নীলি চেরকোভস্কির কবিতা || ভাষান্তর : আরশাদ সিদ্দিকী

0

নীলি চেরকোভস্কি। জন্ম লস্ এঞ্জেলেসে। ১৯৪৫ সালে। পড়াশুনা লস্ এঞ্জেলেস স্টেট কলেজে। প্রথম কবিতার বই বেরোয় ১৯৯৬ সালে। প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর উল্লেখযোগ্য কয়েকটা হল জানোয়ার (১৯৯৬), সময়ের বিপরীত পাঠ (২০০৫) ক্যানিয়নের উজান থেকে (২০০৯), এবং কাক ও আমি (২০১৫)। নীলি, চার্লস বুকোওস্কির সাথে যৌথভাবে লস্ এঞ্জেলেসের কবিদের কবিতার সংকলন এবং বিল মোহ্র এর সাথে যৌথভাবে ক্রস-স্ট্রোকেস : লস্ এঞ্জেলেস এবং সানফ্রান্সিসকোর কবিদের কবিতার সংকলন সম্পাদনা করেছেন। অস্ট্রিয়া, তুরস্ক, মেক্সিকো এবং ইতালী থেকে নীলির কবিতার দ্বিভাষিক সঙ্কলন প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও নীলি লিখেছেন চার্লস বুকোওস্কি এবং লরেন্স ফার্লেনহেট্টির জীবনী। ১৯৭৪ সাল থেকে নীলি সানফ্রন্সিসকোতে বসবাস করেছেন। গেলো বছর পেয়েছেন জ্যাক মুলার কবিতা পুরস্কার।

 

 

বুদ্ধ

বুদ্ধ, তুমি কি পাথরের ওপর
আসন গেড়ে বসেছিলে?
গাছগুলো মেঘ ছুঁয়েছে
বিস্তীর্ণ তৃণভূমী থেকে
হরিণেরা খুঁটে নিচ্ছে ঘাস
সূর্য্যালোকের অস্পষ্টরেখা ছুঁতে
কিভাবে তুমি একটা হাত
না বাড়িয়ে থাকতে পার?

বুদ্ধ তোমার মাথার
ভেতর যে দেবতা
নড়েচড়ে ওঠেন,
মহান যোদ্ধা
যুদ্ধের আগে
ধনুর্বাণ বাঁকা করতে চায় না,

বোধহয় বৃষ্টির জন্য
অপেক্ষাই ভাল হবে
মাংসপিণ্ড বিদীর্ণ করে
তাকে পরাস্ত করার চেয়ে

বুদ্ধ তুমি
গোটা একটা বাগান,
লেবু, এভোকাডো, ফার্নসহ
নৃত্যরত আনন্দিত পরিপাটী ফুল
ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বৃক্ষের সমারোহ

বুদ্ধের স্বপ্নের শিশুদের
যখন প্রতিবেশী গোলাপে শোভিত করছে
গাড়ী চকচকে করে দিচ্ছে
নতুন টায়ার কিনে অনছে
ভীষণ বেগে রাজপথে নামতে

বুদ্ধ, তুমি
শিশুদের স্বপ্নে বিভোর
আশ্রয় চাইছ,
দশকের পর দশক ক্ষুধার্ত্ত,

দীর্ণ প্রাচীন পাথরে বসে
জাহান্নামে যাও,
ঝেঁটিয়ে আকাশ সাফ কর …

 

 

একজন কবি

একজন কবি
নিশ্চিন্ত মনে
ধীরপায়ে এগুলেন
২৬১ এভিনিউ ধরে
মাথায় টুপী
পরনে নিখুঁত
পরিপাটী লিভাইস

কবিই সর্বৈব
যিনি চেয়েছেন
শুধুই কবি হতে
আর বই বিক্রেতা হতে
আর প্রকাশক হতে
অন্য কবির
শিল্পীর
অনুবাদকের

সেই একজন কবি
যে লিখছে
১০০১ টা ভয়াবহ শব্দ
ফিদেল কাস্ত্রোর জন্য

জিজ্ঞাসা কর নেরুদা এবং দান্তেকে
জিজ্ঞাসা কর আমির বারাকাকে
এবং দিয়ানে দি প্রিমাকে
জেগে ওঠুন উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস
এডেনা সেন্ট ভিনসেন্ট মিলায়
কথা বলুন
অ্যালেন গিসবার্গের সাথে
যিনি বলবেন
“সেই একজন কবি, যে কখনও
অন্য কিছু
হতে চায়নি”

শুনো লি পো’কে
যিনি পান করতেন মোহিনী চাঁদ
আর সময়ের কাপে চুমুক দিতেন

কবিই বিশুদ্ধ এবং সহজ

শুনো এপোলিনিয়রকে
এবং জাঁক প্রিভারকে
জ্যাক হার্সম্যান হয়ত বলতে পারেন,
“সে এক মহান হিরণ পাখী
উড়তে চেয়েছে পাহাড়ের ওপর”
সে একজন কবি
বিস্ময়তাড়িত অস্থির

তরুণ লেখকদের
প্রথমবারের মত
পড়তে বল
“অ্যা কোনী আইল্যান্ড …”

 

 

তোমার জন্য

তোমার চুলের জন্য
বুনো ফুল
তৃণপ্রমা

আর হয়ত
একটা মৌমাছী চলে গেছে
পাগলের মত
কেবল একটা মৌমাছী হতে

আমাদের কেউ কেউ
প্রচুর মধু
খুঁজে পেতে
মাটির হাঁড়ী
হাতড়াচ্ছিল
সাইকেডেলিক ধাঁধায়

আমরা সুড়ঙ্গ খুঁড়তে খুঁড়তে
চলে এসেছি ৯০-এ
তারার মেলায়
ক্লান্তিকর সড়কে
যেখানে কেউ আমাদের
বিশ্বাস করে না

আমরা টিকে ছিলাম
গোলাপ চারায়
জল দিতে, আর
বীজ ছিটাতে
আমাদের বাগানে
একটা খঞ্জনার জন্যে
আশার সীমানা
সাজিয়েছিলাম
সবকিছুকে
অর্থ পূর্ণ করতে

 

 

 

 

আরশাদ সিদ্দিকী
সম্পন্ন করে চলছেন এমন এক জীবন-পরিক্রমা, যেখানে আলো আছে সত্য; তবে বিষ-কণ্টকই অশেষ সেইখানে! ভারতভাগের আঘাতে বিপর্য্যস্ত হয়েছে তাঁর পিতৃপুরুষের জীবনের ভেতর-বাহির! সেই আঘাতের অপরিমেয় দংশন তাঁকেও সইতে হয়েছে! পেতে হয়েছে বিষ-জরজর শৈশব ও কৈশোর! এমনকী এই যে এখন জীবনের মধ্যাহ্নে তিনি— এখনও প্রতি কদমে তাঁর জন্য বরাদ্দ হয়ে আছে কেবলই কাঁটার মুকুট! প্রচল-প্রথা-প্রতিযোগিতার প্রতি তুমুল অনীহ তিনি! এইসবকিছু তাঁকে ক্রমে নির্জন থেকে নির্জনতম করে তুলেছে ঠিকই; তবে সমষ্টির কল্যাণ বিমুখ করে তুলতে পারেনি কখনো! সমাজ-বিপ্লবের স্বপ্নতাড়িত আরশাদ সিদ্দিকী— প্রথম তারুণ্যে নিজেকে সম্পূর্ণ সমর্পণ করেছেন সক্রিয় রাজনীতিতে। দেখেছেন সেই বিশ্বেও কত রকমের ক্রুর নির্ম্মমতা বিরাজ করে! এবং সেই ক্রূরতা কত রকমে তাঁকে আক্রান্ত করার শক্তি রাখে!

{নীলি চেরকোভস্কির কবিতা || ভাষান্তর: আরশাদ সিদ্দিকী [বঙ্গীয় শব্দকোষ (শ্রী হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়), বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ, ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক শব্দার্থ বিধি (কলিম খান-রবি চক্রবর্ত্তী) ও প্রকৃতিপুরুষ ভাষাদর্শন অনুসৃত] চারবাক-এর বানান রীতিতে (যথাসম্ভবভাবে) সম্পাদিত ও প্রকাশিত হল।
— সম্পাদকীয়}

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার