ভূমিকা ও অনুবাদঃ জুয়েল মাজহার
সাপ্ফো
[সাপ্ফো (Sappho) গ্রিক নারী গীতিকবি। জন্ম ৬৩০ ও ৬১২ বিসিই –র মধ্যবর্তী কোনো এক সময়ে গ্রিসের লেসবস দ্বীপে এক বনেদি পরিবারে। মারা যান ৫৭০ বিসিই-র দিকে।
তবে তাঁর জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায় না । তাঁর কবিতা খণ্ডাংশমাত্র টিকে আছে; বেশিরভাগ কবিতাই হারিয়ে গেছে চিরতরে। তবে যা টিকে রয়েছে, তাতেই তিনি হয়ে আছেন অমর। তাঁর কবিতার মূল উপজীব্য প্রেম। আলেকজান্দ্রিয়ানরা ‘নব গীতিকবির তালিকা’য় (list of nine lyric poets) তাঁর নাম অন্তর্ভূক্ত করেছিল। প্লাতো (Plato) তাকে ‘দশম কাব্যলক্ষ্মী’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। তাঁকে ‘সাপ্ফিক ছন্দ’-র ( “Sapphic” meter) জননী বলে গণ্য করা হয়।
কোনো এক কারণে তাঁকে লেসবস থেকে সিসিলিতে নির্বাসিত করা হয়। এক ধনীলোকের পত্নী ছিলেন সাপ্ফো। কথিত আছে প্রেমে পড়েছিলেন ফাওন (Phaon) নামের্ এক খেয়ানৌকার মাঝির। ফাওনের অবহেলার কারণে পাহাড়ের সুউচ্চ খাঁড়ি থেকে সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন : Sappho killed herself by jumping off the Leucadian cliffs for love of Phaon, a ferryman । অবশ্য কোনো কোনো ইতিহাসবিদ মনে করেন, ৫৫০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দের দিকে পরিণত বয়সে স্বাভাবিক মৃত্যুই হয়েছিল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গীতিকবিদের একজন বলে বিবেচিত্ এই নারীর।]
‘চাঁদ গিয়েছে ডুবে’
মধ্যরাত্রি। চাঁদ গেছে ডুবে ,
সপ্তর্ষিমণ্ডল সে-ও।
একে একে প্রহর বয়ে যায় ,
শুধু আমি শুয়ে, একাকিনী।
(‘The Moon is down’ by sapho)
সন্ধ্যাতারা
সন্ধ্যাতারা, আমায় তুমি এনে দাও ফের
সকালের আলো ছড়ায় যা যা,
আনে ভেড়াদের, ছাগশিশুদের
ফেরায় ছোট্ট শিশুকে মায়ের কোলে।
(‘Hesperus, you bring back again’ by sapho)
প্রেম আমার হৃদয় কাঁপিয়ে গেছে
প্রেম আমার হৃদয় কাঁপিয়ে গেছে,
পর্বতের উপরে যেমন করে
ওক গাছেদের হাওয়া করে জ্বালাতন।
(‘Love shook my heart’ by Sappho)
আনাক্রিয়নের অনুবর্তন
প্রেম-লালসায় মত্ত হয়ে
দিলাম আবার অথৈ সাগরে ঝাঁপ।
(after Anacreon by Sappho;Eng trans. by Michael R. Burch)
খণ্ড কবিতা ২৯
তাকাও আমার মুখের পানে,
হাসো,
দেখাও তোমার সঞ্জীবনী নয়নশোভা…
(fragment 29 by Sappho, Eng trans. by Michael R. Burch)
খণ্ড কবিতা ৩১: ৭
তোমাকে দেখলে
আমার সকল কথারা হারিয়ে যায়।
( fragment 31:7 by Sappho; Eng trans. by Michael R. Burch)
খণ্ড কবিতা ৩৯
মধুঝরা স্বরের বুলবুলি, বসন্তের বার্তা বয়ে আনে।
(fragment 39 by Sappho, Eng trans.by H. T. Wharton)
খণ্ড কবিতা ৪৩
এসো, প্রিয় সখীগণ,
এইবার তবে থামাই মোদের গান:
ঊষাকাল সমাগত।
(fragment 43 by Sappho; Eng trans. by Michael R. Burch)
খণ্ড কবিতা ৫০
প্রেম, শরীরকে ধ্বংস করে,
মুহূর্মুহূ কাঁপায় আমাকে,
যেন অদম্য সর্প কোনো
পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে মারে।
(fragment 50 by Sappho; Eng trans. by Michael R. Burch )
খণ্ড কবিতা ৫৮
বেদনা
আমায়
নিংড়ে
নিচ্ছে
শেষ
রক্তবিন্দু
অবধি
(fragment 58 by Sappho, Eng trans. by Michael R. Burch)
খণ্ড কবিতা ৭৯
আমি ভালোবাসি অসংযম; আর
প্রেমের আছে যে স্বর্গীয় মহিমা,
এরই জন্য আমার তীব্র নেশা
আমায় দিয়েছে অজর অমরতা।
(Sappho, fragment 79; Eng trans.by Michael R. Burch)
খণ্ড কবিতা ৯৩
যে লাল আপেল পাকছে সবচে উঁচু ডালে, ঠিক তার মতো,
তোমার অধর সবচে মধুর; তবে যারা ফল পাড়ে
এটি তাদের নজর এড়িয়ে গেছে।
ওহো, না না আমি ভুল বলেছি; ওরা তো আসলে নাগাল পায়নি এর!
(fragment 93 by Sappho; Eng trans.by Michael R. Burch)
খণ্ড কবিতা ১১৩
আমার জন্য
গুন্গুন্ করা ভ্রমর নেই কোনো,
এমনকি নেই মধুর বাহকও কেনো!
(fragment 113 by Sappho, Eng trans. by Michael R. Burch)
খণ্ড কবিতা ১১৮
গাও, আমার কাছিম-খোলের পবিত্র বীণা;
এসো হে, আমার শব্দগুলোকে
তোমার স্বরের সঙ্গী হতে দাও।
(fragment 118 by Sappho; Eng trans. Michael R. Burch)
খণ্ড কবিতা ১৫৬
সে রাখে তার সুগন্ধীগুলো
পোশাকের বাক্সে।
আর তার ইন্দ্রিয়কে?
খুঁজে-পাওয়া-অসম্ভব এমন স্থানে।
(fragment 156 by Sappho;Eng trans.by Michael R. Burch)
খণ্ড কবিতা ১৫৯
আমি আগে আগে যাব?
আমার পেছেনে তুমি?
হে, পুরুষ তুমি মূঢ়!
তোমার শূন্যগর্ভ কান,
এতো অগভীর তোমার মন,
তুমি কখনোই পারবে না!
(fragment 159 by Sappho; Eng. trans.by Michael R. Burch)
[নোটঃ বাংলা একাডেমি ফেব্রুয়ারি বইমেলা ২০১৬-এ ‘চৈতন্য’ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিতব্য ২০০ বিশ্বকবিতার অনুবাদগ্রন্থ ‘‘দূরের হাওয়া’’ থেকে। ]
অনুবাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ
জুয়েল মাজহারের জন্ম ১৯৬২ সালে। নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার গড়াডোবা ইউনিয়নের সাখড়া গ্রামে। পিতা মুকদম আলী, মা বেগম নূরজাহান (সরু)। দুজনই প্রয়াত। জন্মের প্রকৃত তারিখ জানা নেই। শিক্ষাসনদে বর্ণিত সন-তারিখ সমাজের কালেকটিভ মিথ্যাচারের অনুকরণ। দীর্ঘদিনের বন্ধু+স্ত্রী শিরিন সুলতানা ও পুত্র অর্ক মাজহারের সঙ্গে থাকেন ঢাকায়।
আগের পেশা বদল করে বর্তমান পেশা সাংবাদিকতা। কৈশোরে বাড়ি ছেড়ে নিরুদ্দেশযাত্রা। এরপর ভবঘুরে জীবন। পেটের দায়ে নানা কাজ। এখানে-ওখানে নানাঘাটে ভিড়িয়েছেন তরী। যৌবনের একটা বড় অংশ কেটেছে বৃহত্তর সিলেটের অরণ্য-পাহাড়ে আর নানা নদীকুলে। সেভাবে আর বাড়ি ফেরা হয়নি কখনো।
লেখেন মূলত কবিতা, বিচিত্র বিষয়ে প্রচুর অনুবাদও করেন।
প্রকাশিত কবিতার বইঃ
১. দর্জিঘরে এক রাত, (আগামী প্রকাশন ২০০৩ ও শুদ্ধস্বর প্রকাশ ২০১৪) ২০১৪ বাংলা একাডেমি ফেব্রুয়ারি বইমেলা।
২. মেগাস্থিনিসের হাসি, ২০০৯ (বাঙলায়ন; এটি ২০১৫ সালে নতুন পরিমার্জিত আঙ্গিকে বের করেছে শুদ্ধস্বর)।
৩. দিওয়ানা জিকির, ২০১৩ (শুদ্ধস্বর)।
প্রকাশিত অনুবাদগ্রন্থঃ
কবিতার ট্রান্সট্রোমার । (নোবেলজয়ী সুইডিশ কবি টোমাস ট্রান্সট্রোমারের বাছাই করা ৮০টির বেশি বাছাই করা কবিতার অনুবাদ সংকলন) ২০১২ (শুদ্ধস্বর)।
মার্কসবাদী। অলৌকিকে বা পরলোকে বিশ্বাস নেই। ঘৃণা করেন পৃথিবীকে খণ্ড-ক্ষুদ্র করে দেওয়া সীমান্ত নামের ‘খাটালের বেড়া’।