয় মঙ্গলের কবী মোজাম্মেল হক পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে দুবার সদস্য (MLA) ছিলেন। সেসময়ে যারা পার্লামেণ্টে যেতেন তারা সৎ ও শিক্ষিত ছিলেন, তাদের নৈতিকতা ও আদর্শ ছিল।

একবার ঢাকা কলেজে কিছু পাকিস্তানপন্থী গোড়া ছাত্র কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমানের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষ জালালউদ্দিনের কাছে নালিশ করতে গেলেন। কী অভিযোগ? শওকত ওসমান ক্লাসে ধর্ম্মবিরোধী কথাবার্ত্তা বলেন। অধ্যক্ষ ছিলেন তখমায়ে পাকিস্তান। তিনি অভিযোগকারী ছাত্রদের ডেকে বললেন, ‘আমি তো ওনাকে হাতেপায়ে ধরে ঢাকা কলেজে রেখছি, তাকে তো পড়াতে রাখিনি। বিশ্ববিদ্যালয় তাকে নিয়ে যেতে চায়। তিনি ঢাকা কলেজের অলঙ্কার। তোমাদের যদি পছন্দ না হয়, তোমরা টিসি নিয়ে চলে যেতে পার।’

দুই—
কাটিরহাঁট স্কুল ১০০ বছরের পুরানো। অতীতে কুমিল্লা বোর্ডে ফার্স্ট সেকেণ্ড স্ট্যাণ্ড করেছে এ স্কুলের ছাত্ররা। এরপর স্কুলটী তার মান ধরে রাখতে পারেনি। চাচার লক্ষ্য হল কাটিরহাঁট স্কুলকে সামনের সারিতে নিয়ে আসা, ভাল ছাত্র তৈরী করা। তিনি বললেন, ভাল মানুষ হতে হলে যেমন ভাল মানুষের আদর্শ অনুসরণ করা প্রয়োজন, তেমনি ভাল স্কুলের আদর্শ, সিস্টেম থেকে কাটিরহাঁট স্কুল শিখতে পারে। যেমন ক্যাডেট কলেজগুলো একটা সিস্টেমে চলে। আমি বল্লাম, ব্রিটিশ আমলে সারাভারত জুড়ে প্রতিষ্ঠিত মিশনারি স্কুলগুলোর কথা। স্কোয়াড্রন লিডার সঠিকভাবেই বললেন, এটা হল benchmarking। তিনি যোগ করলেন, ক্যাডেট কলেজগুলোতে শিক্ষাটী ধারাবাহিক (continuous learning), ক্লাসে যেমন পাঠদান চলে, ক্লাসের বাইরেও তা চলে। চাচা বললেন, অর্থাৎ সর্বাঙ্গীন বিকাশ।

চাচা বললেন, আমাদের মিশন হল শতবর্ষী স্কুলটিকে আধুনিক করতে হবে। ২০৩০ সালে যারা স্কুল থেকে বেরুবে তারা কেমন পৃথিবীর মুখোমুখী হবে, তা আমাদের ভাবতে হবে, সেভাবেই তাদের গড়তে হবে। এজন্য দরকার exposure। তিনি বললেন কাটিরহাঁট স্কুলের বিশজন শিক্ষকের দশজন কখনো ঢাকায় আসেনি। তাহলে exposure হবে কীভাবে? আধুনিকায়ন বলতে আমরা কী বুঝি তা তাদের নিজেদের উপলব্ধি করতে হবে।

চাচা ইংল্যাণ্ডে একটী স্কুল দেখেছেন ৩০০ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত। ভাবা যায়? তিনি একটী চলচ্চিত্রের কথা বললেন Scent of a Woman যেখানে স্কুল কেমন হওয়া উচিৎ তা নিয়ে একটা বক্তৃতা আছে। আজ স্কুলগুলো মুরগীর খোঁপের মত। মাঠ নেই। মাঠ ছাড়া একটী স্কুল হতে পারে?

আমি এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এডুকেশনাল সাইকোলজি কোর্সে একটী ভিডিও দেখেছিলাম, যেখানে একজন বিখ্যাত মানুষ বলছেন, We don’t need more schools, we need more playgrounds। আজকের শহরের শিশুদের খেলার মাঠ নেই। ‘আপন’ একটী অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন। তার ছেলে আগে একটী স্কুলে পড়ত, কোনো মাঠ ছিল না। তাকে যখন আদমজী ক্যাণ্টনমেণ্ট স্কুলে ভর্ত্তি করতে নেওয়া হল, মাঠ দেখে মা-বাবার হাত ছাড়িয়ে ছেলেটী যে একটা দৌড় দিয়েছিল, সেই দৃশ্য স্মৃতি হয়ে লেপটে আছে বাবার চোখে। একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেমন হওয়া উচিৎ তা নিয়ে জনাব জিয়াউল কুদ্দুস একটী প্রবন্ধ লিখেছেন। স্কুল নিয়ে তার চিন্তাশীল মস্তিষ্কটী মগ্ন।

ভাল স্কুল করতে হলে ভাল নেতৃত্ব দিতে হবে। তাহলে ভাল নেতা কে? তিনি সমুখে থাকা স্কোয়াড্রন লিডারকে জিজ্ঞাসা করিলেন। তা তিনি করিতেই পারেন, কারণ মাঝে মাঝে প্রশ্ন না করলে তিনি তো ভুলেই যাবেন এখানে কী উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছেন। উত্তর করা তার কর্ত্তব্য। কিন্তু চাচা যখন সে প্রশ্ন আমাকে বা আপনকে করেন তখন আমরা ভাবি, আমরা কি চাকরী লইব না কি? সুতরাং উত্তর দেবার গরজবোধ করি না। চা না হয় দু’কাপ পান করেছি, দুই পিস কেক খেয়েছি, তাই বলে কি যে উত্তর কোন সুবিধা এনে দিবে না তা দিবার প্রয়োজন কী? স্কোয়াড্রন লিডার পদের ভেতরেই তো লিডার শব্দটী লুকিয়ে আছে। তিনি কহিলেন, A leader is a person to whom others come to solve their problems। চাচা প্রত্যুত্তর করিলেন, If leader himself is a problem, then? একজন নেতার কী কী গুণাবলী থাকা প্রয়োজন তা বোঝাতে গিয়ে তিনি ঠাকুরের স্মরণাপন্ন হলেন। এই ঠাকুর হলেন রবি ঠাকুর, যাকে বারংবার অর্ঘ্য দিতে হয়, যার প্রসাদ না পেলে বাঙালীর পূণ্য মেলে না। ঠাকুর লিখেছেন,

“বীর্য কার ক্ষমারে করে না অতিক্রম
কাহার চরিত্র ঘেরি ধর্মের সুকঠিন নিয়ম,
ধরিয়াছে মাণিক্যের অঙ্গদের মত,
মহাশ্চৈর্যে আছে নম্র, মহাদৈন্যে কে হয়নি নত;
সম্পদে কে থাকে ভয়ে, বিপদে কে একান্ত নির্ভীক,
কে পেয়েছে সবচেয়ে কে দিয়েছে তাহার অধিক।
কে লয়েছে নিজ ভালে রাজভালে মুকুটের সম
সবিনয়ে সগৌরবে ধরা মাঝে দুঃখ মহত্তম।

কহ মোরে, হে! দেবর্ষি, কহ তার পূণ্য নাম,
নারদ কহিলা ধীরে, অযোধ্যার রঘুপতি রাম!”

আমি লহিলাম, কবী যে দ্রষ্টা তা বোঝা যায় এ কবিতায়। কারণ এর মধ্যে লিডারশীপের প্রথম দুটী থিওরী Trait Theory (Leaders are born) এবং Behavioural Theory (Leadership can be learned) পাওয়া যাচ্ছে। নেতার কী কী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বা গুণ (traits) থাকা উচিৎ, তা যেমন আছে, তেমনি সংকটে নেতা কী ভূমিকা (behaviour) নিবেন, তাও বলা আছে। চাচা কহিলেন, নেতা যিনি হবেন, তিনি তার কাজটুকু সুচারুরূপে সম্পন্ন করিবেন, দায়িত্ব নিবেন ও তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করিবেন। তার অনিবার্য্য মনে পড়িয়া গেল সেই দুর্দ্দান্ত লাইনগুলো, যা আমাদের ঠোঁটস্থ আর যা শুনলে আমাদের স্কুলজীবনে ভাবসম্প্রসারণের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায়, পরিচিত গানে যেভাবে আমরা কণ্ঠ মেলাই, সেইরূপ কয়েকটী কাব্যমণিমুক্তোর একটী ঝলসে ওঠে,

“কে লইবে মোর কার্য কহে সন্ধ্যারবি
শুনিয়া জগৎ রহিল নিরুত্তর ছবি,
মাটির প্রদীপ ছিল, কহিল সে স্বামী,
আমার যেটুকু সাধ্য করিব তা আমি।”

আমি বল্লাম, এ হল, জাপানীরা যাকে বলে Kaizen, তা। ‘আমার যেটুকু সাধ্য করিব তা আমি।” বুঝলাম আজ চাচা বারংবারই ঠাকুরঘরের দরোজায় উঁকিঝুঁকি মারিবেন, আর আমরা কলা খাইয়াছি কি না তাহার পরীক্ষা লইবেন। প্রথম কবিতার পরীক্ষায় গোল্লা পাইয়াছিলাম, পরেরটায় টেনেটুনে পাশ নয়, হায়ার সেকেণ্ড ডিভিশন।

তিন—
আমার পরিচয় দিতে গিয়ে চাচা যখন বললেন, আমি এ্যারোনটিকাল ইঞ্জিনিয়ার, তখন স্কোয়াড্রন লিডারের বিস্ময়ের সীমা-পরিসীমা রইল না। তাকে আশ্বস্ত করে বলি, I’m a non practicing engineer। অবশ্য এককালে বিমানে চাকরী করেছি, পাইলটদেরও পড়িয়েছি। তিনি যেহেতু এয়ারফোর্সে ছিলেন, তাই জানাই যে বিমানে যোগদানের অব্যবহিত পরে আমার এয়ারফোর্সে যোগ দেবার সুযোগ এসেছিল। আমি সিভিলিয়ান সংস্থাটী বেছে নেই, জানি না ভুল করেছি কি না। আমাকে অবাক করে দিয়ে বিমানবাহিনীর প্রাক্তন অফিসারটী বলেন, না, ভুল করেননি। ঘরপোড়া গরুই জানে ঘরের ভিতর আগুনের তাপ কী উত্তাপ ছড়িয়েছিল, আমি তো ভেবেছিলাম সিঁদুরে মেঘ।

আমার মনে পড়ল, একবার জাপানী যাত্রীবাহী বিমান হাইজ্যাককে কেন্দ্র করে বিমানবাহিনীতে বিদ্রোহ ঘটেছিল। তখন জেনারেল জিয়া ক্ষমতায়। সে বিদ্রোহ নিষ্ঠুরভাবে দমন করা হয়েছিল, হত্যা করা হয়েছিল অনেক বিমান সেনা ও অফিসারকে। বিদ্রোহীদের সাথে মারা পড়েছিল অনেক নির্দ্দোষ অফিসার। চাচা বললেন, ‘It was a time of killing spree’। পথের কাঁটা সরাতে জিয়াউর রহমান ছিল ধাতুর মত শীতল ও কঠিন। সেসময়ে আপনি কোথায় ছিলেন? আমার কৌতুহলের উত্তরে তিনি বললেন, আমার ভাগ্য ভাল, সেসময়ে আমি চট্টগ্রামে ছিলাম। এ যেন ভাগ্যের সাপলুডু খেলা, ঘুটি ঢাকা আসিলে সাপের পেটে চলিয়া যাইবে।

রুডইয়ার্ড কিপলিং কে ছিলেন? সাহিত্যের জগতে স্কোয়াড্রন লিডারের কেমন পরিভ্রমণ, কতখানি জানাশোনা একটু পরখ করতে চাইলেন যেন। তিনি স্মরণ করতে পারলেন না। আমরা ইন্টারভ্যু নেব কী, ইন্টারভ্যু দেই। আমরা মানে আপন ও আমি। কারণ পরীক্ষার্থী ব্যর্থ হলেই প্রধান পরীক্ষক সহকারী পরীক্ষকদের দিকে ঘুরে তাকান। মুহূর্ত্তে আমরা টেবিলের এ প্রান্ত থেকে বিপরীত প্রান্তে চলে যাই, এসেছি পরীক্ষা নিতে, এখন পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। ইজ্জত বাঁচাতে বলতেই হয় কিপলিং ইংরেজ কবী যার জন্ম হয়েছিল ভারতের মুম্বাইয়ে ব্রিটিশ শাসনামলে। চাচা শুধাইলেন If কবিতাতে কিপলিং কী বলতে চেয়েছেন? কিপলিংয়ের বিখ্যাত কিছু কবিতার কথা মনে পড়ল, If মনে পড়ল না। অথচ If হল কিপলিংয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবিতা। এটী সর্ব্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় ইংরেজী কবিতাগুলোর একটী। ১৯০৭ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়া রুডইয়ার্ড কিপলিং হলেন ইংরেজী সহিত্যে ভিক্টোরিয়ান যুগের শেষভাগের কবী।

চাচার তাৎক্ষণিক নির্দ্দেশ ইহা উইকিপেডিয়া থেকে বাহির কর। দক্ষিণ আফ্রিকায় একজন ইংরেজ নেতা তার অনুসারীদের বিদ্রোহে উদ্দীপ্ত করতে ব্যর্থ হন। তার মুখের কথা যেন কিপলিং কবিতায় লিখছেন। এই অনবদ্য কবিতাটিতে কিপলিং একজন প্রকৃত মানুষের কী কী গুণাবলী থাকা বাঞ্চনীয় তা বলেছেন। এই মানুষটী একজন নেতা। নেতৃত্ব নিয়ে যেহেতু কথা হচ্ছিল তাই এই কবিতার অবতারণা। চাচার ক্রস রেফারেন্সের পাণ্ডিত্য দেখে আমি বিমোহিত। কবিতাটী এতই প্রাসঙ্গিক যে তা পুরোটাই তুলে ধরছি।

If
— Rudyard Kipling

If you can keep your head when all about you
Are losing theirs and blaming it on you,
If you can trust yourself when all men doubt you,
But make allowance for their doubting too;
If you can wait and not be tired by waiting,
Or being lied about, don’t deal in lies,
Or being hated, don’t give way to hating,
And yet don’t look too good, nor talk too wise:

If you can dream— and not make dreams your master;
If you can think— and not make thoughts your aim;
If you can meet with Triumph and Disaster
And treat those two impostors just the same;
If you can bear to hear the truth you’ve spoken
Twisted by knaves to make a trap for fools,
Or watch the things you gave your life to, broken,
And stoop and build ’em up with worn-out tools:

If you can make one heap of all your winnings
And risk it on one turn of pitch-and-toss,
And lose, and start again at your beginnings
And never breathe a word about your loss;
If you can force your heart and nerve and sinew
To serve your turn long after they are gone,
And so hold on when there is nothing in you
Except the Will which says to them: ‘Hold on!’

If you can talk with crowds and keep your virtue,
Or walk with Kings— nor lose the common touch,
If neither foes nor loving friends can hurt you,
If all men count with you, but none too much;
If you can fill the unforgiving minute
With sixty seconds’ worth of distance run,
Yours is the Earth and everything that’s in it,
And— which is more— you’ll be a Man, my son!

বিমানবাহিনীর ভূতপূর্ব্ব অফিসারকে আরও কিছু সাহিত্য বিষয়ক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে তিনি উপসংহার টানলেন, তবে তা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া নয়, বরং দীর্ঘ অবলোকনের সারাৎসার, আর্মির লোকেরা সাহিত্য পড়ে না। একথা বলেই তার মনে পড়ে গেল, লে. কর্নেল জিয়াউদ্দিন, যার সাথে তিনি দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছেন, তিনি পড়াশোনা জানতেন, প্রচুর বই পড়তেন। অর্থাৎ ব্যতিক্রম আছে।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে চাচা এখন আমাদের তিনজনেরই ইন্টারভ্যু নিচ্ছেন। প্রশ্ন করলেন, রামায়ন কে লিখেছেন? যাকে প্রশ্ন করা হল তার মনে পড়ল না, আমি উত্তর দিলাম বাল্মিকী। কোথা থেকে এই নাম এল? উত্তর তিনি নিজেই দিলেন বাল্মিক মানে উইপোকা। বাল্মিকী তপস্যায় বসে এতই ধ্যনমগ্ন ছিলেন যে তাঁর চারপাশে উইপোকা ঢিবী তৈরী করে, প্রায় আচ্ছাদিত করে ফেলে, তবু তাঁর ধ্যান ভাঙেনি। ধ্যান ভেঙে একদিন তিনি ভক্ত ভরদ্বাজকে নিয়ে গঙ্গায় স্নান করতে যাচ্ছিলেন। পথে তমসা নামের এক পাহাড়ী ঝর্ণার জলের স্বচ্ছতা দেখে এত বেশী মুগ্ধ হন যে মনঃস্থির করেন তমসার জলে স্নান করবেন। সেসময়ে তিনি একজোড়া ক্রৌঞ্চমিথুনকে মিলনরত অবস্থায় দেখেন। কেন ওই নাম? এরা জোড়ায় জোড়ায় থাকে। যখন শিকারীর ব্যাধে বিদ্ধ হয়ে পুরুষ পাখীটী তার মারা গেল। তখন সঙ্গীকে হারিয়ে স্ত্রী পাখীটী আকাশ জুড়ে উড়ছিল আর বিলাপ করছিল। এই দৃশ্য বাল্মিকীর মনে ক্রোধের উদ্রেক করে। তিনি শিকারীকে অভিশাপ দিলেন। তাঁর মুখনিঃসৃত হল দুটী শ্লোক। এই শ্লোক দুটীকে বলা হয় আদি শ্লোক। তিনি দেবতা ব্রক্ষ্মার আশীর্ব্বাদ পেলেন। স্বর্গ থেকে নারদ এসে তাকে পরামর্শ দেয়, তুমি কবিতা লেখ। কী নিয়ে লিখব, তার এই প্রশ্নে নারদ বলে, সবাই যা নিয়ে লেখে, দেবতাদের স্তুতি, তাই লেখ। বাল্মিকী বলেছিলেন, আমি মানুষের স্তুতি করব, দেবতার নয়। তিনি নায়ক হিসেবে অযোধ্যার রাজা রামকে বেছে নিলেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতাটী, যেখানে রঘুপতী রামের নেতৃত্ব দেবার গুণাবলী ভাষা ও ছন্দে বর্ণিত সে প্রসঙ্গে চাচা এ কাহিনী আমাদের শোনালেন। রামায়ন হল পৃথিবীর প্রথম মহাকাব্য যাতে শ্লোক ও ৪ লক্ষ ৮০ হাজার শব্দ রয়েছে। আয়তনে তা আরেক মহাকাব্য ইলিয়াডের চারগুণ, তবে মহাভারতের এক চতুর্থাংশ। মহাভারতও মহাকাব্য (epic)। এ প্রসঙ্গে চাচা বললেন, পৃথিবীতে কাব্য আছে সংখ্যাতীত, মহাকাব্য হাতেগোনা।

(চলবে …)

 

 

 

কামরুল হাসান
জন্ম ২২ ডিসেম্বর, ১৯৬১ সালে বাংলাদেশের শরীয়তপুর জেলায়।

তিনি আশির দশকের কবী। প্রথম কাব্য ‘সহস্র কোকিলের গ্রীবা’ প্রকাশিত হয় ১৯৯১ সালে। এরপরে আরও ১১টি কাব্য প্রকাশ করেন। ২০১২ সালে প্রকাশিত হয় ‘নির্বাচিত কবিতা’। কবিতার পাশাপাশি গল্প ও কবিতা বিষয়ক প্রবন্ধ লেখেন এবং বিদেশী সাহিত্য থেকে অনুবাদ করেন। ২০০৫ সালে প্রকাশিত হয় একমাত্র গল্পগ্রন্থ ‘মধ্যবিত্ত বারান্দা ও অন্যান্য গল্প’। ২০১৬ সালে প্রকাশিত হয় প্রবন্ধের বই ‘প্রহরের প্রস্তাবনা’। ভ্রমণপিপাসু এ কবী সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুপ্রচুর ভ্রমণকাহিনী লিখছেন। এপর্য্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে চারটি ভ্রমণকাহিনী। ছাত্রাবস্থায় তার কবিতা সাপ্তাহিক ‘দেশ’ ও ত্রৈমাসিক ‘জিজ্ঞাসা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তার অনুদিত গ্রন্থের সংখ্যা দুই। ২০০৩ সালে সমীর রায়চৌধুরী ও তুষার গায়েনের সাথে সম্পাদনা করেন দুই বাংলার যৌথ সংকলন Post Modern Bangla Poetry 2003। তিনি বেশ কয়েকবার আমন্ত্রিত কবী হিসেবে দক্ষিণ এশীয় সাহিত্য উৎসবে যোগ দিয়েছেন। এছাড়া হায়দ্রাবাদ আন্তর্জাতিক পোয়েট্রি ফেস্টিভাল, ২০১৭ ও কাঠমাণ্ডু আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসব, ২০১৯ এ আমন্ত্রিত কবী হিসেবে যোগ দেন।

কবিতার জন্য পেয়েছেন ‘খড়গপুর বইমেলা সম্মাননা স্মারক (২০০৫), ‘মৈনাক সন্মাননা স্মারক ‘(২০২১), ‘কবিকুল, কক্সবাজার কবিতা সম্মাননা স্মারক’ (২০২১)। ছাত্রজীবনে মেধাবী কামরুল হাসান ভারতের বিখ্যাত আইআইটি খড়গপুর থেকে প্রকৌশলবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। পরবর্ত্তী পড়াশোনা ব্যবসায় প্রশাসনে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে এমবিএ ডিগ্রী অর্জ্জন করেন। পেশাগত জীবনে বহুবার চাকরী বদল করেছেন। কর্পোরেট জগৎ থেকে শিক্ষকতায় যোগ দেন। গত ১৫ বছর ধরে পড়াচ্ছেন ইষ্ট ওয়েষ্ট ইউনিভার্সটিতে। তিনি বিবাহিত ও চার সন্তানের জনক।

 

প্রকাশিত গ্রন্থের তালিকা
কবিতা
সহস্র কোকিলের গ্রীবা (১৯৯১)
প্রান্তসীমা অনন্তদূর (১৯৯২)
ছুঁলে বিদ্যুল্লতা, না ছুঁলে পাথর (১৯৯৩)
পাখি নই আশ্চর্য মানুষ (১৯৯৪)
দশদিকে উৎসব (১৯৯৭)
বৃক্ষদের শোভা দেখে যাব (২০০০)
রূপচৈত্রের অরণ্যটিলায় (২০০৪)
পৃথিবীর প্রতিচ্ছবি আমার গ্রামে (২০০৭)
ঈশ্বরের নিজ গ্রহ (২০০৯)
ঘুমপ্রহরের মোমকুহক (২০১০)
নির্বাচিত কবিতা (২০১২)
খিলানের নিচে আলো (২০১৪)
সহস্র চরণের ধ্বনি (২০১৫)
বাছাই ১০০ কবিতা (২০১৭)

ছোটগল্প
মধ্যবিত্ত বারান্দা ও অন্যান্য গল্প (২০০৫)

ভ্রমণকাহিনী
বিলেতের দিনলিপি (২০১৭)
আমির তিমুরের দেশে (২০১৮)
মহাদেশের মতো এক দেশে (২০১৯)
সিমলা মানালির পথে (২০২০)
হায়দ্রাবাদের যাত্রী (২০২১)

প্রবন্ধ
প্রহরের প্রস্তাবনা (২০১৫)
কবিতার মায়াহরিণ ও কবির মঙ্গলযাত্রা (প্রকাশিতব্য)

অনুবাদ
Poems of Mujib Erom (2014)
The Blind God (Poems of Tithi Afroz) (2020)

সম্পাদনা
Postmodern Bangla Poetry 2003
(with Tushar Gayen and Samir Roychowdhury)

 

প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ : মেহেরাজ হাসান শিশির

{চাচাকাহিনী [বঙ্গীয় শব্দকোষ (শ্রী হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়), বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ ও ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক ভাষাদর্শন (কলিম খান-রবি চক্রবর্ত্তী) অনুসৃত] চারবাক-এর বানান রীতিতে প্রকাশিত হল।
— সম্পাদকীয়}

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার