অন্যদেশ থেকে বিয়ে করে আনলি? তাতে আপত্তি নেই।
তবে নিজের মেয়ের বয়সের?
তাও তালাকপ্রাপ্ত?
এ বিয়ে টিকবে তো? মায়ের হাজার সংশয়।
রঞ্জু উত্তর দিল—
কেন মা, তোমাদের বয়সের হলে কি আপত্তি থাকত না?
যতদূর জানি ঠাম্মার এ বাড়িতে এসে দাঁত পড়েছিল।
আর এমন কেন ভাব তোমাদের মূল্যবোধই ঠিক। বিয়ে সারা জনম না টিকলেই কী? অন্ততঃ কপটতা, শীতলতা নিয়ে অভিনয় করার চেয়ে আলাদা খারাপ কী?
এই একগামী বিয়ের অজুহাতে সমাজে ভন্ডামী কি কম হয়েছে?
ঘরে বিবি রেখে বাইরে লাইসেন্সবিহীন অবাধে যৌনাচার চলছে। এমনকি সহমরণে যেতে হয়েছে।
ব্রোথেল তৈরী হয়েছে।
বিরক্ত হয়ে মা বলল—
তুই কী বলিস? মানুষ একজন আরেকজনের হয়ে বিশ্বস্ত থাকতে পারে না? আমি আর তোর ঠাম্মা কি সুখী নই?
রঞ্জু শুকনো হাসি দিয়ে বলল—
হ্যা। অবশ্যই সুখী। তবে এটা যখন নিয়ম হয়ে যায় তখনই কম্প্রোমাইজ হয়।
হৃদয়, আত্মার মিলন না হলেও একসাথে থাকতে হয়।
মা অবজ্ঞা করে—
বুঝেছি রুশোর ‘listen to your heart, do what your mind wants’ এই লিবারেলিজম এর প্রভাব পড়েছে এ জাতির ওপর।
দ্যাখ, বাবা এই এক্সপেরিমেন্টের কারণে পশ্চিমা সমাজের বন্ধন বলতে কিছু নেই।
রবিনসনের গল্পটা পড়িসনি?
নিজেকে সব বন্দিত্ব থেকে মুক্ত করার জন্য একা দ্বীপে চলে গিয়েও সেই স্বাধীনতা পেল না।
তাকেও অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে।
রঞ্জু বলল—
মা, তুমি শুধু মুদ্রার এপীঠই দেখলে। তুমি এই যে সততার কথা বলছ। তুমি জান? incestuous relation এই রক্ষণশীল সমাজেই বেশী। ধর্ষণও অহরহ হচ্ছে। western culture-এ তুমি টীজ করে দেখ,
আইন নারীর কতটা পক্ষে আর এদেশে তো বুড়োরার হাত থেকেও রেহাই পায় না। আশ্রম, মাদ্রাসায় সমকাম, ধর্ষণ হয়। সমাজ ব্যবস্থায় কিছু তো গলদ হচ্ছে।
আমি ও মৈত্রী অন্তত কোন কপটতা, ভন্ডমী ছাড়াই বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছি। যতদিন একসাথে আছি,
পুরো প্রেম, আত্মা দিয়েই পরস্পরের জন্য বাঁচব।”
রঞ্জু বলতে লাগল—
“মা, বন্ধন ছিন্ন হওয়ার পিছনে আরো অনেক অনুসঙ্গ কাজ করে। শিকারী যুগে একসাথেই চলত।
কৃষিযুগ যখন শিল্পযুগের সাথে হাত মেলাল তখন বাজার অর্থনীতির প্রসার হল। মানুষ ভেজাল, প্রতারণা, এবং ভোগবাদে মত্ত হল।
মা, আমরা একটা নতুন মূল্যবোধ, ধ্যানের বিবর্ত্তনের ভিতর দিয়ে যাচ্ছি।’
তিনহাজার বছর ধরে বিভিন্ন বিয়ে প্রথার মধ্য দিয়ে আজকে যে একবিবাহ প্রথা আছে—
এটা যে টিকে থাকবে তা নিশ্চিত নয়। এবং আশলে প্রেমহীন সম্পর্ক পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ না থাকলে একটা প্রতিষ্ঠান টেনে কতদিন টিকে রাখা যায়?
বরং ভালবাসা থাকলে বিয়েটাও জরুরী কি না তা খতিয়ে দেখা দরকার।
মা, একটা বিষয় বল তো, এই সাবকন্টিনেন্টে নারীরা কত পরিবার যৌনসুখ, অধিকার, আদর, সোহাগ না পেয়ে নীরবে সংসার করছে জান?
এ নিয়ে অনেক ডেইটা আছে বিভিন্ন সংস্থার।
একবিবাহ প্রথা টিকে রাখতে হলে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ দরকার।
মা রঞ্জুর দিকে আনমনে তাকিলে থাকল … বুঝার চেষ্টা করছে, রঞ্জুদের মূল্যবোধ …
মাহবুবুল ইসলাম
জন্ম: ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৮১। পৈতৃক নিবাস— মাধবপুর, হবিগঞ্জ। প্রকাশিত গ্রন্থ: জল ও জলোচ্ছ্বাস (কবিতা) (প্রকাশ সাল— ২০১৯, প্রকাশক— চয়ন)। শিশির-হরফ (কবিতা) (প্রকাশ সাল— ২০২০, প্রকাশক— চারবাক)।