জুলকারনাইন স্বপনের সাক্ষাৎকার

0

গল্পকার জুলকারনাইন স্বপন জন্মগ্রহন করেন ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে, কুড়িগ্রাম জেলায় । পিতা মরহুম আব্দুল কুদ্দুস খাঁন ও মাতা সাকীনা খানম । বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত দীর্ঘদিন ধরে । মূলতঃ নাটক লেখা ও নির্দেশনার কাজ করেন । চাকুরীসূত্রে বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জ ও চরাঞ্চলে নিয়মিত পদচারণা । সেখান থেকেই নিত্য তুলে আনেন লেখার উপজিব্য । এখন পর্যন্ত প্রকাশিত একমাত্র গল্পের বই অতলে জীবন; ২০১৩-এ প্রকাশিত হয়েছে পূর্বা প্রকাশনী থেকে । এছাড়াও সম্পাদনা করছেন সাহিত্যপত্রিকা শব্দপরিব্রাজক

সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিন্দুর সম্পাদক সাম্য রাইয়ান

জুলকারনাইন স্বপনের সাক্ষাতকার

“আমি যে বিষয় নিয়ে ভাবতাম তা প্রকাশের ক্ষেত্রে কবিতার চেয়ে গল্পকেই শ্রেয় মনে হয়েছে এবং গল্পতেই আমি তা সহজভাবে করতে পারি”
-জুলকারনাইন স্বপন

সাম্য রাইয়ান: সাহিত্যচর্চার ভাবনাটি আপনাকে কবে প্রথম আক্রান্ত করে? মানে শুরুর দিকের বিষয়টা জানতে চাচ্ছি; বিশেষত সিরিয়াসলি লেখালিখির শুরু হয় কবে এবং কীভাবে?

জুলকারনাইন স্বপন: সাহিত্যচর্চার ভাবনাটি কবে প্রথম আক্রান্ত করেছিলো তার দিনক্ষণ আসলে মনে নাই । তবে এটি বলতে পারি যে, ১৯৮০ সালের শেষের দিকে কাগজে-কলমে লেখালেখি শুরু করি । আর সিরিয়াসলি লিখতে শুরু করি অনেক পরে অর্থাৎ ততদিনে চোখের জ্যোতি কমে এসেছে । দু-চারটা চুল পাকতে শুরু করেছে । চাকুরীর কারণে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরার ফলে অভিজ্ঞতার ঝুলিও যখন একটু একটু বাড়তে শুরু করেছে । কীভাবে সিরিয়াসলি লেখার শুরু হয়েছে, তা বলতে পারবো না । কিন্তু যেহেতু একটি লেখকসত্ত্বা ভেতরে কাজ করত এবং লেখা ও পড়ার প্রতি ঝোঁক ছিল, ফলে একটু একটু লিখতে লিখতে সিরিয়াসলি লেখা শুরু করি ।

সাম্য রাইয়ান: আপনি তো লেখালিখির শুরুর দিকে কবিতা লিখতেন । তাহলে কবিতা বাদ দিয়ে গল্পের দিকে ঝুঁকলেন কেন?

জুলকারনাইন স্বপন: হ্যাঁ, অবশ্যই আমি শুরুর দিকে কবিতা লিখতাম এবং এখনও লিখি । তবে আমি যে বিষয় নিয়ে ভাবতাম তা প্রকাশের ক্ষেত্রে কবিতার চেয়ে গল্পকেই শ্রেয় মনে হয়েছে এবং গল্পতেই আমি তা সহজভাবে করতে পারি ।

সাম্য রাইয়ান: লেখার বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপনি কোন ধরণের চিন্তাকে প্রাধান্য দেন? কোনো বিশেষ ধরণের চিন্তা আপনার মাথায় থাকে কি? দর্শন?

জুলকারনাইন স্বপন: লেখার ক্ষেত্রে আমি গ্রামীন পটভূমি এবং তাদের জীবনযুদ্ধকেই বেশি প্রাধান্য দেই । যেহেতু আমার দেশের বেশিরভাগ অংশই গ্রাম এবং সেই গ্রামের অধিকাংশ মানুষেরই যুদ্ধ প্রতিদিনের বাঁচার জন্য ।

সাম্য রাইয়ান: সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে আপনার কোনো প্রেরণার জায়গা আছে কি?

জুলকারনাইন স্বপন: সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে অবশ্যই আমার প্রেরণার জায়গা আছে । ছাত্র অবস্থায় যখন গণমানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে অংশগ্রহন করি এবং সমতার স্বপ্ন দেখার রাজনীতি করি, সেই জায়গাটিই আসলে আমার প্রেরণার উৎস ।

সাম্য রাইয়ান: লেখালিখির এতো বছর পেরিয়ে আপনার একটি মাত্র গল্পের বই (অতলে জীবন); প্রকাশিত হয়েছে গতবছর । বই প্রকাশের ক্ষেত্রে এই দীর্ঘ সময় নেয়ার কারণ কী? বই প্রকাশ নিয়ে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানতে চাচ্ছি ।

জুলকারনাইন স্বপন: আসলে প্রথম দিকে লেখালেখি করেছি একটি তাড়না থেকে । ফলে সেটি প্রকাশিত হলো কি না সে বিষয়ে কোনো মাথাব্যাথা ছিলো না । কিন্তু এক সময়ে এসে মনে হলো, আমি মানুষ হিসেবে অনেকটা সময় এর পেছনে ব্যায় করেছি । এ সময়ের মধ্যে আমার ভাবনা এবং চর্চা, সেটি কতটুকু মানুষের কাজে আসবে জানি না, তবে তা প্রকাশ করা উচিত । তাই এতো বছর পর প্রথম বই ‘অতলে জীবন’ ।

ভবিষ্যতে অবশ্যই বই করবো সেজন্য লেখালেখি করছি । আর হুটহাট করে বই প্রকাশের পক্ষপাতী আমি নই । কারণ একটি লেখা শেষ করলেও শেষ হয় না । বারবার নাড়াচাড়া করে দেখতে হয় । তারপর সেটি ফাইনাল করা হয় । যার জন্য অনেক সময় প্রয়োজন ।

সাম্য রাইয়ান: অতলে জীবনের পাণ্ডুলিপি নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপনি কোন ধরনের চিন্তাকে প্রাধান্য দিয়েছেন?

জুলকারনাইন স্বপন: অতলে জীবনের পাণ্ডুলিপি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সেই গল্পগুলোকে নির্বাচন করেছি, যে গল্পগুলোতে নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের জীবনের কথা আছে, যুদ্ধের কথা আছে, করুণ পরিণতির কথা আছে । আর সেটা আমাদের সমাজ ব্যবস্থার কারণে হোক বা রাজনীতির কারণেই হোক; মোদ্দা কথা তারা নিপীড়নের শিকার ।

সাম্য রাইয়ান: আপনার অধিকাংশ গল্পেই শুধু গ্রামের কথা । গ্রাম বারবার ঘুরে ফিরে আসছে; গ্রামীন চরিত্রদের আপনি তুলে আনছেন গল্পে । এর পেছনে কারণ কী?

জুলকারনাইন স্বপন: আমি এর উত্তর পূর্বেই দিয়েছি ।

সাম্য রাইয়ান: বাংলাদেশের সমসাময়িক গল্পচর্চা প্রসঙ্গে আপনার মন্তব্য কী?

জুলকারনাইন স্বপন: বাংলাদেশের সমসাময়িক গল্পচর্চা সম্পর্কে আমার একটা নেতিবাচক মনোভাব আছে । যদিওবা আমি খুব বড় গল্পকার নই কিন্তু নিজেকে আমি একজন বিদগ্ধ পাঠক হিসেবে মনে করি । বাংলাদেশে ইদানীং বেশিরভাগ গল্পেই সিরিয়াসনেস লক্ষ্য করা যায় না । কাজগুলো দেখে মনে হয় দায়সারা গোছের । সেটা বিষয়বস্তু নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিংবা গল্প করার ক্ষেত্রে । গল্পগুলোতে পরিশ্রমের ছাপ খুব একটা দেখা যায় না । কিন্তু তারপরও যে ভালো গল্প হচ্ছে না এটা বলা যাবে না । ভালো গল্পও হচ্ছে কিন্তু তার পরিমাণ অনেক কম । সবচেয়ে দুঃখজনক যে বিষয়টা ভাবায় তা হলো যেন-তেন কাজ করলেও তার কোনো জবাবদিহিতা নাই এবং বই প্রকাশের ক্ষেত্রে ন্যুনতম লজ্জাবোধ কাজ করে না !

 * সাক্ষাতকার গ্রহণের তারিখ: ২৩ মার্চ ২০১৫

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার