সুফিকণিকা (পর্ব্ব : ২) || আরশাদ সিদ্দিকী

0

[শত শত বছর ধরে সুফী সাধকরা তাদের জীবনের অভিজ্ঞতার কথা বলতে ছোট ছোট গল্প ব্যবহার করতেন। অল্প কথায় সহজ ভাষায় সুফী সাধকরা তাদের অর্জ্জিত জ্ঞান ও উপলব্ধির কথা জানাতে পারতেন যা হাজার হাজার পৃষ্ঠার বর্ণনায়ও হয়ত দুঃসাধ্য। আমার সংগ্রহের সেইসব জ্ঞান ও উপলব্ধির কয়েকটি এখানে আপনাদের কাছে হাজির করছি।]

 

 

এক—
বিখ্যাত সুফী সাধক রাবিয়া তার ছোট্ট কুঁড়েঘরের বাইরে রাস্তায় কিছু খুঁজছিলেন। সূর্য্য তখন অস্তাচলে। আঁধার ঘনিয়ে আসছিল। কিছু কৌতূহলী লোক রাবিয়াকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করছিল “তুমি কী হারিয়েছ?” তুমি কী খুঁজছ?” “আমরা তোমাকে কি কোন সাহায্য করতে পারি”?

রাবিয়া বললেন, “আমি আমার সুঁচটা হারিয়েছি।”

লোকদের মধ্যে একজন বলল, “ঠিক আছে, এখন সূর্য্য অস্ত যাচ্ছে এবং আঁধার ঘনিয়ে আসছে। সূঁচ পাওয়া খুব কঠিন হবে। দিনের আলোয় খুঁজতে সুবিধে হবে।

রাবিয়া তাদের বললেন, “আমাকে এ পরামর্শ দিও না। কারণ সুঁচটা মোটেই রাস্তায় পড়েনি। ওটা আমার বাড়ীর ভেতরে হারিয়েছে।”

তখন লোকগুলো ভাবল রাবিয়া তাদের সাথে ঠাট্টা করছেন। তাদের মধ্যে একজন খেপে উঠে বলল “আমরা সবসময় জানতাম যে আপনি কিছুটা উন্মাদ! সুঁচটা যদি বাড়ীর ভিতরে পড়ে থাকে তাহলে রাস্তায় খুঁজছেন কেন?”

রাবিয়া উত্তরে বললেন । “বাড়ীর ভিতরে কোনও আলো নেই, বাইরে এখনও কিছুটা আলো আছে, তাই রাস্তায় খুঁজছি।”

লোকেরা হাসতে হাসতে যে যার পথে ফিরে যাচ্ছিল। রাবিয়া আবার তাদের ডেকে বললেন, “শোন! আমরা নিজেকে প্রশ্ন না করে, অন্যের কাছে জানতে চাই, “আমি কোথায় হারিয়েছি?”

 

 

 

 

দুই—
একদিন রাবিয়া বসরী এক হাতে জলন্ত মশাল আর অন্য হাতে এক বালতি পানি হাতে রাস্তায় ছুটে যাচ্ছিলেন। লোকেরা তাকে থামিয়ে জানতে চাইল তিনি কেন এমন করছেন? তিনি বললেন, “আমি জাহান্নামের আগুন নিভিয়ে দিতে চাই আর জান্নাতের সব পুরষ্কারের প্রতিশ্রুতি পুড়িয়ে দিতে চাই, যেন কেউ জাহান্নামের ভয়ে কিংবা জান্নাতের আশায় আল্লাহর ইবাদত না করে। সকলে যেন নিঃশর্তভাবে আল্লাহকে ভলোবাসে।

 

 

 

 

 

তিন—
একবার এক ব্যক্তী মহান সাধক চিস্তি নিজামুদ্দিন আউলিয়ার কাছে এসে বললেন, তিনি শহরে তার সম্পত্তির কাগজপত্র হারিয়ে ফেলেছেন এবং রাজার কেরানী তাঁর পক্ষে অধিকার প্রমাণ করে এমন কোন বিকল্প কাগজপত্র তৈরি করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন।

সাধক চিস্তি নিজামুদ্দিন মুচকি হেসে রসিকতাচ্ছলে তাকে কিছু হালুয়া পরিবেশন করতে বললেন। লোকটি একমুহূর্ত্ত বিলম্ব না করে বাজার থেকে কিছু হালুয়া আনতে চলে গেল। কিছুক্ষণের পরে এক হাতে হালুয়া এবং অন্য হাতে কিছু কাগজের টুকরো নিয়ে ফিরে এল।

হালুয়া ও কাগজের টুকরো সাধক চিস্তি নিজামুদ্দিন আউলিয়ার সামনে রেখে রুদ্ধশ্বাসে বলতে লাগল “আমি হালুয়া কিনার কথা দোকানীকে বললাম, দোকানী হালুয়া মোড়ানোর জন্য কিছু কাগজ তুলল, আমি অবাক হলাম কাগজগুলো আমার হরানো সম্পত্তির প্রমাণপত্র। আমি দোকানীকে অন্য একটি কাগজে হালুয়া মুড়ে দিয়ে তার হাতের কাগজগুলো আমাকে দিতে বললাম। হজরত আমার সম্পত্তির হারানো কাগজগুলো এখন আপনার সামনে।”

 

 

 

 

চার—
একবার এক নারী স্বর্গীয় ফলের বর্ণনা শুনে শুনে ফলটির প্রতি লোভাতুর হয়ে উঠলেন। তিনি একজন দরবিশের কারছে জানতে চাইলেন.”আমি কীভাবে এই ফলটি পেতে পারি, কীভাবে আমি তাৎক্ষণিকভাবে জ্ঞানী হতে পারি?”

দরবিশ বললেন, “আপনাকে আমার সাথে সাধনা করার পরামর্শ দেব, তবে আপনি যদি তা করতে ব্যর্থ হন, তাহলে আপনাকে বিরামহীনভাবে বিশ্ব ভ্রমন করতে হবে”।

তিনি দরবিশকে ছেড়ে অন্যদের কাছে স্বর্গীয় ফলের কথা জিজ্ঞাসা করলেন, প্রথম তিনি গেলেন একজন জ্ঞানতাপসের কাছে, তারপর একজন হাকিম, একজন সাধক, একজন দিওয়ানা, একজন বিজ্ঞানী এবং আরও অনেকের কাছে গেলেন …।

এভাবেই র্স্বগীয় ফলের সন্ধানে তার ত্রিশ বছর কেটে গেল। শেষে তিনি একটি বাগানে পৌঁছলেন। সেখানে ছিল আকাশ ছোঁয়া সেই স্বর্গীয় ফলের বৃক্ষ। বৃক্ষটির শাখায় শাখায় ঝুলছিল স্বর্গীয় উজ্জ্বল ফলটি। আর বৃক্ষটির পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন যিনি, সাবার প্রথম দরবিশের কাছে নারীটি স্বর্গীয় ফলের সন্ধানে গিয়েছিলেন তিনিই সেই দরবিশ।

নারীটি যারপরনাই বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘‘প্রথম সাক্ষাতেই আপনি কেন বলেননি, আপনিই হলেন হলেন স্বর্গীয় ফলটির সংরক্ষক” দরবিশ বললেন, “কারণ, আপনি তখন আমাকে বিশ্বাস করতেন না। বৃক্ষটি ত্রিশ বছর ত্রিশ দিনের মধ্যে একবার মাত্র ফল দেয়”।

 

 

 

 

পাঁচ—
চার জনকে একটি মূদ্রা দেয়া হল—

প্রথমজন ছিলেন ফারসী। তিনি বললেন, ‘আমি এটি দিয়ে কিছু আঙ্গুর কিনব।’

দ্বিতীজন ছিলেন আরব। তিনি বললেন,’না, আমি inab (পানীয়) কিনতে চাই।’

তৃতীয়জন ছিলেন তুর্কী। তিনি বললেন, ‘আমি ইনাব চাই না, আমি uzum (পানীয়) কিনতে চাই।’

চতুর্থজন ছিলেন গ্রীক। তিনি বললেন, ‘আমি stafil (পানীয়) কিনতে চাই।’

কারণ নামগুলির পিছনে কী রয়েছে তা তারা জানত না, এই চারজন লড়াই শুরু করল। তাদের কাছে তথ্য ছিল, কিন্তু কোন জ্ঞান ছিল না।

উপস্থিত বুদ্ধিমান এক ব্যক্তি এই সমস্তের সমাধান করার জন্যে বললেন, আমি এক টাকা দিয়ে আপনাদের সকলের চাহিদা পূরণ করতে পারি।

আপনি যদি সত্যই আমাকে বিশ্বাস করেন, আপনাদের একটি মুদ্রা চারটি হয়ে যাবে; আর আপনাদের মতবিরোধের সমাধান হয়ে যাবে।’

এই লোক জানতেন যে তারা সকলেই নিজের ভাষায় একই জিনিস চায়, যা আঙ্গুর দিয়ে তৈরি করা সম্ভব।

 

 

 

 

 

ছয়—
তিনটি মাছের গল্প, একটি অসাধারণ বুদ্ধিমান, অন্যটি মধ্যমমানের বুদ্ধিসম্পন্ন, আর তৃতীয়টি ছিল নেহায়েত বোকা।

কিছু জেলে জাল নিয়ে হ্রদে মাছ ধরতে এসেছিল। মাছ তিনটি তাদের দেখতে পেল।

বুদ্ধিমান মাছটি দীর্ঘ সমুদ্র পাড়ি দিয়ে গভীর সাগরে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। সে ভাবল, তার সিদ্ধান্ত বাকী দুটো মাছকে জানাবে না। কারণ তারা এই জায়গাটিকে ভীষণ ভালবাসে। সে যদি তার সংকল্পের কথা বলে তাহলে তারা তাকে কেবলমাত্র দুর্ব্বল করবে, গভীর সাগরে যেতে বারণ করবে। বুদ্ধিমান মাছটি জেলেদের দিকে তাকিয়ে কেবল বলল, “আমি যাচ্ছি”।

দ্বিতীয় মাছটি ভাবল বুদ্ধিমান মাছটি চলে গেছে। আমি তাকে অনুসরণ করে দূর সমুদ্রে যাওয়ার সুযোগ হারিয়েছি। কিছুক্ষণের জন্য সে বুদ্ধিমান মাছটি চলে যাওয়ার জন্য আফসোস করতে করতে ভাবছিল, কেমন করে সে জেলেদের কবল থেকে রক্ষা পেতে পারে। যদি মরে যাওয়ার ভান করে থাকে! তাহলে হয়তো এ যাত্রা রক্ষা পাবে। সে তাই করল।

জেলেদেদের একজন এটা দেখে বলল, দেখ! সবচেয়ে বড়ো মাছটা মরে গেছে। “একজন তাকে লেজ ধরে তুলে এনে মাটিতে ফেলে দিল।

তৃতীয় মাছটি, জালে আটকা পড়ে ভাবছিল, আমি যদি এখান থেকে বের হতে পারি তবে আর কখনও হ্রদের সীমায় আসব না। গভীর সাগরে সাঁতার কাটব! আর অসীমকে আমার ঠিকানা করে নেব।

 

 

 

 

সাত—
সেখানে চারটি শহর ছিল। প্রতিটি শহরেই মানুষ মারা যাচ্ছিল অনাহারে। প্রত্যেকটি শহরের ছিল এক বস্তা বীজ। প্রথম শহরটিতে কারোরই বীজ রোপণ করার কৌশল জানা ছিল না। তারা অনাহরেই রইল। দ্বিতীয় শহরে, একজন মাত্র ব্যক্তী জানতেন কীভাবে বীজ রোপণ করতে হয়। কিন্তু কোন অজ্ঞাত কারণে তিনি বীজ রোপণ করা থেকে বিরত ছিলেন। তারাও অনাহরেই রইল। তৃতীয় শহরের একজনের জানা ছিল বস্তাটিতে কি ধরণের বীজ রয়েছে এবং কীভাবে সেগুলি রোপণ করা যায়। তিনি নিজেকে রাজা কিংবা বা শাসক হিসাবে ঘোষণার বিনিময়ে বীজ রোপণের প্রস্তাব করলেন। এ শহরের সবাই বছর শেষে খাদ্য পেল, কিন্তু ঐ ব্যক্তির দ্বারা শাসিত হল। চতুর্থ শহরটিতেও, একজন ব্যক্তী জানতেন বীজ রোপণ করার কৌশল এবং বস্তাটিতে কি ধরণের বীজ রয়েছে। তিনি কেবল বীজ রোপণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করলেন না, সবাইকে চাষাবাদের বিদ্যা শেখালেন। এ শহরের সবাই খাবার পেল এবং সকলেই সমান মাত্রায় ক্ষমতায়িত হল।

 

 

 

 

আট—
হযরত বাহাউদ্দিন জাকারিয়া। মহান এক সাধক। অত্যন্ত বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন। হযরত বাহাউদ্দিন জাকারিয়ার মৃত্যুর পর তাঁর আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী হন পুত্র শায়েখ সদরউদ্দিন আরিফ।

তিনি নিজেও ছিলেন একজন মহান সাধক। তিনি তাঁর পিতার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সমস্ত বিলাস সামগ্রী দরিদ্রদের মধ্যে বিলিয়ে দেন এবং নিজে দারিদ্র্যের মধ্যে জীবনযাপন শুরু করেন।

একদিন এক শিষ্য এসে তাঁর কাছে পিতা এবং পুত্রের মধ্যে জীবনযাপনের বৈপরীত্য সম্পর্কে জানতে চাইলেন। জবাবে শায়েখ সদরউদ্দিন আরিফ বললেন, “আমার বাবা বিলাসিতার মধ্যে জীবনযাপন করতেন। কারণ বিলাস-বৈভব তাঁকে মোটেও প্রভাবিত করত না। আমি দারিদ্র্যের মধ্যে জীবনযাপন করি। কারণ, দারিদ্র্য আমাকে মোটেই প্রভাবিত করে না।”

 

 

 

নয়—
শহরের প্রান্তে এক বালক থাকত। কোত্থেকে সে এক ঢোল যোগাড় করেছিল। তারপর থেকে সারাদিন বিরামহীন ঢোল বাজাত।

শহরতলীর সবারই কান ঝালাপলা। কেউ কিছু বললে সে আমলেই নিত না। লোকজন তাকে নানানভাবে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ক্লান্ত হয়ে প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছিল।

কেউ কেউ তাকে ডেকে এনে পড়াশুনার পরামর্শ দিয়েছিল। কেউ কেউ তাকে আত্মমগ্ন হওয়ার বুদ্ধি দিল। কেউ কেউ তাকে ধ্যনস্থ হতে বলেছিল। কিন্তু তাতে বালকের অবিরাম ঢোলের বাজনা থামাতে তারা ব্যর্থ হয়েছিল।

অতপর এলাকার লোকজন কানে তুলো গুঁজে নিজের নিজের কাজে মনোযোগী হতে চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু কানে তুলো গুঁজে কি আর সব কাজ সারা যায়?

শেষে একদিন এক সুফী সাধক এলেন সেই শহরতলীতে। তিনি বালকটি এবং তার ঢোল বাজানোর বিড়ম্বনার কথা শুনলেন। এলকাবাসীকে আশ্বস্ত করলেন, ‘আপনারা দ্রুতই বালকটির ঢোলের অবিরাম বাজনা থেকে রেহাই পাবেন’।

সুফী সাধক বালকটিকে আদর করে কাছে ডাকলেন। তার কাছে জানতে চাইলেন, ‘তুমি যে ঢোলটি সারাদিন বাজাও, তার ভেতর থেকে কেমন করে বিরামহীন শব্দ হয়. তা জানতে তোমার ইচ্ছে হয় না’? বালক হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল।

তারপর তিনি বালকের হাতে তুলে দিলেন একটি মজবুত হাতুড়ী।

 

 

 

 

দশ—
নিজেদের যাত্রাপথে দু’জন দরবিশ একটা নদীর তীরে পৌঁছলেন। সেখানে তাদের সাথে দেখা এক যুবতীর। তিনিও নদী পার হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। নদীটি ছিল খরস্রোতা। যুবতী সাঁতরে নদী পার হতে ভয় পাচ্ছিলেন।

দরবিশদের সাক্ষাৎ পেয়ে তিনি খনিক আশ্বস্ত হলেন। খরস্রোতা নদীটি পার হতে তিনি দরবিশদের সাহায্য প্রার্থনা করলেন। দরবিশদের একজন যুবতীর এ প্রস্তাবে দ্বিধান্বিত হলেন।

অন্যজন কোন দ্বিধা না করেই তাকে কাঁধে তুলে নিলেন। তারপর তাকে নিয়ে সাঁতরে নদী পার হলেন। নদীর অপর পারে পৌঁছে যুবতী দরবিশকে ধন্যবাদ জানিয়ে নিজের গন্তব্যের দিকে যাত্রা করলেন।

দরবিশ দু’জন নিজেদের পথের দিকে এগুলেন। এর মধ্যে যে দরবিশ যুবতীটিকে নদী পার করানোর প্রস্তাবে দ্বিধান্বিত ছিলেন, তনি তার হতাশা হজম করতে না পেরে অন্যজনের কাছে জানতে চাইলেন।

“ভাই, আমাদের আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ নারীদের সাথে সকল সংস্পর্শ এড়াতে শেখায়, কিন্তু আপনি যুবতীটিকে আপনার কাঁধে তুলে নিয়ে নদী পার করালেন”!

দ্বিতীয় দরবিশ খুব শান্ত স্বরে উত্তর দিলেন, “ভাই আমি তাকে কাঁধে তুলে নদী পার করিয়ে দিয়েছি। আর আপনি তাকে এখনও আপনার ভাবনায় বহন করে চলেছেন।”

 

 

 

এগার—
কথিত রয়েছে, ঘটনাটি হযরত নিজামুদ্দিন আউলিয়ার কাছে শুনেছিলেন তাঁর অনুসারীরা।

একবার এক দরবিশ শায়েখ জুনায়েদ বাগদাদীর শরণাপন্ন হলেন। আকাশে তখন রমজানের বরকতময় মাসের নতুন চাঁদ উঁকি দিচ্ছিল। এসময় দরবিশের আগমন যেন রহস্যময় পবিত্রতার ইঙ্গিত নিয়ে এসেছিল।

আগন্তুক দরবিশ শায়েখকে অনুরোধ করলেন, তিনি যেন তাকে ‘তারাবীহ’ নমাযের ইমমতির অনুমতি দান করেন। শায়খ তাঁর অনুরোধ মঞ্জুর করলেন। প্রতি সন্ধ্যায় তিনি ‘তারাবীহ’ নামাজে পুরো কোরআন তিলাওয়াত করতেন।

শায়েখ দরবিশের থাকার জন্য একটি কক্ষ এবং প্রতি রাতের খাবারের জন্য এক টুকরো রুটি আর এক ঘটি পানি বরাদ্দ করলেন। শায়েখের হুকুম মতো দরবিশের কক্ষে এক টুকরো রুটি আর এক জগ পানি পৌঁছে দেয়া হত।

দরবিশ রমজানের তিরিশ সন্ধ্যা তারাবীহ নামাজ পড়ালেন। তারপর ঈদের দিন সকালে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিজের গন্তব্যের পথে রওয়ানা করলেন। দরবিশ চলে যাওয়ার পর তার কক্ষে না খাওয়া তিরিশ টুকরো রুটি পাওয় গেল। পুরো তিরিশ রোজাই এক জগ পানি ছাড়া আর কিছুই খাননি।

 

 

 

 

 


আরশাদ সিদ্দিকী
সম্পন্ন করে চলছেন এমন এক জীবন-পরিক্রমা, যেখানে আলো আছে সত্য; তবে বিষ-কণ্টকই অশেষ সেইখানে! ভারতভাগের আঘাতে বিপর্য্যস্ত হয়েছে তাঁর পিতৃপুরুষের জীবনের ভেতর-বাহির! সেই আঘাতের অপরিমেয় দংশন তাঁকেও সইতে হয়েছে! পেতে হয়েছে বিষ-জরজর শৈশব ও কৈশোর! এমনকী এই যে এখন— জীবনের মধ্যাহ্নে তিনি— এখনও প্রতি কদমে তাঁর জন্য বরাদ্দ হয়ে আছে কেবলই কাঁটার মুকুট! প্রচল-প্রথা-প্রতিযোগিতার প্রতি তুমুল অনীহ তিনি! এইসবকিছু তাঁকে ক্রমে নির্জন থেকে নির্জনতম করে তুলেছে ঠিকই; তবে সমষ্টির কল্যাণ বিমুখ করে তুলতে পারেনি কখনো! সমাজ-বিপ্লবের স্বপ্নতাড়িত আরশাদ সিদ্দিকী– প্রথম তারুণ্যে নিজেকে সম্পূর্ণ সমর্পণ করেছেন সক্রিয় রাজনীতিতে। দেখেছেন সেই বিশ্বেও কত রকমের ক্রুর নির্ম্মমতা বিরাজ করে! এবং সেই ক্রূরতা কতো রকমে তাঁকে আক্রান্ত করার শক্তি রাখে!

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার