চর্যাপদের কবিতা (চতুর্থ কিস্তি)

0

চারবাকের সোমবারের আয়োজন চর্যাপদের পাঁচটি কবিতা । আজ প্রকাশিত হলো চতুর্থ কিস্তি (১৬ থেকে ২০)।
-সম্পাদক, চারবাক

চর্যাপদ । চারবাক

ত্রিধারায় অনাহত শব্দ বাজে
গর্জে ওঠে যেমন ঘন মেঘ
তা শুনে ভয়ঙ্কর শয়তান
লুটে নেয় সকল আবেগ

পাগলা গনেশ
তৃষ্ণার ঘোরে ছুটছে নিরন্তর
উফ! গুলিয়ে ফেলে গগণ প্রান্তর

পাপ পূণ্যের শিকল ছিঁড়ে
বেরিয়ে আসা চাই
আকাশজুড়ে মুক্তির বারতা
এর তো বিকল্প নাই

রসে রসে ব্যাকুল হৃদয়
উপেক্ষিত ত্রিভুবন
পঞ্চইন্দ্রিয়ের হর্তাকর্তা
পরস্পরের আপনজন

সূর্যের উত্তাপে মহীধর
আকাশপানে ধায়
ডুবলে কিছুই যায় না দেখা
আনন্দে কাতরায়

১৭.
সূর্য; লাউয়ের ডুগডুগি
আর চন্দ্র তাতে তার
অনাহত দণ্ড হল
চক্র নায়িকার

সই, কান পেতে শোন
হেরুকের বীণা ওই
এ ধ্বনি শূন্যতন্ত্রীর নয়
যেন ফুটেছে সুরের খৈ

এ বীণায় দুই সুর আলি ও কালি
গজবর সোমরস গুণে গুণে সন্ধি

আঙুলের জাদুসমেত টোকা যখন পড়ে
বত্রিশ তার-ধ্বনি নাচতে শুরু করে

বাউল এবার নৃত্য ধরে
দেবীর মুখে গান
বুদ্ধ নাটকের হয়ে গেল
এই তো অবসান

১৮.
অবহেলায় কেটে গেল ত্রিভুবন
চোখজুড়ে এখনও সুখ শিহরণ

ডোম্নী, তোর চালাকির পাই না হদিস
বাইরে স্বামী, ভেতরে ভাতার রাখিস

সবকিছু ধ্বংসের তুই-ই মূল
আকাশের ঐ চাঁদ আকূলব্যাকূল

লোকে তোকে নষ্টা কয়, যদিও অকারণ
গলায় হার করে রাখে আবার গুণীজন

কানু বলে, কামাতুর তুই চণ্ডালি
এ দুনিয়ায় তোর মত নাই ছিনালি

১৯.
সংসার ও সংসার থেকে মুক্তি হল
ধরা যাক, পটহ ও মাদল
মন ও পবন তাহলে কাসি আর ঢোল

বাজে বিজয়ের দুন্দভি, বাজে
কানু ডোম্নী দুজনেই বিয়ের সাজে

মান ইজ্জত গেল কানুপাগলার
যৌতুক পেলো ধর্মের আচার

যোগিনীর প্রেমজালে রাত কেটে ভোর
প্রাণ যায়, তবু ছাড়ে না ডোম্নীর ঘোর

২০.
নিরাশার নীল বিষে আটকে গেছে গলা
আমার এ ভোগসুখ যায় না যে বলা

আতুড় ঘরে প্রসব করে তাকিয়েছি যেই
মাগো, যাকে চেয়েছি সে তো এখানে নেই

পুত্রের স্বপ্ন দেখে এসেছি সারাটা জীবন
নাড়ী বিশ্লেষণ করে দেখি উল্টো ভীষণ

ষোলকলায় পূর্ণ যখন আমার এ যৌবন
নিজ খন্তার কোপে বৃদ্ধ পিতার ঘটল মরণ

কুক্কুরী বলে, সুস্থির এ নিত্য সংসার
বীরের ক্ষমতা হল সবকিছু বুঝে নেয়ার

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার