The girl sitting by the window || মাহবুবুল ইসলাম

0

মঈন চৌধুরীর চিত্রকর্ম্ম : চেনা অচেনা

বলা হয়, 8.2 seconds কোন সুন্দরী রমনীর দিকে একনজরে তাকালে, মস্তিস্কে ডোপামিন হরমোন নিঃসৃত হয়। তখন পুরুষ এক অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণ অনুভব করে এবং ওই নারীর প্রেমে হাবুডুবু খেতে শুরু করে। এটাকে ল্যভ এ্যাট ফার্স্ট সাইট বা শেক্সপীয়রিয়ান ল্যভ বলে। উঁনার নাটকে নায়ক নায়িকা প্রায়শই প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ে যায়। প্যারিসও মনে হয় ব্যবসার কাজে এ্যাথেন্সে এসে হেলেনকে দেখেই প্রেমে পড়েছিল।

যাক, সে ভিন্ন কথা। আপাতত জানালার পাশে যে মেয়েটী বসে আছে, তাকে বিপু আজ প্রথম নয়, গত তিনমাস ধরেই ঢাকা যাওয়ায় পথে একই কম্পার্টমেণ্টে সঙ্গী হিসেবে পাচ্ছে। 8.2 সেকেণ্ডস তথ্য বাতিল করলেও, এই পর্য্যন্ত অসংখ্যবার মেয়েটীর দিকে তাকিয়েছে। তার ডোপামিন হরমোন এখন তুঙ্গে। তাই হবে হয়ত। কেননা কয়েকমিনিট আগেও বৃক্ষ, পাতা, ফুল, আকাশ সবই বিবর্ণ মনে হয়েছিল। যেইমাত্র মেয়েটী তার পাশে window তে এসে বসল— সবকিছুই রঙ্গীন হয়ে ওঠল। ট্রেনের শব্দও মিউজিক নোটের মত কানে বাজতে লাগল।
বিপুর দুইটা ঘন্টা গিফট অব মেজাইয়ের ডেলার মত—
“passes on rosy wings”

এরকম বয়সে এটা স্বাভাবিক। তবে এই পর্য্যন্ত কোন কথা তো দূরের কথা, মেয়েটীর নামটাই বিপু জানতে পারেনি। এটা অস্বাভাবিক। অবশ্য একবার এক মেয়ের পরিচয় জানতে গিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। পরিচয় জানতে চাইলে এক মেয়ে বলেছিল—
নাম : এলাচি বানু
বাবা : আদামিয়া
মা : লবঙ্গ বানু
গ্রাম : দারুচিনি
দেশ : বাঙলাদেশ
গ্রহ : পৃথিবী
জগৎ : সৌরজগৎ
গ্যালাক্সী : মিল্কিওয়ে

এজন্য আগ বাড়িয়ে কিছু বলার সাহস তার হয় না। অবশ্য একটা জিনিস বিপু খুব পারে এবং সেটা সে ইণ্টার থেকেই করে এসেছে। মানুষের ফেইস রীড করা যেটা তার এক আগরতলার মামাকে চর্চ্চা করতে দেখত। এটা বিপুর একটা হবি বলা যায়। আরেকটা হবি, অংকের ছাত্র হিসেবে, সবকিছুতে সংখ্যাতত্ত্ব বা প্যাটার্ন খোঁজা ঠিক লিওনার্দো আর রামানুজের মত। তার প্রেডিকশন সত্য কিংবা মিথ্যা হোক সে ফেস রীড করে কিছু বলতে আনন্দ বোধ করে। তবে এরজন্য tranquil mind বা sudden insight দরকার। আর দরকার aesthetic distance। মাইণ্ডকে আলফা লেবেল থেকে থেটা লেবেলে আনতে হয়। এটা সে ডেরেন ব্রাউনের বই আর ভিডিয়ো দেখে শিখেছে। বিপু মনে করে logic-এর চেয়ে magic, mystery মানুষকে চরম আনন্দ দেয়।

“the most interesting thing in this universe is mysterious”

তবে এটা সত্য, মেয়েটীর সাথে সে চোখের মাধ্যমে বহু কথা বলেছে। মেয়েটী হয়ত প্রথম প্রথম বলত “ছ্যাঁচড়া ব্যাটা”।
বিপু নীরবে উত্তরে বলত—
“না, আমি শিল্প খুঁজি”।

কিন্তু ধীরে ধীরে মেয়েটীর চোখে বিপুর প্রতি আর কোন বিরক্ত বা বিরাগ দেখতে পায়নি। যেমন লাস্ট টাইম সে চোখের আড়ালে গিয়ে মেয়েটীর কৌতূহল লক্ষ করেছে।

এটা নিশ্চিত মেয়েটী একজন ছাত্রী এবং কোন বয়ফ্রেণ্ড নেই। যাদের বয়ফ্রেণ্ড থাকে তারা বারবার মেসেঞ্জারে ঢুকবে। বয়ফ্রেণ্ডকে রিপ্লাই দিবে “এই তো আর আধা ঘন্টায় ঢাকা পৌঁছে যাব”। গত একঘণ্টায় শুধু বাবাকে একবার ফোন দিয়েছে। আর বলেছে “রোকেয়া হলে গিয়ে ফোন দিব”। এর মানে মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। ইংল্যাণ্ড হলে কথা শুরু করা যেত এইভাবে—
“বুঝলেন, লণ্ডনে থ্রি w এর কোন ভরসা নেই। এই বৃষ্টি, এই রোদ। নারীরা মাস্ক পাল্টানোর মত পুরুষ পাল্টায়”।

যাহোক কথা তো বলতে হবে। বিপু দেখেছে, যে কয়দিন মেয়েটীর সাথে দেখা হয়েছে, সেই তারিখ একসাথে সাজালে সংখ্যাটা দাঁড়ায়—
1.618 যেটাকে গোল্ডেন রেশিও বলে।

তাহলে কি মেয়েটাকে বলা যায়? “আপনার আমার সাক্ষাৎ co-incidence না। প্রকৃতিই চাইছে আমাদের দেখা হোক।” মেয়েটী সাইকো ভাববে না তো।

এইসব ভাবতে ভাবতে বিপু দেখল, মেয়েটীর পাশে বসা এক মধ্যবয়সী লোক ঘুমের ভান করছে আর শরীর দিয়ে হাল্কা গাঁ ঘেঁষে স্বর্গীয় সুখ নিচ্ছে।

বারবার যখন একই কাজ করছে, মেয়েটী ব্যাগ থেকে একটা আলপিন নিয়ে গুতো দিল আর বৃদ্ধ যেন কুম্ভকর্ণের ঘুম থেকে জেগে ওঠল আর বিপুর সাথে কামুক আংকেলের চোখাচোখি হতেই সে বলল
— এটা কিছু না। প্রকৃতি আর ভীমরুলের ঈষৎ ষড়যন্ত্র।

আংকেল লাফ দিয়ে উঠে বিপুর সীটে এসে বসলে, বিপু সুবর্ণ সুযোগ পেল মেয়েটীর পাশে বসার। এদিকে মেয়েটী এই রসকাণ্ডে এমন এক হাসি দিল যেন দীর্ঘদিন লকডাউনের পর এক শুভ্র সুন্দর পৃথিবী তার সামনে হাজির হল, মেয়েটীর শাদা দাঁতের দ্যুতি চারপাশটা আলোকিত করে ফেলল, ঠিক এরকম দাঁতের প্রেমেই পড়েছিল মুরাকামির ‘অন এ্যা স্টোন পিলো’-এর নায়ক।

: “বাই দি ওয়ে, আমার জার্নিতে ঘুমুনোর অভ্যাস নেই।” বিপু বলল।

— “সে তো গত কয়েক মাস ধরেই দেখছি। তো আমাকে কি ইনটেনশনালি ফলো করা হচ্ছে?”

: “মোটেই না। chance and co-incidence শুধু নাটক সিনেমায় নয়, বাস্তবেও ঘটে। তবে আপনার সাথে দেখা করার ইনটেনশন অবশ্যই মনে ছিল।”— বিপু কনফিডেণ্টলি উত্তর দিল।

এরই মধ্যে মেয়েটীর নামটা জানা হল “রেহনুমা”। আলাপচারিতা চলতে লাগল যতক্ষণ না বিপু এয়ারপোর্টে পৌঁছল। …

 

 

 


মাহবুবুল ইসলাম
জন্ম: ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৮১।

পৈতৃক নিবাস : মাধবপুর, হবিগঞ্জ।
প্রকাশিত গ্রন্থ: জল ও জলোচ্ছ্বাস (কবিতা) (প্রকাশ সাল— ২০১৯, প্রকাশক— চয়ন)।
শিশির-হরফ (কবিতা) (প্রকাশ সাল— ২০২০, প্রকাশক— চারবাক)।

প্রচ্ছদ : মেহেরাজ হাসান শিশির

{The girl sitting by the window || মাহবুবুল ইসলামের গল্প [বঙ্গীয় শব্দকোষ (শ্রী হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়), বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ ও ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক ভাষাদর্শন (কলিম খান-রবি চক্রবর্ত্তী) অনুসৃত] চারবাক-এর বানান রীতিতে প্রকাশিত হল।
— সম্পাদকীয়}

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার