অন্য বাবা মায়েরা সন্তানদের অনেককিছু দিতে পারছে, আপনি পারছেন না বলে inferior complexityতে ভুগছেন? আপনার সন্তান ফার্ষ্ট হয়নি বলে হতাশ?
ভাবুন তো, নিজে যে আজ এত প্রতিষ্ঠিত, ছোটবেলায় কয়মাইল পথ হেঁটে বিদ্যালয়ে, কলেজে গিয়েছেন? এত রকমারি জুতা, জামা, প্রসাধনী, যানবাহন ছিল তো? মাথার উপরে ফ্যান ছিল তো?
এখন তো মাল্টি মিডিয়া আছে। ইউটিউব আছে। তারপরও তো ছাত্ররা শেখার জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন! এরজন্য আমরা কি দায়ী নই? আমরা সবাই চাহিদা পূরণ করতে করতে তাদেরকে এই ভোগবাদী (consumerism) সমাজের অংশ বানিয়ে ফেলেছি।
একটু সময়ের জন্যও আমরা সন্তানদের জীবনের অন্ধকার দিকটা দেখাতে চাই না। শুরুটা খুব ছোটবেলা থেকেই করি। নাস্তার টিফিন দিয়ে বলি “সাবধান, কাউকে দিবে না। সবার সাথে মিশবি না। ক্লাস মেইনটেইন করে চলবি।”
Individualism শেখাচ্ছি। তো বড় হয়ে সে পিতামাতার সাথেই আর চলতে চায় না। “এবার ফার্ষ্ট হলে, তোকে কম্পিউটার কিনে দিব (আদৌ প্রয়োজন নেই)।
বেকনের সেই ডায়ালগ “knowledge is power” বলতে বুঝে লেখাপড়া একটা পণ্য যার উদ্দেশ্য হল বাড়ী, গাড়ী, ক্ষমতা অর্জ্জন। এবং একজন সফল শিক্ষিত মানে অর্থ, প্রভাবেও সে সমানভাবে সফল। বাকীরা মুর্খ ও ‘আজাইরা’ লেখাপড়া করছে। এরাই বড় হয়ে বুঝে “power is knowledge”
সন্তান কোনদিন মায়ের জন্য বায়েজীদ বোস্তামীর মত সারারাত না দাঁড়িয়ে থাক, কয়েকমিনিট চিন্তা করে? বাবা, মায়েরা কত কষ্ট করে? আমরাও এটা দেখাতে চাই না। আমরা চাই আমার সন্তান (অন্যের সন্তান নয়) যেন সবচেয়ে ভাল কাপড়, সবচেয়ে দামী জিনিশটা, ভাল খাবার পায়। এত মোটিভেশন, আদর, আবদার পালন! কই সমাজে যারা প্রকৃত মানুষ হয়েছে তারা নিরুৎসাহ, উপেক্ষা, জীবনের চরম বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েই বড় হয়েছে। বরং মোটিভেশনাল স্পীচ যারা দেয় তারাই আত্মহত্যা করেছে (ডেল কার্নেগী)।
ভেবে দেখুন,
আমরা সন্তানদের শুধু সুখ, ভোগ আর অপার আনন্দ দেখিয়ে মানুষের বদলে অমানুষ করছি না তো? এমন শিক্ষায় শিক্ষিত করছি না তো যে শিক্ষা নিজের ছাড়া আর কারো উপকারে আসে না? ছেলে মেয়ের হাতে বই তুলে দিন। উপহার একটা ভাল বই পড়ার অভ্যাস তাদেরকে জীবন বুঝতে শেখাবে। নিজের চেয়ে যারা অভাবী, কম টাকায় সুখী তাদের জীবনটা দেখান।
খুব ভোরে শীতের সকালে ঘাসের উপর কয়েকফোঁটা শিশিরে আলোর হাসির ঝিলিকটা অনুভব করতে দিন। খালি পায়ে পৌষের খালি মাঠে হেঁটে পা ও মাটির দূরত্ব দূর করতে দিন।
জীবন হবে চিররঙীন।…
মাহবুবুল ইসলাম
জন্ম: ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৮১। পৈতৃক নিবাস— মাধবপুর, হবিগঞ্জ। প্রকাশিত গ্রন্থ: জল ও জলোচ্ছ্বাস (কবিতা) (প্রকাশ সাল— ২০১৯, প্রকাশক— চয়ন)। শিশির-হরফ (কবিতা) (প্রকাশ সাল— ২০২০, প্রকাশক— চারবাক)।