চিত্রশিল্পে উত্তরাধুনিকতার প্রবেশ || জবা রায়

0


শিল্প সম্পর্কিত ধারণাগুলো মানব ইতিহাসের বিবর্ত্তনের সাথে সাথে পরিবর্ত্তিত ও বিকশিত হয়েছে। প্রাচীনকালে শিল্পতত্ত্ব দর্শন চিন্তা হিসেবেই স্থান পেয়েছিল। দর্শনের বহু আগেই শিল্প কর্ম্মের ইতিহাস শুরু হয়েছিল, সেজন্য প্রাচীনকালে দর্শন শাস্ত্রের সূচনার পর পরই তার মধ্যে বিদ্যমান শিল্প-সাহিত্যের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। শিল্প শব্দটীর ভেতর অক্ষরগুলোকে (ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক শব্দার্থ মতে) বিশ্লেষণ করলে দাঁড়ায়— শ = সার্ব্বিক শক্তিযোজন, ই = সক্রিয়ন/গতিশীল, ল = লালন, প = পালক। অর্থাৎ কোন কিছুর মধ্যে ধ্রুব/সার্ব্বিক শক্তি লালিত বা পালিত অবস্থায় থাকলে সেটী শিল্প হয়ে ওঠে। শিল্প কীভাবে হয়ে ওঠে বহু তাত্ত্বিক বহু পন্থাতে ব্যাখ্যা করেছেনও বটে। কেউ বলেছেন কোনকিছু সুন্দর হলেই তা শিল্প হয়ে ওঠে। আবার কেউ কেউ বলেছেন শিল্প হয়ে ওঠার জন্য কোনকিছুর মধ্যে রূপ বা রস থাকতে হবে। ভারতীয় চিত্রকলায় আবার শিল্প হয়ে ওঠার জন্য ছয়টী অঙ্গের কথা বলা হয়েছে। সেগুলো হল— রূপভেদ, প্রমাণ, ভাব, লাবণ্যযোজন, সাদৃশ্য ও বর্ণিকাভঙ্গ।

যুগের সাথে তাল মিলয়ে শিল্প কর্ম্মের যেমন পরিবর্ত্তন হয়েছে তেমনি শিল্প নিয়ে দার্শনিক ও তাত্ত্বিকদের ভাবনাতেও পরিবর্ত্তন লক্ষ করা যায়। শিল্প নিয়ে এ যাবৎ বহু দার্শনিক ও তাত্ত্বিক আলোচনা হয়েছে এবং তা এখনো চলছেও। তবে তাত্ত্বিক, দার্শনিকদের পূর্ব্ব আলোচনা সাপেক্ষে বলা যেতে পারে, ‘সৃজনশীল অভিব্যক্তির উপস্থাপনই শিল্প’। সম্ভবত এই সংজ্ঞা দিয়ে প্রাচীনকাল থেকে আজ অবধি আবিষ্কৃত সব শিল্পই ব্যাখ্যা করা যাবে।
শিল্প মূলত দুই ধরনের—
(১) ললিত কলা
(২) কারিগরী শিল্প

আবার আঙ্গিকগত দিক থেকে শিল্প সাধারণত তিন প্রকার হয়। তবে আধুনিক কালে মিডিয়াতে আর এক ধরণের শিল্প রূপের সৃষ্টি হয়েছে যাকে মিডিয়া আর্ট বলে। সেদিক থেকে শিল্প চার প্রকার—
(১) সাহিত্যিক : কাব্য, নাটক, কথা সাহিত্য
(২) অভিকরণমূলক : সংগীত, নৃত্য, নাট্য
(৩) চারুকলা : চিত্র, ভাষ্কর্য
(৪) মিডিয়া আর্ট : সিনেমা, ডিজিটাল আর্ট

আবার স্বরুপগত দিক থেকেও শিল্প চার প্রকার—
যেমন—
পাঠ্য শিল্প (সাহিত্য),
শ্রব্য শিল্প (সংগীত, আবৃত্তি)
দৃশ্য শিল্প( চিত্র, ভাস্কর্য)
দৃশ্য-শ্রব্য শিল্প (নৃত্য, নাট্য, চলচিত্র)।


প্রাচীন এবং সাম্প্রতিক দার্শনিক ও তাত্ত্বিক আলচনার আলোকে এই বলা যায় যে, শিল্প মানুষের দুটী সহজাত প্রবৃত্তির ফল : অনুকরণ ও সৃষ্টিধর্ম্মিতা বা সৃজনশীলতা। অনুকরণের ভিত্তিতে শিল্পে বাস্তবতার বৈশিষ্ট্য এসেছে বলা যেতে পারে, আর সৃষ্টিধর্ম্মিতা বা সৃজনশীলতা সেই বাস্তবতাকে রূপান্তরিত করেছে। এই দুটী প্রবণতায় শিল্প পদ্ধতির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নির্দ্ধারণ করার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রেখেছে। সম্ভবত এর ফলেই মানুষ যুগের পর যুগ শিল্পকর্ম্ম সৃষ্টির পথ থেকে নিজেদের সরিয়ে আনতে পারেনি।

সভ্যতার বিবর্ত্তনের সাথে সাথে শিল্পেরও বিবর্ত্তন হয়ে এসেছে। প্রতিটী ধাপে মানুষ প্রায় সমপর্য্যায়ের প্রজ্ঞা ও সৃজনশীলতা দেখাতে সক্ষম হয়েছে। চিত্রকলার ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে যে, পূর্ব্বে সামাজিক ও ধর্ম্মীয় নানান বিষয়কে কেন্দ্র করে চিত্রকলার বিকাশ হয়েছিল। কখনো অভিজাত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পৃষ্ঠপোষোকতায়ও চিত্র অঙ্কন করা হত। মধ্যযুগে শিল্পীরা ছবি আঁকতো রাজা বা অভিজাত শ্রেণীদের মর্জি অনুযায়ী। রেঁনেসার সময়কালে চিত্রকলা ছিল গীর্জাকেন্দ্রিক। শিল্পে আধুনিকতার প্রথম পর্ব্ব ১৮৫০ থেকে ১৯০০ এবং আধুনিকতার দ্বিতীয় পর্ব্ব ১৯০০ থেকে ১৯৬০, যাকে বলা হয় লেট মডার্ণ। এ সময় শিল্প বিপ্লবের ফলে সমাজ কাঠামোর বেশ পরিবর্ত্তন হয়েছিল। যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যম পরিবর্ত্তন হওয়াতে এ সময়কার জন্ম নেয়া সব মতবাদগুলোই চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল খুব দ্রুত। পরবর্ত্তী শতকে সারা ইউরোপ জুড়ে যেসব মৌলিক শিল্প আন্দোলন হয়েছিল তার মধ্যে ফভিজম, কিউবিজম, এক্সপ্রেশনিজম, ফিউচারিজম, সুরিয়ালিজম, দাদাইজম উল্লেখযোগ্য। অধিকাংশ শিল্প সমালোচক মনে করেন উনিশ শতকের শেষের দিকে আধুনিক শিল্পকলার জন্ম হয় এবং তা পশ্চিমা সংস্কৃতিতে টিকে ছিল বিশশতকের মাঝামাঝি সময় পর্য্যন্ত। আধুনিক শিল্পকর্ম্মের বৈশিষ্ট্য ছিল ছবি আঁকার বিভিন্ন কলাকৌশল পরীক্ষা-নিরীক্ষা, মৌলিক নান্দনিকতা, আত্মসচেতনা প্রকাশের পাশাপাশি সত্যিকার মানবিক সম্পর্কসমূহের অনুসন্ধান, শিল্পের বিমূর্তায়ন, স্বপ্ন ও কল্পানার মিশেলে চিত্রাংকন। আধুনিক চিত্রকলা কেবল একটী ধারাকে কেন্দ্র করে চর্চ্চা করা হত। কিন্তু উত্তরাধুনিক চিত্রকলা সমস্ত ধারাগুলোকে গ্রহণ করে স্বাধীন শিল্পকর্ম্ম তৈরী করতে বেশী আগ্রহী। উত্তর-আধুনিক শিল্পরীতির মূল কথা হল এ ধারায় সবকিছু চলে। যা ক্ষমতার কেন্দ্রকে অস্বীকার করে উদ্দেশ্যহীন গন্তব্যের পথ তৈরী করে, ঐক্যকে অস্বীকার করে, নৈরাজ্য বা বিশৃঙ্খলাকে স্বাগত জানায়, মহাআখ্যান বা ইউরোপীয় বয়ানকে বাতিল করে, বহুত্বের সমাবেশে সাংঘর্ষিক পরিচয়কে সাদরে গ্রহণ করে, গণমধ্যমের ভেতর সমান্তরাল বাস্তবতা তৈরী করে, হাইপার রিয়েলিটীকে স্বীকার করে। গুরুত্ব দেয় ভাষার নিয়াবলীর সাথে ক্ষমতার সম্পর্ক নির্ণয়ে। সাদা বনাম কালো, নারী বনাম নর, উপনিবেশক বনাম উপনিবেশিত-বৈপরীত্য তৈরী করার এই প্রক্রিয়াকে শুধু বিরোধিতাই করে না এর বদলে বহুধারণায় বিশ্বাস করে উত্তরাধুনিকতা।


আধুনিকতার বিপক্ষে দাঁড়াতে গিয়ে উত্তরাধুনিকতার কিছু পরিভাষার সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিভাষাগুলোকে উত্তরাধুনিকতার বৈশিষ্ট্যও বলা যেতে পারে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো হল—
ডেথ অব দ্য অথর,
মহা-আখ্যান বা গ্র্যান্ডন্যারেটিভ,
সিমুলাক্রা,
হাইপাররিয়েলিটী,
রাইজোম,
প্লুরালিজম বা বহুত্ববাদ,
ইন্টারটেক্সুয়ালিটী,
ফ্রাগমেন্টেশন,
সেমিওটিকস,
ডিকনস্ট্রাকশন বা বিনির্মাণবাদ।

এ সময়কার উদ্ভাবিত ছয়টী শিল্পরীতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সেগুলো হল—
পপ আর্ট,
মিনিমালিজম,
হাইপাররিয়েলিজম,
কনসেপচুয়াল আর্ট,
পারফরমেন্স আর্ট এবং ইনষ্টলেশন আর্ট।

এগুলোর মধ্যে পপ আর্ট, মিনিমালিজম ও হাইপাররিয়েলিজম প্রথাগত শিল্পরীতির মধ্যে নতুন তাত্ত্বিক ধারণা নিয়ে বিকাশ লাভ করেছে। এবং কনসেপচুয়াল আর্ট, পারফরমেন্স আর্ট, ইনষ্টলেশন আর্ট এই তিনটী বিভিন্ন শিল্প রূপের সমন্বয়ে তৈরী করা হয়।

চিত্রকলায় একের পর এক মতবাদের প্রভাব কাটিয়ে ওঠার পর এবস্ট্রাক্ট এক্সপ্রেশনিজমের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ পপ-আর্টের জন্ম হয়। ১৯৫০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই শিল্প আন্দোলনটীর সূচনা হয়। পপ আর্ট মূলত প্রতিদিনের ব্যবহার্য্য দ্রব্য নিয়ে শিল্পকর্ম্ম তৈরী করা হয়। বিশেষ করে অন-অভিজাত জনপ্রিয় সংস্কৃতি যেমন— টিভি, বিজ্ঞাপন, কমিক বই, পার্থিব ও সাধারণ সাংস্কৃতিক উপাদান সংগ্রহ করে তা শিল্পে রূপ দেয়া হয়। পপ আর্টের বৈশিষ্ট্য হল— জনপ্রিয় মিডিয়া এবং পণ্য থেকে তৈরী এই সনাক্তযোগ্য ছবি, কমিকস এবং সংবাদপত্রের ছবির সাথে অন্য ছবি যোগ করা, কমেডি, বিজ্ঞাপন এবং পত্রিকার মধ্যে সেলিব্রেটী বা কাল্পনিক প্রতিকৃতি আঁকা। এই শিল্পধারাটী বর্ত্তমানে সকল (কাপড়, গৃহসজ্জা) ডিজাইনের ক্ষেত্রে দারুণ প্রভাব ফেলেছে। যেমন বর্ত্তমানে টি-শার্ট, কোট, ব্যাগ, মেক-আপ, লিপ পপ আর্ট, ম্যানিকিউর পপ আর্ট, পপ আর্ট ট্যাটু ইত্যাদি … বিভিন্ন ক্ষেত্রে পপ আর্ট বিষয়টীর প্রভাব লক্ষ করা যায়। পপ আর্টের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ শিল্পী হলেন এন্ডি ওয়ারহোল। এছাড়াও এই ধারার শিল্পীওরা হলেন রয় লিচেটেস্টেইন, টম ভেসলম্যান, রিচার্ড হ্যামিল্টন, কিথ হেয়ারিং প্রমুখ।

১৯৬০ সালের প্রথম দিকে এবস্ট্রাক্ট এক্সপ্রেশনিজমের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ মিনিমালিজমের উদ্ভব হয়। এর মূলকথা হল ‘Less is more’ অর্থাৎ কমই বেশী এই কথা নিয়েই স্থাপত্য জগতে যে আন্দোলন শুরু হয় সেটীই মিনিমালিজম নামে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। শুধু স্থাপত্য শিল্পে নয় চিত্রকলাতেও এর প্রভাব পড়ে। এই চিত্ররীতির বৈশিষ্ট্য হল জ্যামিতিক শেইপ ব্যবহার করা। একটী কাজের পুনরাবৃত্তি বা একই আকৃতির একাধিক ছবি তৈরী করা। ফ্রাংক স্টেলাকে মিনিমালিজমের জনক বলা হয়। এছাড়াও এই ধারার প্রধান শিল্পীরা হলেন ডোনাল্ড জুড, এঙ্গেজ মার্টিন, রবার্ট মরিস প্রমুখ।

আবার ১৯৬০ সালের শেষের দিকে পোষ্ট-মিনিমালিজম ধারটী শুরু হয়। এই শিল্পরীতিতে দৈনন্দিন ব্যবহার্য্য জিনিসপত্র, সরল, তুচ্ছ অবহেলিত উপকরণ ব্যবহার করে শিল্পকর্ম্ম তৈরী করা হত। এ সময়কার শিল্পীরা হলেন ইভা হেসে, ভারজিনিয়া ওভারটন্ দামিয়েন হাষ্ট, অনিশ কাপুর, ব্রুস নওম্যান প্রমুখ।

বর্ত্তমানে আমাদের জীবন হয়েছে অনলাইনকেন্দ্রিক। ফলে একে অপরকে দেখে জীবনের চাহিদাও বাড়ছে দিনকে দিন। এক্ষেত্রে জীবনের অতিরিক্ত চাওয়াগুলোকে কমিয়ে আনতে পারে এই মিনিমাল হাইপাররিয়েলিজম। ফরাসী দার্শনিক জ্যঁ বদ্রিয়ারের চিন্তাধারা হয়ে দাঁড়ায় হাইপাররিয়েলিজমের অন্যতম ভিত্তি। এ ধারার চিত্রকলার বৈশিষ্ট্য হল ক্যানভাসে আঁকা ছবির মধ্য দিয়ে বাস্তবতাকে ছাড়িয়ে কল্পনার বিভ্রম তৈরী করা বা চোখ ধাঁধানো বাস্তবতা তৈরী করা। হাইপাররিয়েলিষ্ট শিল্পীদের মধ্যে ডেনিস পিটারসন্, গটফ্রিড হেলেনউইন, নেস্তর লেইনেস, চাক ক্লোজ, বার্ট মনরয়, অড্রি ফ্ল্যাক, প্রমুখ ব্যাক্তির নাম নেয়া যায় যাঁরা চিত্রকলা ও ভাস্কর্য শিল্পকে নিয়ে গেছেন মানুষের কল্পনার সীমাকে ছাড়িয়ে আরো উঁচুতে।

১৯৭০ সালের দিকে কনসেপচুয়াল আর্ট নামে আরেকটী ধারার সৃষ্টি হয়। এই ধারায় বিষয় বস্তুর থেকে শিল্পীর আইডিয়া বা উত্থাপিত চিন্তাকে বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়। অর্থাৎ বস্তুগত উপাদানের চেয়ে শিল্পীর সৃজনশীলতাকেই গুরুত্ব দেয় কনসেপচুয়াল আর্ট। অনেক শিল্পসমালোচকের মতে মার্শেল ডুশ্যাম্পই প্রথম কনসেপচুয়াল শিল্পী। এই ধারার শিল্পীরা হলেন জোসেফ কোসুথ, মেরিনা আব্রোমোভিচ, সুজানা ল্যাসি, ইয়োকো ওনো প্রমুখ।


আবার এ সময় ইনষ্টলেশন আর্ট নামে আরেকটী শিল্পরীতির চর্চ্চা শুরু হয়। এই শিল্পরীতিতে বস্তুর চেয়ে পরিবেশের ওপর বেশী প্রাধান্য দেয়া হয়। আরেক বিবেচনায় ইন্সটলেশন আর্ট হল বিশাল জমিনে প্রাকৃতিক পরিবেশকে ম্যানিপুলেত, পরিবর্ত্তন বা বিকৃতি করে সৃষ্টি করা হয়, যা আর্থ আর্ট বা ল্যান্ড আর্ট হিসেবেও পরিচিত। পৃথিবী ও প্রকৃতির প্রতি মমতা জানানোর উদ্দেশ্যে এই আন্দোলনটী শুরু হয়। এর মূল কথা হল ‘Landscape is the creation’. এই ধারার শিল্পীরা মনে করেন খোলা আকাশের নীচে থাকা, সভ্যতা থেকে দূরে থাকা প্রকৃতির সান্নিধ্য শিল্প ও শিল্পীর জন্য জরুরী। এই ধারণাটী পরবর্ত্তীতে ইকোফেমিষ্ট শিল্পীদের চিন্তার সাথে মিলে যায়। এইধারার শিল্পীরা হলেন জুডি শিকাগো, ন্যান্সি হোল্ট,ওয়াল্টার ডি মারিয়া, ডেনিস ওপেনহেইম, মিশেল হেইজার, জেমস টুরেল প্রমুখ।

১৯৭০ সালের উত্তরাধুনিক ধারার আরেকটী শিল্পরীতি হল পারফরমেন্স আর্ট। এ শিল্পরীতির বৈশিষ্ট্য হল, শিল্পী নিজেই বিভিন্ন মাধ্যমের আশ্রয় নিয়ে সচল ক্রীড়া প্রদর্শন করে দৃশ্যকলায় অন্তর্ভুক্ত থাকেন। এই মাধ্যমগুলোর মধ্যে রয়েছে আখ্যান বর্ণনা, গান পরিবেশন, নৃত্যসহ সকল দৃশ্যকলা। এ ধারার শিল্পীরা হলেন এনা ম্যান্ডিয়েটা, ভ্যালি এক্সপোর্ট, জোয়ান জোনাস প্রমুখ।

রোঁলা বার্থের ‘বার্থ অব দ্য রিডার’ গ্রন্থের প্রেরণায় ১৯৭৪-১৯৮৫ সালের দিকে পিকচার জেনারেশন নামে আরেকটী শিল্পরীতির চর্চ্চা শুরু হয়। চিত্রকল্পবাদী মুভি, টেলিভিশন, ম্যাগাজিন, বিলবোর্ড, ফ্যাশন ও সংগীতের উপাদান নিয়ে শিল্প তৈরী করা এই ধারার শিল্পরীতির বৈশিষ্ট্য। যা তরূণ শিল্পীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এ ধারার শিল্পীরা হলেন বারবারা ক্রুগার, সিন্ডি শেরম্যান, জেনি হোলজার, শিরিয়ে লেভিনের প্রমুখ।

উত্তরাধুনিকতা শিল্পজগতে এক নতুন বাঁক নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে লুকিয়ে থাকা গল্প কাহিনী, নতুন নতুন চিন্তার পথ সহজ করে দিয়েছে এই উত্তরাধুনিকতাবাদ। যার ফলে উত্তরাধুনিক চিত্রকলা হয়েছে তত্ত্বনির্ভর, লুকিয়ে থাকা চিত্রের পেছনে লুকিয়ে থাকে তত্ত্বকথা।

তথ্যসূত্র :
১. হাসনত আবদুল হাই— সবার জন্য নন্দনতত্ত্ব (২০০৪), কাগজ প্রকাশন
২. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম— নন্দনতত্ত্ব (১৯৮৫), বাংলা একাডেমী
৩. শ্রী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর— ভারত শিল্পের ষড়ঙ্গ, বর্ণায়ন প্রকাশনী।
৪. মামুন অর রশীদ— উত্তর-আধুনিকতা(২০১৯), সংবেদ।
৫. রতনতনু ঘোষ— উত্তরাধুনিকতা (২০১৫), কথা প্রকাশ।
৬. কলিম খান-রবি চক্রবর্ত্তী— বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ।

 

 

 

জবা রায়
জন্মস্থান: ধোবাউড়া, মৈমনসিংহ।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা:
মাস্টার্স প্রথম বর্ষ, চারুকলা অনুষদ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, মৈমনসিংহ।

অলঙ্করণ : হিম ঋতব্রত
প্রচ্ছদ : মেহেরাজ হাসান শিশির

{চিত্রশিল্পে উত্তরাধুনিকতার প্রবেশ [বঙ্গীয় শব্দকোষ (শ্রী হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়), বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ ও ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক ভাষাদর্শন (কলিম খান-রবি চক্রবর্ত্তী) অনুসৃত] চারবাক-এর বানান রীতিতে প্রকাশিত হল।
— সম্পাদকীয়}

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার