‘বিনোদবিহারী চৌধুরী’ বৃটিশবিরোধী আন্দোলনের শেষ জীবিত দলিল || সাক্ষাৎকার গ্রহণে— মজিব মহমমদ, সহায়তায়— আরণ্যক টিটো ও অলক চক্রবর্তী

0

যদ্দুর জানি, দিনটি বোধহয় শনিবার ছিল, ছিল ঘুটঘুটে অমাবশ্যাও। আট কি সাড়ে আট’টা বাজে তখন। ভীষণ ভীতসংকুল চট্টগ্রামের অভয়মিত্র শ্মশানঘাটে ভূতপ্রেতের ভয়ে দিনের বেলায়ই যেখানে কেউ যেতে-আসতে সাহস করত না, সেখানে বিপ্লবি মন্ত্রে দীক্ষিত এক ১৯ বছরের বালক-যুবক দুরুদুরু বুকে অপার বিস্ময় নিয়ে মাস্টারদা সূর্যসেনের অপেক্ষা করছেন, দেখা করবেন তাঁর সঙ্গে, বিপ্লবি দলে যোগ দিয়ে পরাধিনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করবেন নিজের দেশ, প্রতিশোধ নেবেন ইংরেজদের নানা অত্যাচার আর নির্যাতনের, আগুনঝরা ঐসব দিনের কথা ভেবে, এখন, যখন আপনি রাজনৈতিক অস্থিরতা আর রাজনীতিবিদদের বোধহীন আস্ফালনে ত্যক্ত-বিরক্ত, নীতিনির্ধারকদের দায়িত্বহীনতায় দেশ যখন ডুবোডুবো আর টালমাটাল, চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছেন কিভাবে চুপসে যাচ্ছে মধ্যবিত্তের স্বপ্নের বেলুন, দেখছেন বিশ্বায়ন আর ঋণপ্রদান শর্তে কিভাবে আপনার আমার হাত-পা বেঁধে দিচ্ছে আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ, আর এর প্রতিবাদে যেখানে আমাদের আরো সোচ্চার হওয়ার কথা, মুখরিত প্রতিবাদে এক-একটি সুতীব্র বোমার মতন ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেটে পড়ার কথা এবং তা অবশ্যই দরকার, অথচ তখন আমরা ভিরুতা আর কাপুরুষতা আর দ্বিধা নিয়ে একেকজন নিজের ভেতরই কেমন সেঁটিয়ে যাচ্ছি দিনের পর দিন, অনুগ্রহ করে বলুন কিভাবে এ অবস্থার সামাল দিচ্ছেন?

‘সামাল’ শব্দটির ব্যবহার খুবই প্রতিকি। এটা ঠিক, মাস্টারদার সঙ্গে আমার যেদিন শ্মশানঘাটে দেখা করার কথা, রাত তখন থমথম করছে, তার ওপর আবার ছিল শনিবার! ভূতপ্রেত নিয়ে এতদিনকার শুনে আসা বারোরকমের কথা উপকথায় জট পাকিয়েই অমন হয়েছিল কি-না কে জানে? সত্যি বলছি, এদিক ওদিক হাঁটছিলাম ভয়ে ভয়েই। হঠাৎ করেই পিঠে হাতের স্পর্শ পেয়ে ভীষণ চমকে গেলাম, ফিরে তাকিয়ে দেখি এক ভদ্রলোক, দেখতে কিছুটা খাটো, সাদা ধুতির ওপর সাদা পাঞ্জাবি অন্ধকারে ফুটে উঠেছিল। অনিঃশেষ মুগ্ধতা নিয়ে তাকে দেখতে লাগলাম। ইনিই তাহলে বিখ্যাত বিপ্লবি মাস্টারদা সূর্যসেন! সামনাসামনি সেটাই ছিল আমার প্রথম সাক্ষাৎ। তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, কিরে ভয় পেয়েছিস? ভয়ের কথা স্বীকার করলাম অসংকোচে। ভয়ে তো আমি কাঠ কাঠ। তারপর তিনি আমাকে নানা রকম প্রশ্ন করতে লাগলেন। জীবনকে বাজি রেখে কেন আমি বিপ্লবি দলে যোগ দিতে চাই, চৌদ্দ আনাই তো পড়ে রয়েছে সামনে, তাহলে কেন এ ঘোর-লাগা, ইত্যাদি ইত্যাদি। বিপ্লবি দলে আমি যেন যুক্ত না হই, সেজন্য আমাকে বোঝাতে লাগলেন আরো জোরাল ও প্রাঞ্জল ভাষায়। কিন্তু আমিও তখন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, যেকোনো প্রকারেই হোক আমাকে বিপ্লবি দলে ঢুকতে হবেই। কি আর করা, বিনয়ি কণ্ঠে ঝনঝন করে উঠলাম আমি, একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে বিপ্লবি দলে ঢুকে ইংরেজদের অত্যাচার আর নির্যাতনের প্রতিশোধ নিতে চাই, আপনি দয়া করে আমাকে নিরুৎসাহিত করবেন না। শুনে স্মিত হাসলেন সূর্যসেন। এরপর আরো বহুবার দেখা হয়েছে আমাদের। ঐ প্রথম দিনই আমি বুঝে গিয়েছিলাম এ লোক কঠিন লোক। ইস্পাতকঠিন সংকল্প তাঁর কথাবার্তায়, ব্যক্তিত্ব অসাধারণ, কণ্ঠটাও চমৎকার। ভরাটকণ্ঠে তিনি আমাকে বহুরকমের হিতোপদেশ দিয়েছিলেন, কিন্তু আমাকে দমাতে পারেননি নেতিবাচক কথায়। এক সময়ে আমাকে দলে নিতে সম্মত হলেন। বিপ্লবিদের খাতায় ‘নাম’ উঠল আমার। আজ বিশ্বায়নের কথা উঠেছে, ‘রোডম্যাপ’-এর নামে দুর্বলতর দেশসমূহের সার্বভৌমত্ব ঝুলছে সুতার ওপর, আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ, তৃতীয়বিশ্বের অন্যান্য দেশের কথা আমি হয়ত সঠিকভাবে বলতে পারব না, যে দেশের জন্য আমাদের এত ত্যাগ-তিতিক্ষা, এত রক্তক্ষয়, এত আন্দোলন-সংগ্রাম, সে দেশের প্রেক্ষিতে আমাকে আজ দুঃখের সঙ্গেই বলতে হবে অন্যকথা। বিশ্বব্যাংকের কথাই যদি ধরি, দারিদ্র্যবিমোচন কিংবা অন্য কোনো প্রকল্পের নামে ভারত কিংবা চিনকে, কিংবা সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াকে সে যা গছাতে চায়, স-বটা কি পারছে? পারছে না। কারণ কি? এ প্রশ্নের জবাবের মাঝেই আমার যা বলা তা লুকিয়ে আছে। এই দেশ দু’টি (এ ছাড়াও, এক্ষেত্রে আরো অনেক দেশের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে) বলা যায় শক্ত একটা অর্থনৈতিক ভিত্তি পেয়েছে। আমাদের যা কিছু গিলতে বলা হচ্ছে, গোগ্রাসে তাই-ই গিলছি। বিশ্বব্যাংকই বল আইএমএফ-ই বল, কিংবা এনজিওদের কর্মকাণ্ডের কথাই ধর, সবাই তো ব্যবসা করতেই এসেছে। শর্ত-টর্ত তো দেবেই। প্রতিরোধ কি এমনি এমনি হয়, মাথা লাগে না? জন্মের আগেই তো আমাদের মাথা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।

এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে বাঁচব কি করে?

বাঁচার পথও নিশ্চয়ই আছে। রাজনৈতিক নেতাদের হয় এসব সমস্যা সমাধানে সদিচ্ছার অভাব আছে নয়ত কোনো যোগ্যতাই নেই। আমি তো বলি, রাজনৈতিক বিপ্লব দিয়েই আমাদের এগোতে হবে সামনের দিকে।

সংঘর্ষ কি তাহলে অনিবার্য হয়ে পড়ছে না?

সংঘর্ষ যদি অনিবার্য হয়, হবে। দুধমাখা ভাতও খেতে চাইবে, কাকও তাড়াবে না, তা কি হয়?
ভাতও চাই, কাকও তাড়াতে চাই, তবে তা যে শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিপ্লবের মাধ্যমেই সম্ভবপর, আমরা তা মনে করি না। আমরা মনে করি, এক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক বিপ্লবেরও যথেষ্ঠ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
এক পায়ে কিংবা এক চাকায় কি চলা যায়, যায় না। তেমনি রাজনৈতিক কিংবা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কোনোটিই একার পক্ষে দেশের এতবড় জটিল সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। আমাদের আসলে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

ইংরেজদের বিরুদ্ধেও দাঁতভাঙা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন, এ বিষয়টা আপনার মাথায় কিভাবে ঢুকল?

আমার বাবা পেশায় একজন উকিল ছিলেন। তাঁর তখন বেশ নামডাক। ’২১ ও ’২২ সালে যখন ভারতব্যাপি অসহযোগ আন্দোলন হচ্ছিল বাবা কামিনীকুমার চৌধুরী সেই আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। আমি ছিলাম তাঁর সার্বক্ষণিক সঙ্গি। বয়স তখন কত আর হবে আমার, এগার কি বার। বাবা বিলেতি কাপড় ছেড়ে খদ্দর পড়তে শুরু করলেন। শুধু যে নিজে পড়তেন, তাই-ই নয়, আমাদের সব ভাইবোনদের, এমনকি পাড়া-প্রতিবেশিদেরও খদ্দরের কাপড় পড়তে উদ্বুদ্ধ করতেন। মূলত তখন থেকেই আমার মধ্যে স্বদেশপ্রেম জেগে উঠে। দেশপ্রেমের বীজ এই যে সূচিত হল অন্তরে, তা আরো বেগ পায় যখন আমার বয়স ষোল। তখন আমি বোয়ালখালি থানার সারোয়াতলি হাইস্কুলে পড়ি। হঠাৎ একদিন বিপ্লবি রামকৃষ্ণের সাথে পরিচয় ঘটে আমার। তার ছিল অনাড়ম্বর ব্যক্তিত্ব। তিনিই আমাকে সর্বপ্রথম বিপ্লবি দলে যোগ দিতে দারুণভাবে প্রেরণা যুগিয়েছেন। এর দুই-তিন মাসের মধ্যেই যেসব বিপ্লবিদের সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটে, তাদের মধ্যে মধুসূদন দত্ত, তারকেশ্বর দস্তিাদর প্রমুখ ছিলেন অন্যতম।

মাস্টারদা’র সঙ্গে আপনার সাক্ষাৎ হতে যাচ্ছে-এ সংবাদটা আপনি প্রথম পেয়েছিলেন একজন বন্ধুর মাধ্যমেই, তাই না?

হ্যাঁ।

বন্ধুর নামটা কি মনে পড়ছে এখন?

না, মনে পড়ছে না।

দেখা হওয়ার পূর্বে নিশ্চয়ই কিছুটা আবেগান্বিত হয়ে পড়েছিলেন?

কিছুটা? বলতে পার, ভীষণ, ভীষণভাবে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম। আমি যখন আনুষ্ঠানিকভাবে দলে যোগ দেই, সূর্যসেন তখন ১৯২৪ সালে ভারত রক্ষা আইনে গ্রেফতার হয়ে জেলে গেছেন। ২৮ সালের শেষের দিকে তিনি ছাড়া পান। তার সঙ্গে দেখা হওয়া দুরূহ ব্যাপার। তাছাড়া সবার সঙ্গে তিনি দেখাও করেন না। অবশ্য জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার দু’মাস পরের কোনো একদিন সারিয়াতলি গ্রামে আসেন তিনি, কিন্তু তখন আমি দলিয় কাজে অন্যত্র অবস্থান করি। এ কারণে, তখন আর তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হয়নি। তবে অপেক্ষার ‘সেই’ যন্ত্রণাটা শেষ হয় ১৯২৯-এ এসে। একদিন হঠাৎ আমার এক বিপ্লবি বন্ধু এসে বললেন, আমাকে রাত আট’টায় অভয়মিত্র শ্মশানঘাটে যেতে হবে। আমার সঙ্গে মাস্টার’দা দেখা করবেন। কথাটা শুনে প্রথমে আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না, পরে যখন ধাতস্থ হই, একটুও বাড়িয়ে বলছি না, তখন দেখি কাঁপছে আমার পুরো শরীর।

প্রীতিলতাকে নিয়ে আপনাদের সেই সময়কার ধারণাটা কেমন ছিল?

আমার সাথে প্রীতিলতার সাক্ষাৎ হয়নি। যতটুকু জানি, সে ছিল মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে। দলের নীতি ছিল, কোনো নারী-বিপ্লবি দলে থাকতে পারবে না। কঠোর নিষেধ ছিল সূর্যসেনের।

কারণ?

পাছে তাঁদের প্রতি দুর্বলতা জন্ম নেয়, মূল কাজটাই তো তখন ভেস্তে যাবে।

সূর্যসেনের নামের আগে ‘মাস্টারদা’ বিশেষণটি কেন ব্যবহার করা হয়?

হরিশচন্দ্র দত্ত নামে এক কংগ্রেসভক্ত চট্টগ্রামের নন্দনকাননে ন্যাশনাল স্কুল নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। সূর্যসেন ছিলেন এ স্কুলের অংকের মাস্টার। আর এ কারণেই তার নামের আগে ‘মাস্টারদা’ বিশেষণ।

সূর্যসেনের জীবনের সংক্ষিপ্ত ঘটনাক্রমগুলো জানার আগ্রহ আমাদের মতো প্রতিটি বাঙালির, যদি বলতেন…

সূর্যসেনের জন্ম ১৮৯৩ সালের ১৮ অক্টোবর, চট্টগ্রামের নোয়াপাড়ায়। ১৯১৮ সালে চট্টগ্রামে ভারতিয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন, ১৯২৩ সালে গড়ে তোলেন কয়েকটি বিপ্লবিচক্র (যুগান্তর)। বিপ্লবিদের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্রের ও অন্যান্য উপকরণের অভাব দূর করতে প্রত্যয়ি হন। ১৯৩০ সালে লুণ্ঠন করেন চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার। ১৯৩৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তার গোপন
আস্তানার খবর ফাঁস হয়ে গেলে তিনি ব্রিটিশ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। ওই বছরের আগস্টেই ‘ইতিহাসের সূর্য’ সূর্যসেনের ফাঁসি কার্যকর হয়।

এবার আমরা আপনার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কিছুক্ষণ আলাপ করতে পারি। বিয়ের দিনেও না-কি গ্রেফতার হয়েছিলেন একবার?

এই বাড়িতেই আছি ৬৩ বছর (বাড়িটি চট্টগ্রামের মোমিন রোডে অবস্থিত)। সেদিনের কথা মনে পড়লে আজও আমি কিছুটা অন্যমনষ্ক হয়ে পড়ি। বিয়ে করে এখানেই নিয়ে এসেছি স্ত্রীকে; যেই ঘরে তুলতে যাব, দেখি আমাকে ঘিরে হাঁকডাক পাড়ছে সশস্ত্র পুলিশের একটি দল। আমি না হয় বিপ্লবি, থানা পুলিশেও অভ্যস্ত, (কথার মাঝেই স্ত্রী বিভা চৌধুরী স্বামীকে স্নানের জন্য তাগাদা দিতে আসেন, তখন তাকে নির্দেশ করে) তখন এই বেচারির অবস্থাটা কেমন ছিল, বুঝতেই পারছো?

এ জন্য নিশ্চয়ই আপনার অশেষ কৃতজ্ঞতা, তার প্রতি?

কৃতজ্ঞতার অন্ত নেই। এ কথা আমি বহুবার, বহু জায়গায় বলেছি, তার এ ঋণ আমি অন্তত এই জীবনে শোধ দিয়ে যেতে পারব না।

এ বিষয়ে কিছুক্ষণ পরে আবার আলাপ হবে। এবার আমরা ব্রিটিশ শাসন থেকে চট্টগ্রাম যে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত ছিল ৪ দিন; এ ব্যাপারে কিছু শুনতে চাই।

’৪৭ সালের ভারত উপমহাদেশ ভাগ, ’৭১ সালের চূড়ান্ত স্বাধীনতা অর্জনের আগেও আমরা স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিরাম। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রামে ব্রিটিশ শাসকের সব ঘাঁটির পতনের পরে মাস্টার’দার নেতৃত্বে চট্টগ্রামে স্বাধীনতার ঘোষণা করা হয়। ঐ দিন রাতেই শহরের নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে চলে আসে। পতন ঘটে ব্রিটিশ আধিপত্যের। নেতাকর্মীরা দামপাড়া পুলিশ লাইনে সমবেত হয়ে জাতিয় পতাকা উত্তোলন করে এবং মাস্টার’দাকে প্রেসিডেন্ট ইন কাউন্সিল, ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি চিটাগাং ব্রাঞ্চ বলে ঘোষণা করে। রীতিমতো মিলিটারি কায়দায় কুচকাওয়াজ করে মাস্টার’দাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তুমুল বন্দেমাতরম ধ্বনি ও আনন্দ-উল্লাসের মধ্যে এ অভিষেক অনুষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশশাসন থেকে চট্টগ্রাম মুক্ত ছিল ৪ দিন। ঐ ঘটনা পরবর্তী ব্রিটিশ বিরোধি আন্দোলনে টনিকের মতো কাজ করে। ওরাও পরে শক্তি সঞ্চয় করে বিপ্লবিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।

১৯৩০ সাল, ১৮ এপ্রিল, রাত ১০টা, চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন… সেই স-ব স্মৃতি আপনাকে আজ কিভাবে নাড়া দেয়?

সেসব দিনের কথা আজ যখন মনে পড়ে, প্রথমে একটু ঘোরের মতন লাগে, তারপর ধীরে-ধীরে ধাতস্থ হয়ে পড়ি। ১৮ এপ্রিলকে ৪টি এ্যাকশন পর্বে আমরা প্রথমেই ভাগ করে নেই। প্রথম দলের দায়িত্ব ছিল ফৌজি অস্ত্রাগার আক্রমণ করা, দ্বিতীয় দলে ছিল পুলিশ অস্ত্রাগার দখল, তৃতীয় দলের ছিল টেলিগ্রাফ ভবন দখল, আর চতুর্থ দলের দায়িত্ব ছিল রেললাইন উৎপাটিত করা। আমি ছিলাম দ্বিতীয় দলে অর্থাৎ পুলিশ অস্ত্রাগার দখল করাই ছিল আমার কাজ। মাস্টার’দা আমাদের সবাইকে ডেকে যার যার দায়িত্ব বুঝিয়ে ছড়িয়ে পড়তে বললেন। আমার ও জন-দশেকের দায়িত্ব ছিল দামপাড়া পুলিশ লাইনের আশেপাশে ওঁৎ-পেতে থাকা। যথাসময়ে যথাস্থানে মিলিটারি পোশাকে আমরা সবাই উপস্থিত হলাম। সঙ্গে ছিল আলমারি ভাঙার জন্য মাত্র দুইখান শাবল। কথা ছিল রাত ১০টার দিকে আরেক গ্রুপ পাহাড়ে উঠে প্রহরিদের আটক করবে আর বন্দেমাতরম বলে চিৎকার করবে। এই চিৎকারের সঙ্গে সঙ্গে আমরা যারা জঙ্গলের চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিলাম তারাও একযোগে বন্দেমাতরম চিৎকার করে পাহাড়ে উঠে যাব। দুরু দুরু বুকে অপেক্ষা করছি। তখনো জানি না আমাদের মিশন কতটুকু সফল হবে। এই প্রথম এ রকমের একটি অপারেশন করছি। এমন সময়ে হঠাৎ করে উপর থেকে বন্দেমাতরম চিৎকার শুনি আমরা, পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ি সঙ্গে সঙ্গেই যারা জঙ্গলে লুকিয়ে ছিলাম তারা একযোগে বন্দেমাতরম চিৎকার দিয়ে পাহাড়ে পৌঁছে গেলাম। শত্রুরা আমাদের চিৎকার শুনে হয়ত ভেবেছিল আমরা সংখ্যায় অ-নেক হব, তারা তাই পালিয়ে গেল। পুলিশলাইনের ভেতরে ঢুকে শাবল দিয়ে আলমারি ভেঙে রাইফেল-বারুদ নিয়ে নিলাম। আর যা আমাদের প্রয়োজন হবে না বলে মনে হয়েছিল তখন, তা সবই আগুনে জ্বালিয়ে দিলাম। আমাদের হাতে তখন প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র, যা পরে জালালাবাদ যুদ্ধে কাজে লেগেছিল ভীষণভাবে।

এবার জালালাবাদ যুদ্ধ সম্পর্কে কিছু বলুন।

এটা আমার জীবনের প্রথম সম্মুখযুদ্ধ। আমরা তখন দলে ৫৪ জন। তিন দিন আত্মগোপন করে আছি। পাহাড়ি গাছের দু’একটা আম ছাড়া কারো পেটে কোনোকিছু পড়েনি। এর মধ্যেই একদিন বিকালে অম্বিকাদা কিভাবে যেন এক হাঁড়ি খিচুড়ি নিয়ে হাজির। আমরা তো অবাক। ওইদিন ওই খিচুড়ি আমাদের কাছে মনে হয়েছিল অমৃত। এর আগে অস্ত্রাগারে আগুন লাগাতে গিয়ে হিমাংশু সেন বলে এক বিপ্লবি অগ্নিদগ্ধ হয়। তাকে নিরাপদ স্থানে রাখার জন্য অনন্ত সিংহ, গনেশ ঘোষ, আনন্দ গুপ্ত, মাখন ঘোষাল দামপাড়া ত্যাগ করেন। এ ঘটনার পর তৎকালিন চট্টগ্রাম জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সমুদ্রবন্দরের বিদেশি জাহাজ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে সৈন্য নিয়ে আমাদের আক্রমণ করে। কিন্তু লোকনাথ বলের নেতৃত্বে আমরা এর যোগ্য জবাব দেই। এদিকে অনন্ত সিংহ ও গনেশ ঘোষ ফিরে না আসাতে মাস্টার’দা অন্যান্যদের সঙ্গে পরামর্শ করে দামপাড়া ছেড়ে নিকটবর্তী পাহাড়ে আশ্রয় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ২১ এপ্রিল রাতেও তাদের সঙ্গে যখন কোনো যোগাযোগ করা গেল না, তখন আর কি করা, ভোর রাতের দিকে আমরা সবাই পুনরায় শহর আক্রমণের উদ্দেশ্যে ফতেহাবাদ রওয়ানা দেই। মাস্টার’দা আমাদের ডেকে বললেন, যেকোনো প্রকারেই হোক আমরা আমাদের কর্মসূচি পালন করবই। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হল ঐ ভোর রাতেই চট্টগ্রাম শহর আক্রমণ করা হবে। কিন্ত দুর্ভাগ্য ছিল আমাদের, ফতেহাবাদ পাহাড় থেকে আমরা সময়মতো পৌঁছাতে পারলাম না শহরে। ভোরের আলো ফোটার আগেই আমাদের আশ্রয় নিতে হল জালালাবাদ পাহাড়ে। ঠিক করা হল রাতের বেলা এখান থেকেই ব্রিটিশ সৈন্যদের অন্যান্য ঘাঁটি আক্রমণ করা হবে। এখানেও দুর্ভাগ্য আমাদের পিছু নিল। গরু-বাছুরের খোঁজে আসা কয়েকজন রাখাল মিলিটারি পোশাক পরিহিত বিপ্লবিদের দেখে পুলিশে খবর দেয়। ওই রাখালদের দেখেই মাস্টার’দা প্রমাদ গুণছিলেন। তখনই তিনি ধারণা করেছিলেন যে যুদ্ধ অনিবার্য। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে তার আশংকা বাস্তবে রূপ নিল। তিনি আসন্ন যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্ব দিলেন লোকনাথ’দাকে। লোকনাথ’দা যুদ্ধের একটা ছক তৈরি করে নিলেন। পাহাড়ের তিন দিকে কে কোথায় অবস্থান নিয়ে যুদ্ধ করবে তার জায়গা নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন। আমাদের কয়েকজনের দায়িত্ব ছিল ত্রিশূল আক্রমণের যাতে কোনোক্রমেই শত্রুরা পাহাড়ে উঠে আসতে না পারে। বেলা ৪টা নাগাদ পাহাড় থেকে দেখলাম সৈন্যবোঝাই একটি ট্রেন জালালাবাদ পাহাড়ের পূর্ব দিকে থামল। ডাবল মার্চ করে ব্রিটিশ সৈন্যরা পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। কাছে আসার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হল তুমুল যুদ্ধ। শত্রুরা কিছুতেই পাহাড়ে উঠতে পারছে না। তারা আমাদের দিকে বৃষ্টির মতো গুলি ছুঁড়ছিল, আর আমরা ছিলাম প্রায় অসহায়। কারণ আমাদের কাছে তেমন শক্তিশালি কোনো অস্ত্রশস্ত্রও ছিল না। এ এক অসম যুদ্ধ। এ যুদ্ধে প্রথম শহিদ হন হরিগোপাল বল নামের এক ১৫ বছরের কিশোর। শহিদের রক্তে রঞ্জিত হল জালালাবাদ পাহাড়। কিছুক্ষণ পরেই দেখতে পেলাম আরেক বিপ্লবি বিধু গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে যাচ্ছে। মারা যাওয়ার আগে বিধু পাশের জনকে বলল, নরেশ আমার বুকেও হাদাইছে একখান। তোরা প্রতিশোধ নিতে ভুলবি না। বিধু ছিল মেডিকেল শেষ বর্ষের ছাত্র। খুব রসিক। একে একে নরেশ রায়, ত্রিপুরা সেনও শহিদ হলেন। হঠাৎ করেই একটা গুলি এসে আমার গলার বাঁ দিকে ঢুকে ডান দিকে বেরিয়ে গেল। দু’হাতে গুলি ছুঁড়ছিলাম। একসময় অসহ্য যন্ত্রণায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। ঘণ্টাখানেক পরে চেতনা ফিরে পেয়ে দেখি শত্রুসৈন্যরা স-ব পালিয়ে গেছে। গলায় তখন অসহ্য যন্ত্রণা। ফোঁটা ফোঁটা রক্ত ঝরছে। পরনের লেঙ্গুট খুলে বিপ্লবিরা আমার গলায় ব্যান্ডেজ করে দেয়। মাস্টার’দা তখন সিদ্ধান্ত নিলেন জালালাবাদ পাহাড় ছেড়ে অন্য পাহাড়ের ঘন জঙ্গলে রাতের বেলা আশ্রয় নেয়া হবে আর এর পরবর্তী কর্মসূচি হবে গেরিলা যুদ্ধ। গলার জখম নিয়ে এরপরে আপনি বোধহয় চলে যান ছোট কুমিরায়। সেখানে আশ্রয় নেন এক খুড়তুত ভাইয়ের শ্বশুরবাড়িতে।

জেঠাশ্বশুর ছিলেন ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট, তাই না?

ঠিক তাই। আমার ধীরগতির কারণেই মাস্টার’দার কাছ থেকে একসময় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি। তখন লোকনাথ’দার সাথে আলাপ করে সিদ্ধান্ত হল শহরের আশপাশ থেকে গ্রামের ভেতরে প্রবেশ করব সবাই। প্রায় গ্রামেই দলের ছেলেরা রয়েছে। সেখানে গোপন আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হবে। লোকনাথ’দা আমাদের নির্দেশ দিলেন, অপরাহ্ন পর্যন্ত ধানক্ষেতে লুকিয়ে থাকতে। বিকাল ৪টার দিকে ধানক্ষেত থেকে বের হয়ে আবার হাঁটা শুরু করলাম। গলায় প্রচ- ব্যথা। একটু পর পর রক্তপাত হচ্ছে। একসময় লোকনাথ’দাকে বললাম, আমি অত্যন্ত দুর্বল বোধ করছি। আমাকে রেখেই আপনারা নিরাপদে চলে যান। লোকনাথ’দা বললেন, এরকম অবস্থায় তোমাকে কিভাবে ফেলে যাব। আমরা তখন যেখানে ছিলাম, তার মাইল চারেকের মধ্যেই আমার এক খুড়তুত ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ি ছিল। গ্রামের নাম ছোট কুমিরা। জেঠাশ্বশুর ছিলেন ইউনিয়ন বোর্ডের তৎকালিন প্রেসিডেন্ট। এখানে কৌশলগত কারণেই দীর্ঘদিন থাকতে হয় আমাকে। এরই মধ্যে গান্ধিজির নেতৃত্বে শুরু হয় লবণ আইন ভঙ্গ আন্দোলন। বিদ্রোহের বীজ ছড়িয়ে পড়ে ভারতের সর্বত্র। কুমিরাতেও কংগ্রেস স্বেচ্ছাসেবিদের শিবির স্থাপিত হল। আর এ আন্দোলন দমনের জন্য গ্রামে গ্রামে ক্যাম্প গঠন করে ব্রিটিশ পুলিশ বাহিনি। আশ্রয়দাতারা শংকিত হয়ে পড়ে। ঠিক করা হল, আমাকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হবে। কারণ আমি এখানে ধরা পড়লে বাড়ির সবাইকে বিপ্লবি আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে জেলে পচতে হবে। তাছাড়া ইউনিয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান বলে কথা! সমস্যা হল এ বাড়ি থেকে অন্যত্র চলে যে যাব, তা সম্ভব হবে কিভাবে? তখন আমার সেখানেই অবস্থান করছিলেন। তার সঙ্গে পরামর্শ করে ঠিক করা হল আমাকেও বউ সাজানো হবে, আর এ বউ সেজেই পালকিতে চড়ে চটজলদি সটকে পড়ব। লালপাড়ের শাড়ি, হাতে শাঁখা ও চুড়ি পরে বউ সাজলাম। বিকাল নাগাদ পৌঁছে গেলাম চাকতাই। পথে দু’বার পুলিশ বেষ্টনি পার হতে হল।

পালিয়ে বেড়িয়েছেন এখান থেকে সেখানে, এ শহর থেকে আরেক শহরে, তারপরেও জেলে যেতে হয়েছে আপনাকে। সেটা নিশ্চয়ই অনেকবার হবে। সে সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন।

আমাকে মৃত অথবা জীবিত ধরে দেওয়ার জন্য তৎকালিন সরকার ৫০০ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ি ১৯৩৩ সালের জুন মাসে। ‘ক্রিমিনাল ল অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্টে’ কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়াই বিনা বিচারে পাঁচ বছর কারারুদ্ধ করে রাখে তখন। এরপর আরো দু’বার আমাকে জেলে যেতে হয়েছে। একবার ’৪১ সালে, আরেকবার ’৬৫ সালে। ’৪১ সালে জেলে গিয়ে ছাড়া পাই ’৪৫-এর শেষের দিকে, আর ’৬৫-তে এক বছর পরেই।

’৫২-র ভাষা আন্দোলনে আপনার ভূমিকা?

আমি তখন আইনসভার সদস্য ছিলাম। থাকি ঢাকার ফরাশগঞ্জে। সেদিন ফরাশগঞ্জ থেকে বেলা ২টার দিকে আইনসভায় যোগদানের জন্য রিক্সা করে আসছিলাম। মেডিকেল কলেজের সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গে তিন-চারজন ছেলে আমাকে রিক্সা থেকে নামিয়ে বলল, আপনাকে যেতে দেব না। দেখে যান কিভাবে আমাদের লোকজনদের হত্যা করা হয়েছে। ওরা একটা ঘরে নিয়ে বরকতের লাশ দেখাল। বিকৃত হয়ে গেছে চেহারাটা। তারপর তাদের বললাম, আমরা তো তোমাদেরই লোক। দেশ চালাচ্ছে মুসলিমলিগাররা। আমাকে যদি অ্যাসেম্বলিতে যেতে না দাও তাতে তো তাদেরই লাভ। বরং সেখানে গিয়ে বললে সারাবিশ্বের মানুষ ঘটনাটা জানতে পারবে। তখন তারা বুঝল এবং আমাকে ছেড়ে দিল। সেদিন আমরা এই বর্বরতার বিরুদ্ধে অ্যাসেম্বলিতে কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেছিলাম।

’৭১ নিয়ে?

’৭১ সালে চট্টগ্রাম থেকে পালিয়ে ভারতে গিয়ে তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের রিক্রুট করে ট্রেনিংয়ে পাঠিয়েছি। এ সময় রাইফেল হাতে নিতে পারিনি বটে, তবে ক্যাম্পে ক্যাম্পে গিয়ে তরুণ যোদ্ধাদের যদ্দুর সম্ভব অনুপ্রাণিত করেছি।

আজকাল কি করে সময় কাটছে আপনার?

আমার এখন ৯৪ চলছে। জান তো?

হ্যাঁ জানি। ১৯১১ সালের ১০ জানুয়ারি আপনার জন্ম। দাদু, আপনার শরীর স্বাস্থ্য কেমন যাচ্ছে ইদানিং?

বয়স যাই হোক, বলতে পার এখনও আমি মনের দিক থেকে তরুণ। পেশা ছিল শিক্ষকতা। এখনও নিয়মিত ব্যাচে প্রাইভেট পড়াই। রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছি, তাও প্রায় ৫০ বছর হয়ে গেল। ’৫৮ সালে আইয়ুব খান যখন সামরিক আইন জারি করে সব রাজনৈতিক দলকে বেআইনি ঘোষণা করে, তখনই এ সিদ্ধান্ত নেই। তবে যখন থেকে শিক্ষকতা শুরু করি আমি, তখন থেকেই বলতে পার সক্রিয় রাজনীতি থেকে একটু একটু করে দূরে সরে যাই। প্রবর্তক বিদ্যাপীঠ, সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ, মাস্টার’দা সূর্যসেন স্মৃতি রক্ষা পরিষদ, জালালাবাদ স্মৃতি রক্ষা সমিতি সহ বেশ কিছু সংগঠনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি এখন। এখনও মাঝে মাঝে সকালবেলা হাঁটতে হাঁটতে চলে যাই চট্টগ্রাম জেএন সেন হলের সামনে। সেখানে ব্রিটিশবিরোধি বিপ্লবিদের আবক্ষ মূর্তিগুলো দেখি আর ভাবি আর স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি। মনের মধ্যে ছায়াচিত্রের মতো ভেসে আসে এক-একটা দৃশ্য, কান ভরে শুনতে পাই বিপ্লবের সুতীব্র মন্ত্র, কখন যে চোখ ঝাপসা হয়ে যায় মনের অজান্তে, বুঝতেই পারি না।

স্বীকৃতিস্বরূপ উল্লেখযোগ্য কোনো পদক বা সম্মাননা?

’৭৭ সালে চট্টগ্রাম কেন্দ্রিয় পূজা উদ্যাপন পরিষদ সমাজসেবি হিসাবে, ’৮৮ সালে বঙ্গিয় ইয়ুথ কয়ার দেশসেবক হিসাবে, ’৯৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় জাতিয় সংহতি পরিষদ কর্তৃক, ’৯৮ সালে দৈনিক ভোরের কাগজ, দৈনিক জনকণ্ঠ চট্টগ্রাম পরিষদ থেকে সেবাকর্মী হিসাবে সম্মাননা পেয়েছি। তাছাড়া ২০০১ সালে জাতিয় স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছি স্বাধীনতা পদক।

বর্ষ ৩, সংখ্যা ৬, আগস্ট ২০০৪

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার